জেমি সিডন্সের চোখে বাংলাদেশ দলের সমস্যা

নিজেদের সামর্থ্য ভুলে গিয়ে প্রতিপক্ষকে অনুসরণ করতে গিয়ে ঘটে অঘটন। এমন অভিমত বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জাজনক হার অন্তত সেই অভিমতের শক্ত ভীত। 

বিপর্যয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিত্যদিনের সাথী। একটানা দুর্দান্ত পারফরম করে যাওয়াটা বড্ড বেশি দুষ্কর বাংলাদেশের জন্যে। অধিকাংশ সময়ই সেই বিপর্যয়ের কারণ বনে যান টাইগার ব্যাটাররা। নিজেদের সামর্থ্য ভুলে গিয়ে প্রতিপক্ষকে অনুসরণ করতে গিয়ে ঘটে অঘটন। এমন অভিমত বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জাজনক হার অন্তত সেই অভিমতের শক্ত ভীত।

অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ের বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপের তালিকা হলে সেখানে প্রোটিয়াদের অবস্থানটা শুরুর দিকেই থাকার কথা। প্রমাণটা আরো একবার নিজেদের চোখে দেখে নিল সাকিব আল হাসানের দল। এক রাইলি রুশোর কাছে যেন পাত্তাই পেল না গোটা বাংলাদেশ। সেই সাথে কুইন্টন ডি ককও বেশ ভুগিয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের।

এই দুই ব্যাটার মিলে নিজেদের মধ্যে ১১ খানা ছয় ভাগ করে নিয়েছেন। ঠিক এই জায়গাতেই বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেদের সামর্থ্য ভুলে যায়। যদিও টাইগার ব্যাটারদেরও বড় ছয় মারবার সামর্থ্য রয়েছে তার একটা ঝলক দেখিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কাগিসো রাবাদার বিপক্ষে অসাধারণ টাইমিংয়ে, দুর্দান্ত ফ্লিকে দুই ছক্কা আদায় করে নেন সৌম্য। এতটাই সাবলীল ছক্কা টাইগারদের বাকি ব্যাটারদের মনেই খানিক প্রলোভন জাগিয়ে তোলে বড় শট খেলবার। তবে সৌম্য আউট হয়ে যাবার পর ‘তাসের ঘর’ বনে যেতে সময় লাগেনি।

তাইতো ব্যাটিং গুরুর পরামর্শ আরও ‘স্মার্ট’ হতে হবে। ম্যাচ পরবর্তী সময়ে সিডন্স বলেন, ‘আমরা বড় ছক্কা হাকানো খেলোয়াড় নই, আমাদের আরও বেশি স্মার্ট হতে হবে। আমরা অনেক বেশি হাওয়ায় বল খেলি। ব্যাটারদেরকে বার্তা দেওয়া ছিল যে যাও খেলো, দেখি আমরা কতদূর যেতে পারি। আমাদের একটা ভাল শুরুও হয়েছিল। কিন্তু এরপরই সবাই হাওয়া বল মারতে চাইলো। আর সেটাই আমাদের চাপের মধ্যে ফেলে দেয়।’

বাংলাদেশ দুরন্ত এক সূচনাই পেয়েছিল সৌম্য সরকারের বদৌলতে। কাগিসো রাবাদার প্রথম ওভারে ১৭ রান সংগ্রহ করে টাইগার দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। এরপরই যেন নিজেদের সব পরিকল্পনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে স্লগ করবার মানসিকতা নিয়ে খেলতে শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ফলশ্রুতিতে পাওয়ার প্লে শেষ হবার আগেই প্যাভিলনে অর্ধেক দল। সেখান থেকে আর ম্যাচে ফেরা রীতিমত অসম্ভব। কেননা লক্ষ্য তো পাহাড়সম।

বাংলাদেশ যে গতির কাছে পরাস্ত হয়েছে বিষয়টি তেমনও নয়। স্পিনারদেরকেও উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সে বিষয়ে সিডন্স বলেন, ‘আমরা স্পিনের বিপক্ষেও আউট হয়েছে। সেখানে পেসের তেমন কোন বিষয়ই ছিল না। একজন মাত্র বেশ গতিতে বল করছিল। বাকিদের আমরা বেশ ভালই সামলাচ্ছিলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যথাযথ শট খেলছিলাম। এরপরই হুট করে আমরা স্লগ করা শুরু করলাম। সেটা আমাদের খেলা নয়। আমরা তেমনটা খেলে পারব না।’

রাইলি রুশো কিংবা কুইন্টন ডি ককরা যা পারেন তা বাংলাদেশের ব্যাটাররা চাইলেই করতে পারবেন না বাইশ গজে। তাদের ব্যাটিং পরিকল্পনা আর বাংলাদেশের ব্যাটিং পরিকল্পনায় আকাশ-পাতাল তফাৎ রয়েছে। তেমনটাই মনে করেন সিডন্স, তিনি বলেন, ‘আমাদের কৌশল রুশো, ডি ককদের থেকে ভিন্ন হতে হবে। আমরা খুব বেশি ম্যাচ জিততে পারব না ছয়ের বন্যা বসিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামলে। রুশো অবলীলায় বল সীমানা ছাড়া করে, আমরা সেটা চাইলেই করতে পারব না।’

বাংলাদেশের ব্যাটারদের হার্ডহিট করবার সামর্থ্যের অভাব রয়েছে এটা খোদ ব্যাটিং কোচও স্বীকার করেন। তবুও বাংলাদেশের ব্যাটারদের ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে আসা। প্রতিটা মুহূর্তে বড় শট খেলার প্রবণতা দৃষ্টিকটুর দৃশ্যের মঞ্চায়ন করে বারবার। এটা অন্তত বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বোঝা উচিৎ। তেমন ইঙ্গিতই দেওয়ার প্রচেষ্টা করলেন টাইগারদের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স।

এছাড়া সিডন্সের মতে বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে ভাল ব্যাটিং করা শুরু করেছে। এখন মূল মনোযোগটা দিতে হবে ইনিংসের মধ্যভাগে। এই সময়টাতে বাংলাদেশ এখনও ধুকছে। ধাপে ধাপেই দলে পরিবর্তন আসবে বা আনতে চলেছে ম্যানেজমেন্ট তেমনই আভাস সিডন্সের সুরে। তবে এই দুর্গতির শেষটা কবে হবে, সেটা যেন জানা নেই কারোই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...