দাঁড়িয়ে, বসে বা চলন্ত অবস্থায়; যে যেখানে এ লেখাটা পড়ছেন একবার ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করুন।
ধন্যবাদ দিন আর্জেন্টাইন একজন মা, সেলিয়া মারিয়া কুচিত্তিনিকে। ৩৫ বছর আগে তখনকার এ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ভদ্রমহিলা জন্ম দিয়েছিলেন ফুটফুটে এক সন্তানকে। কালক্রমে সেই সন্তান আজ দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলার লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। এমন সন্তানকে জন্ম দেওয়ার জন্য একটা ধন্যবাদ সেলিয়া মারিয়া কুচিত্তিনি পেতেই পারেন।
ধন্যবাদ দিন ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসিকে; স্টিল কারখানার কর্মী হোর্হে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গ্রান্দোলি নামে একটা পাড়ার ক্লাব দলে কোচিং করাতেন। সেখানেই প্রথম ফুটবল শুরু।
ধন্যবাদ দিন নিওয়েল ওল্ড বয়েস ক্লাবকে; তারা প্রথম পেশাদার ক্লাব, যারা মেসিকে চিনেছিল। আরেকটা ধন্যবাদ দিন কার্লেস রেক্সাসকে। রেক্সাস তখন বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক।
মেসির সামান্য কয়েক মিনিটের কারিকুরি দেখে রেক্সাস এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, উঠে গিয়ে কাগজ আনার বিলম্ব সহ্য হয়নি। পকেটে ছিল টিস্যু পেপার। তাতেই মেসিকে দিয়ে তার জীবনের প্রথম চুক্তিপত্রটা সই করিয়ে ফেললেন রেক্সাস।
ধন্যবাদ দিন বার্সেলোনার বয়সভিত্তিক দলের কোচ টিটো ভিলানোভাকে। স্বর্গ থেকে তিনি জানুন, আমরা মনে করছি তাকে মেসিকে সাইড বেঞ্চ থেকে টেনে এনে একাদশে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বুক ভরা ভালোবাসা সহ ধন্যবাদ দিন রোনালদিনহোকে। রোনি না থাকলে তার ‘ছোট ভাই’ বার্সেলোনায় এমন করে কী একটু একটু করে বড় হয়ে উঠতে পারতেন? আমরা এখনও চোখ বুঝলে দুই ভাইয়ের সেই নিষ্পাপ হাসি দেখতে পাই।
প্রিয় বন্ধু কুন আগুয়েরো কিংবা কার্লোস পুওল, পিকে, ডন ইনিয়েস্তা, জাভি থেকে শুরু করে সবাইকে ধন্যবাদ দিন এই অসামান্য এই সৌন্দর্যকে পৃথিবীর সামনে বারবার তুলে ধরায় সহায়তা করার জন্য। ধন্যবাদ দিন পেপ গার্দিওলাকে; যিনি মেসির জন্য বার্সা বানিয়েছিলেন!
সব ধন্যবাদ শেষ করে ফেলেছেন?
এই ভুল করবেন না। সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা জমিয়ে রাখুন। এবার শক্ত হয়ে বসুন। ওপরে হাত তুলুন। আন্তরিকভাবে মেসির এই সেরা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড়, হ্যাঁ, সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ দিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস আভেইরোকে। হ্যাঁ, সিআর সেভেন।
রোনালদো না থাকলে এই মেসি ‘মেসি’ হয়ে উঠতেন বলেই বিশ্বাস হয় না। হয়তো মেসি গ্রেট হতেন, দু চার মৌসুমের সেরা হতেন। কিন্তু রোনালদো বলে এক প্রতিপক্ষ না থাকলে দশ-পনেরো বছর ধরে এই দুর্নিবার ক্ষুধা নিয়ে ছুটতে থাকা মেসিকে আমরা পেতাম না; এই ক্ষুধার্ত মেসির পেছনে আছে রোনালদোর অবদান।
রোনালদো ইচ্ছে করে মেসিকে এমন তৈরি করেন নি। কিন্তু রোনালদো ছিলেন বলেই মেসি আরও ক্ষুধার্ত হয়েছেন। মেসি ছিলেন বলেই রোনালদো আরও তীক্ষ্ণ হয়েছেন। আমরা এই পৃথিবীবাসী অসীম ভাগ্য নিয়ে ঠিক এই সময়ে জন্মেছি বলে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই দুই প্রতিভাকে পাশাপাশি লড়তে দেখলাম।
এমন ক্ষুধা, এমন তাড়না শুধুমাত্র আরেকজন মহানায়কই তৈরী করে দিতে পারে একজন মহানায়কের মধ্যে। আজ তাই সব মেসি ভক্তরা মেসির অন্যতম সেরা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা দিন রোনালদোকে।
রোনালদো হয়তো শেষ বারের মত আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়ে ফেললেন। ফলাফল যাই হোক, মেসিও এই মাসেই বিদায় নেবেন। বিদায় নেওয়ার আগে আগুনের মত জ্বলছেন মেসি। আর বড় ম্লান ছিল রোনালদোর পর্ব। তাতে উল্লাস না করে, মেসিভক্তরা রোনালদোকে ধন্যবাদ দিন এমন একটা অবিষ্মরনীয় দ্বৈরথ আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ, সিআর সেভেন।