নাটকীয় ধসে অকল্পনীয় জয়

১৯৪৬ সালে বেসিন রিজার্ভসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড! ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ রানে অলআউটের ইনিংসেও মাত্র ১৭ রানে ৮ উইকেট হারায় ব্ল্যাকক্যাপসরা।

১২ মার্চ, ২০০১। অকল্যান্ডে প্রথম টেস্টে পঞ্চম দিনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে তখন নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের দেওয়া ৪৩১ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে পঞ্চম দিন শুরু করে ব্ল্যাকক্যাপসরা।

শেষদিনে ওই টেস্টে ফলাফলের আশা করেছিলেন হয়তো জনাকয়েক! কারণ শেষ দিনেও অকল্যান্ডের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভাল ছিল। সেই সাথে পাকিস্তান দলে শোয়েব আক্তার, ওয়াসিম আকরামদের মত তারকা বোলারও ওই ম্যাচে ছিলেন না।

ওয়াকার ইউনিসের সাথে বোলিং বিভাগের দায়িত্বে তখন ওই ম্যাচেই অভিষিক্ত তরুন মোহাম্মদ সামি। সেই সাথে স্পিন বিভাগে সাকলাইন মুশতাক ও মুশতাক আহমেদ। সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম উল হকরা না থাকায় ওই ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে ফয়সাল ইকবাল, ইমরান ফরহাত ও মিসবাহ উল হক সহ মোট ৪ পাকিস্তানির অভিষেক হয়!

এক রকম আনকোরা দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের কথা কল্পনা করাও যেন বিশাল ব্যাপার। কিন্তু, সেদিন অকল্যান্ডের মাটিতে লিখা ছিল ভিন্ন এক গল্প। সবার কল্পনার বাইরে গিয়ে অভিষিক্ত মোহাম্মদ সামি ও অভিজ্ঞ সাকলাইন মুশতাকদের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ।

ড্রয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং শিবির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় চোখের পলকে! মূহুর্তেই যেন বদলে যায় অকল্যান্ডের চিত্র। ভক্ত-সমর্থকরাও যেন কল্পনা করতে পারেননি এমন কিছু!

দিনের শুরুতেই মুশতাকের প্রথম ওভারেই আউট মার্ক রিচার্ডসন। এরপর তৃতীয় উইকেটে ১৬ রান যোগ করতে ১২১ রানে তখন নিউজিল্যান্ডের ২ উইকেট। কিন্তু এরপরই এক ভয়ংকর স্বপ্ন! ১২১ রানে ২ উইকেট থেকে মাত্র ১০ রান যোগ করতে ১৩১ রানে শেষ ব্ল্যাকক্যাপরা!

তরুন মোহাম্মদ সামির গতি আর স্যুইংয়ের পাশাপাশি সাকলাইন মুশতাকের স্পিন ভেলকিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং শিবির। ম্যাথু সিনক্লেয়ার, নাথান অ্যাস্টল, স্টিফেন ফ্লেমিং, ক্রেইগ ম্যাকমিলানরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে! ১৩০ রানে ৫ উইকেট থেকে ১৩০ রানেই নিউজিল্যান্ডের ৯ উইকেট নেই!

মোহাম্মদ সামির মাত্র ৭ রানে ৫ উইকেট ও সাকলাইন মুশতাকের স্পিন ম্যাজিকে ১৩১ রানেই গুড়িয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই নাটকীয় এক জয়ের দেখা পায় পাকিস্তান। সামি, মুশতাকের বোলিং দাপটে ২৯৯ রানের বড় জয় পায় সফরকারীরা।

এর আগে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ইউনিস খানের ৯১ ও মোহাম্মদ ইউসুফের ৫১ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৪৬ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ৮৬ ও ক্রেইগ ম্যাকমিলানের ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন।

তারপরও মোহাম্মদ সামি, সাকলাইন মুশতাকদের বোলিং দাপটে মাত্র ২৫২ শেষ নিউজিল্যান্ড! ৯৪ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইউনিস খানের ১৯১ ও ইমরান ফরহাত-ফয়সাল ইকবালের ফিফটিতে ৫ উইকেটে ৩৩৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান।

৪৩১ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে সামি-মুশতাকের ম্যাজিকেল স্পেলে মুখ থুবড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং শিবির! ড্র’য়ের স্বপ্ন দেখা নিউজিল্যান্ডকে গুড়িয়ে দেয় মাত্র ১৩১ রানে! অভিষেকেই ৮ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন মোহাম্মদ সামি।

তরুনদের হাত ধরে ইডেন পার্কে সেদিন এক ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। পঞ্চম দিনে মাত্র ৬২ মিনিটের খেলাতেই শেষ নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এটি ছিল দ্বিতীয় সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাটিং ধস।

এর আগে ১৯৪৬ সালে বেসিন রিজার্ভে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড! ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ রানে অল আউটের ইনিংসেও মাত্র ১৭ রানে ৮ উইকেট হারায় ব্ল্যাকক্যাপসরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...