ফুটবল ময়দানের ‘বুড়ো’রা

কথায় আছে ফুটবল নাকি বুড়োদের জন্য নয়। ‘চল্লিশেই চালসে’ কথাটা নাকি ফুটবলারদের জন্যই তৈরি হয়েছে। এখন তো চল্লিশ পেড়োনোর আগেই ফুটবল কোচ হিসেবে ডাগ-আউটে দেখা যায় অনেককে। নাগেলসম্যান, পিরলো তার বড় উদাহরণ। কিন্তু তাই বলে ভেবে বসবেন না সবাই চল্লিশে চালসে হয়ে যায়।

কথায় আছে ফুটবল নাকি বুড়োদের জন্য নয়। ‘চল্লিশেই চালসে’ কথাটা নাকি ফুটবলারদের জন্যই তৈরি হয়েছে। এখন তো চল্লিশ পেড়োনোর আগেই ফুটবল কোচ হিসেবে ডাগ-আউটে দেখা যায় অনেককে। নাগেলসম্যান, পিরলো তার বড় উদাহরণ। কিন্তু তাই বলে ভেবে বসবেন না সবাই চল্লিশে চালসে হয়ে যায়।

আন্দ্রে পিরলোর সতীর্থ জিয়ানলুইজি বুফনকেই দেখুন না, এখনও গোলবারের নিচে কী স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর। বুফনের মতন কেউ কেউ আছেন, যারা চল্লিশ পেড়িয়েও খেলছেন নিজের সেরাটা দিয়ে। আজকে সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বল পায়ে রাখা তারকাদের নিয়ে হচ্ছে কথা।

  • আন্দ্রেয়া পিয়েরোবোন: (৪৬ বছর)

তাকে তার সতীর্থরা ডাকতো ‘নানা’ বলে। কেন-ই বা বলবে না, যে লোকটার বয়স ৪৬ বছর, সেও যখন পাল্লা দিয়ে ২০-২৫ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের সাথে খেলে, তখন আর কী-ই বা বলা যায়? ২৮ বছরের ক্যারিয়ার শেষ করে যখন অবসর নিলেন তখন তার নামের পাশে সবচেয়ে বেশি বছর পর্যন্ত খেলা ইতালিয়ানের রেকর্ড।

ক্যারিয়ারে খুব বড় দলের হয়ে খেলা হয়নি। সবচেয়ে বড় দল বলতে ভেনেৎজিয়া, যাদের সাথে গাটছড়া বেধেছিলেন মাত্র ১ মৌসুমের জন্য। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কেটেছে শৈশবের সিটিদেল্লা ক্লাবেই। এই ক্লাবের হয়েই শুরু, আর এই ক্লাবে এসেই সমাপ্তি টেনেছেন তিনি।

  • জন ব্যারিজ: (৪৬ বছর)

নামটা শুনে পরিচিত পরিচত ঠেকছে? হ্যা, এই সেই জন ব্যারিজ। যার নামের পাশে সবচেয়ে বেশি ক্লাবের হয়ে খেলার রেকর্ড বিদ্যমান। সবচেয়ে বেশি ক্লাবের রেকর্ড ছুঁতে পারলেও সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি ব্যারিজ। তাকে থামতে হয়েছে ৪৬-এ।

২৯ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি নাম লিখিয়েছিলেন ২৯ ক্লাবের হয়ে। খেলেছেন ইংল্যান্ডের বড় বড় দলগুলোতেও। ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে যখনই কোনো দলের ইমার্জেন্সি ব্যাক-আপ কিপারের প্রয়োজন পরতো, ভরসার জায়গা ছিলেন ব্যারিজ। ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে ৪৩ বছর বয়সে পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন ব্যারিজ। যাতে করে সবচেয়ে বেশি বছর বয়সে প্রিমিয়ার লিগে কিপিং করার রেকর্ড এখন ব্যারিজের দখলে। ১৯৯৭ সালে এসে ইতি টানেন খেলোয়াড়ি জীবনে। ততদিনে তার বয়স পার হয়েছিল ৪৬।

সবচেয়ে বেশি বছর খেলার রেকর্ড হয়তো হয়নি, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্লাবের হয়ে খেলার রেকর্ডে সবার উপরে এখনও অবস্থান ব্যারিজের।

  • ইশাম-আল-হাদ্দারি: (৪৭ বছর)

