Social Media

Light
Dark

শততম টেস্টে শতরান

ক্রিকেটে সবচেয়ে পুরাতন সংস্করণ হলো টেস্ট। প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে টেস্ট খেলার। কিন্তু, কত জন ক্রিকেটার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে? সবাই পারে না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে কিংবা ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্ট খেলতে। আবার যারা অভিজাত সংস্করণে খেলতে পারে তারা সবাই পারে না দলের হয়ে ১০০ তম টেস্ট খেলতে। ১০০ তম টেস্ট খেলার জন্য দরকার নিজের সামর্থ্য আর সাথে খেলার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০ জন ক্রিকেটার পেরেছেন নিজেদের শততম টেস্ট খেলতে। তাদের মধ্যে সবাই নিজের শততম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে মাত্র ৯ জন ক্রিকেটার নিজেদের ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুট। সে শুধু শতকই করেননি করেছেন দ্বিশতক। যা কিনা অন্য কোনো ব্যাটসম্যান নিজের শত্তম টেস্টে করতে পারেনি।

  • জো রুট (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট নিজের ক্যারিয়ারের  শততম টেস্টে শতক হাঁকিয়েছেন। সে শুধু শতক নয়, হাঁকিয়েছেন দ্বিশতক। যা কিনা অন্য কোনো ব্যাটসম্যান তাদের ক্যারিয়ারের শততম টেস্টে করতে পারেননি। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে শততম টেস্ট খেলার নজির গড়েন জো রুট। এই টেস্টে শুধু শতক নয়, দ্বি শতক হাঁকিয়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি।

৩০ বছর বয়সে রুট ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রোলিফিক রান সংগ্রাহক। এমনকি এখন তিনি যে গতিতে খেলছেন সেই গতিতে খেললে হয়তো সে হবেন টেস্টে ইংলিশদের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

  • স্যার কলিন কাউড্রে (ইংল্যান্ড)

স্যার কলিন কাউড্রে ছিলেন ডান হাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নামেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০০ তম টেস্টে ২৪৭ বলে ১০৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন কোলিন কোড্রে।

কোলিন কোড্রে তাঁর ক্যারিয়ারে ১১৪ টেস্ট খেলেছেন । ১১৪ টেস্টে ৪৪.০৬ গড়ে করেছেন ৭৬২৪ রান। টেস্ট ক্রিকেটে করেছেন ২২ সেঞ্চুরি এবং ৩২ হাফ সেঞ্চুরি।

কোলিন কোড্রে ১৯৭৫ সালে দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন। ২০০০ সালে ওপারে পাড়ি জমান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

  • জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)

পাকিস্থানী ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১২৪ টেস্ট। ক্যারিয়ার শততম টেস্ট ছিলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। শততম টেস্টে ২৮৯ বল খেলে করেছেন ১৪৫ রান।তার সেঞ্চুরিতে ভর করে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬৯৯ রান। এই রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে করে ৫০৯ রান।

অনেক রানের এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। জাভেদ মিয়াঁদাদের পাশাপাশি এই ম্যাচে আরো চার ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে দূর্দান্ত পারফর্ম করেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

টেস্ট ক্রিকেটে ৫২.৫৭ গড়ে করেছেন ৮৮৩২ রান। টেস্টে করেছেন ২৩ টি সেঞ্চুরি, ৬ দ্বি শতক এবং ৪৩ অর্ধ শতক।

  • স্যার গর্ডন গ্রিনিজ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

যারা ৭০-৮০ দশকের ক্রিকেটকে অনুসরণ করেছেন তারা এক নামেই চিনবেন গর্ডন গ্রিনিজকে। নুজের ব্যাটিং দিয়ে বিপক্ষ দলের বোলিংকে বেশ ভুগিয়েছেন তিনি। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ১০৮ টেস্ট। ১০৮ টেস্টে ৪৪.৭২ গড়ে করেছেন ৭৫৫৮ রান। এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারে করেছেন ১৯ সেঞ্চুরি এবং ৩৪ হাফ সেঞ্চুরি।

এখন পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ৫ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। গ্রিনিজ তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ২০৭ বলে করেছিলেন ১৪৯ রান। তাঁর ব্যাটে ভর করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস এবং ৩২ রানে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ১৭ বছর। তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্ট ছিলো ১৯৯১ সালে।

  • অ্যালেক স্টুয়ার্ট (ইংল্যান্ড)

অ্যালেক স্টুয়ার্ট ছিলেন ইংল্যান্ডের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলেছেন ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারে ১৩৩ টেস্ট খেলে করেছেন ৮৪৬৩ রান।

এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ১৫৭ রানে অল আউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিপরীতে প্রথম ইনিংসে অ্যালেক স্টুয়ার্টের ১০৫ বলে ১৫৩ রানের একটি ইনিংসে ভালো সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রায়ান লারার ১১২ রানের ইনিংসের কারণে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯৩ রান। কিন্তু ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র হয়।

  • ইনজামাম উল হক (পাকিস্তান)

ইনজামাম উল হক পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক। ইনজামাম তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলছিলেন ২০০৫ সালে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে শততম টেস্টে হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি।

তাঁর সেঞ্চুরিতে ভারতের বিপক্ষে ১৬৮ রানে জয় পায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের হয়ে ১১৯ টেস্ট খেলে করেছেন  ৮৮২৯ রান। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইনজামাম।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ১৬৩ টেস্ট। ১৬৩ টেস্টে ৫১.৮৫ গড়ে ১৩,৩৮৭ রান। রিকি পন্টিং তাঁর ১০০ তম টেস্টের দুই ইনিংসে শতক করেছেন। এই অজি ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনিতে নিজের শততম টেস্ট খেলেন।

  • গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে কনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন ১১৭ টেস্ট। ১১৭ টেস্টে করেছেন ৯৯৬৫ রান। ব্যাটিং গড় ৪৮.২৬।

গ্রায়েম স্মিথ লন্ডনে তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলেন। সেই টেস্টে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন স্মিথ। তাঁর শততম ম্যাচে সম্পূর্ণ আলো কেড়ে নেন হাশিম আমলা। ক্যারিয়ার সেরা ৩১১ রানের ইনিংস খেলেন হাশিম আমলা।

  • হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

হাশিম আমলা তাঁর ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলেন ২০১৭ সালে জোহানেসবার্গে শ্রীলংকার বিপক্ষে। এই ম্যাচে ২৬৫ বলে ১৩৪ রান করেন।

এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পায় ইনিংস এবং ১১৮ রানে। হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি কিনা টেস্টে ত্রি শতক করেছেন। এই ত্রি শতক তিনি করেছেন তারই সতীর্থ গ্রায়েম স্মিথের শততম টেস্টে।

হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন ১২৪ টেস্ট। রান করেছেন ৯২৬২ রান। গড় ৪৬.৬৪। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে করেছেন ২৮ সেঞ্চুরি এবং ৪১ হাফ সেঞ্চুরি।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link