আমাদের এই তালিকার সবচেয়ে রিসেন্ট তারকা হলেন ইশাম-আল-হাদ্দারি। ২০১৮ বিশ্বকাপ ভালোমতো ফলো করলে মনে থাকার কথা তাকে। মিশরে মোহাম্মদ সালাহর সতীর্থ ছিলেন ইশাম। তখনই তার বয়স ছিল ৪৫ বছর। যদিও বিশ্বকাপের পরেই বিদায় জানিয়েছেন মিশর দলকে, তবে তার আগেই রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়েছেন। বিশ্বকাপ খেলা সবচেয়ে বেশি বয়সী তারকা এখন তিনিই।

১৯৯৩ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা ইশামের মিশরের হয়ে অভিষেক হয় ১৯৯৬ সালে। এরপর থেকে মিশরের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গোল্বারের নিচে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরীর মতন। তিনবার আফ্রিকান ন্যাশনস কাপের সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের নভেম্বরে এসে নিজের অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ইশাম।

  • স্ট্যানলি ম্যাথিউ: (৫০ বছর)

স্ট্যানলি ম্যাথিউকে ধরা হয় ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা গোলস্কোরার হিসেবে। আমাদের সর্বশেষ নমিনি আসার আগ পর্যন্ত এই রেকর্ডের অংশীদার ছিলেন স্ট্যানলি। ১৯৩২ থেকে ১৯৬৫; মোট ৩৩ বছরের ক্যারিয়ার ছিল তার। এমনকি ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও গোল করার রেকর্ড রয়েছে তার। ক্যারিয়ারের শুরু আর সমাপ্তিতে তার গায়ে ছিল স্টোক সিটির জার্সি। আর ক্যারিয়ার গড়েছেন ব্ল্যাকপুলের হয়ে। ৭১৭ ম্যাচে ১৭ গোল করা স্ট্যানলি ছিলেন মূলত রাইট উইঙ্গার।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়েও পেয়েছেন ১১ গোল। ক্যারিয়ারের শেষ মৌসুমে এসে পেয়েছিলেন ‘নাইট হুড’ সম্মান। আর সেই সম্মান নিয়েই বিদায় নেন ফুটবল মাঠে থেকে। ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন স্ট্যানলি।

  • কাজুয়োশি মিউরা: (৫৩ বছর)

বক্তৃতার একদম শেষে আসে প্রধান বক্তা। তেমনই এই তালিকায় সবচেয়ে শেষের নাম জাপানি এই ভদ্রলোকের। এই বয়সে এসে সব ছেড়ে বিশ্রাম করে যায় যখন লোকেরা, তখনও একেবারে আগের মতৈ পুরোদমে খেলে যাচ্ছেন এই খেলোয়াড়। সাধে কী আর বলে জাপানিজ লোকেদের ক্লান্তি নেই?

মিউরার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ব্রাজিলের ছোট্ট দল জুভেন্টাসের হয়ে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে। তখন তার বয়স ছিল ১৮। ব্রাজিলেই ৫ মৌসুম কাটিয়ে তিনি ফিরেন নিজ দেশ জাপানে। সেখান থেকে একে একে ৩৪ মৌসুম খেলে ফেলেছেন তিনি। শুধু জাপানেই নাম ছড়িয়েছেন বললে ভুল হবে, জাপান বাদেও ইউরোপ মাতিছেন ৯০-এর দশকে। ৯৪-৯৫ মৌসুমে এক মৌসুমের জন্য ইতালিয়ান দল জেনোয়া ও ১৯৯৯ সালে ডায়নামো জাগরেবের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু বাদবাকি পুরো সময়টা জাপাম্নেই কাটিয়েছেন তিনি। এখন খেলছেন ইয়োকোহামা এফসির জার্সিতে।

জাপানের প্রথম সুপারস্টার ছিলেন মিউরা। প্রথম জাপানিজ হিসেবে এশিয়ান প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে। ২০১৭ সালে এসে স্ট্যানলি ম্যাথিউসকে ছাড়িয়ে রেকর্ড নিজের নামে করে নেন মিউরা। তার ওয়েবসাইটের হিসেবে এখন পর্যন্ত ৩৭৫৫২ মিনিট খেলেছেন মাঠে, গোল করেছেন ১৬৩ টি আর অ্যাসিস্ট ৫৩ (২০২১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত তার ওয়েবসাইট অনুযায়ী)।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...