সিভিসি: মেসি-কাণ্ডের নেপথ্য প্রতিষ্ঠান!

এই সিভিসি কোম্পানির সাথেই চুক্তির কথা বাতলে দিয়েছিলেন লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস। সে চুক্তিতে রাজি হলেই বার্সেলোনা ধরে রাখতে পারতো নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে। কিন্তু তাও বার্সা প্রেসিডেন্ট মুখের উপর না করে দিয়েছেন লা লিগা সভাপতিকে।  কী এই সিভিসি ইনভেস্টমেন্ট, কেনই বা তা না করে দিলেন লাপোর্তা?

লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে দিয়েছেন, এটা পুরাতন খবর।

নতুন খবরের সন্ধান এখনও মানুষ করে উঠতে পারেনি কেউ। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লিওনেল মেসি ভিড়ছেন নেইমারের সাথে পিএসজিতেই। লিওনেল মেসিকে সাক্ষর করাতে না পারার সাথে বারবার একটা কোম্পানির নাম বারবার সামনে চলে আসছে। কোম্পানির নাম সিভিসি।

এই সিভিসি কোম্পানির সাথেই চুক্তির কথা বাতলে দিয়েছিলেন লা লিগা প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের তেবাস। সে চুক্তিতে রাজি হলেই বার্সেলোনা ধরে রাখতে পারতো নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে। কিন্তু তাও বার্সা প্রেসিডেন্ট মুখের উপর না করে দিয়েছেন লা লিগা সভাপতিকে।  কী এই সিভিসি ইনভেস্টমেন্ট, কেনই বা তা না করে দিলেন লাপোর্তা?

সিভিসি ক্যাপিটাল পার্টনার হলো একটি প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট এডভাইসরী ফার্ম। যাদের শাখা-প্রশাখা ছড়ড়িয়ে আছে পুরো বিশ্বেই। শুরুটা লন্ডন থেকে হলেও আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবীতে নিজেদের নাম কামিয়েছে তারা। তাদের সাথ্যেই কিছুদিন আগে মৌখিক চুক্তি সাক্ষর হয়েছে লা লিগার। চুক্তি অনুযায়ী লা লিগার ১০% সত্ত্ব মোট ২.৭ বিলিয়ন ইউরোর বদলে কিনে নিবে তারা। কাগজে কলমে কিনে নেওয়া না, ৫০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া।

এই চুক্তি অনুযায়ী ২.৭ বিলিয়নের ৯০% ক্লাবগুলোর মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। লিগে অবস্থান, টিভি-রাইটস অনুযায়ী প্রতিটি দল টাকা পাবে। আর ১০০ মিলিয়ন ইনভেস্ট করা হবে নারী ফুটবল ও নন-প্রফেশনাল গেমগুলোতে। লা লিগার কথা অনুযায়ী এই অর্থ দিয়ে নিজেদের মান বৃদ্ধিতে কাজ করবে তারা। এমনকি এই অর্থ লা লিগার ফিনান্সিয়াল রেগুলেশন কিংবা উয়েফার ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে রুলেও কোন প্রভাব ফেলবে না।

এই করোনা মহামারিটে বিধ্বস্ত অবস্থা প্রতিটি ক্লাবের। কেউই নিজেদের মতন করে উঠে দাড়াতে পারছে না। হাতে গোনা দুই একটা ক্লাব বাদে সকল ক্লাবই দেনার মুখোমুখি। তাদের সাহায্য করতেই মূলত এগিয়ে এসেছিল সিভিসি। তারা চেয়েছিল সরাসরি লা লিগায় টাকা ঢালতে, যদি তা সম্ভব হতো তবে তা হতো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন প্রাইভেট কোম্পানীর ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে ফুটবল লিগের সূচনা।

এরকম আগে কোথায় শুনেছেন বলতে পারেন? জ্বি, ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। জেপি মরগানের ইনভেস্টমেন্টে একইরকমভাবে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ (ইএসএল) শুরু করতে চেয়েছিলো ১২ দল মিলে। পার্থক্য একটাই, তাঁরা পুরো অর্থ ঢালতো লিগের পেছনে, অন্যদিকে লা লিগা মাত্র ১০% অর্থ ঢালবে।

খালি চোখে মনে হতে পারে এটা তো ভালোই, দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে। লিগও বেঁচে যাচ্ছে, ক্লাবও বেঁচে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যার শুরু তাদের অন্য শর্ত থেকে।

এই লা লিগা-সিভিসি ডিলের অধীনে স্পোর্টিং ও ব্রডকাস্ট সংক্রান্ত সব কন্ট্রোল থাকবে লা লিগার কাছে; কিন্তু অর্থনৈতিক সকল দায়িত্ব হাতে তুলে নিবে সিভিসি। এমনকি এরপর থেকে টানা ৫০ বছর প্রতিটি ক্লাবকে নিজেদের লাভ্যাংশের ১০% দিতে হবে সিভিসির হাতে। অনেকটা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষে করা নিয়মের মতন। টাকা-পয়সা আমরা দেখছি, বাকিটা তোমরা সামলে নাও।

এটাই সিভিসির স্পোর্টস সেক্টরে প্রবেশ এটাই প্রথমবারের মতন না। এর আগেও ফরমুলা ওয়ান, মোটো জিপি, ভলিবল, টেনিসে ইনভেস্ট করেছে তারা। এমনকি এই বছরের মার্চেও ইউরোপের একটা বার্ষিক রাগবি টুর্নামেন্টের ১৪.৩% সত্ত্ব ৩৬৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনে নিয়েছে তাঁরা। তাদের কাজই হচ্ছে বড় বড় স্পোর্টস ইভেন্টে টাকা ঢালা এবং সেখান থেকে লাভবান হওয়া।

এটা কিন্তু তাদের প্রথম ফুটবলে ইনভেস্ট নয়। এর আগেও তারা সিরি-আর বাজে সময়ে এরকমই একটা চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইতালিয়ান তিন জায়ান্ট ক্লাব এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাসের হস্তক্ষেপে এই চুক্টিটি আর হয়নি। ঐ ক্লাবগুলোরও মতামত ছিলো অনেকটা বার্সা ও রিয়ালের মতোই; সাময়িক অর্থের জন্য বিশাল সময়ের জন্য দেনাদার হওয়ার কোনো অর্থই নেই।

এই চুক্তিতে রাজি হলে বার্সার সকল সমস্যার সমাধান হতো বটে, কিন্তু আগামী ৫০ বছরের জন্য নিজেদের লাভের একটা অংশ তুলে রাখতে হতো তাদের জন্য। যেটা বার্সা-রিয়ালের মতন ক্লাব কখনোই করবে না। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ উভয়ই আর্থিকভাবে বাজে অবস্থায় থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে এই সিভিসি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দুইটা ক্লাবের জন্যই লং রানে ক্ষতিকত। যেটা দুজনই বুঝতে পেরেছে।

যদিও এখনও মোট ৪২ দলেরই ভোট লাগবে। দুই তৃতীয়াংশ ভোট পাওয়া গেলে তাতে রাজিও হয়ে যেতে পারে স্প্যানিশ লিগ। কিন্তু বার্সা-রিয়ালের সহযোগীতা ছাড়া সিভিসি এই চুক্তিতে থাকবে কীনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। সিরি-আতেও বড় ক্লাবগুলো রাজি না হওয়াতে পিছু হটেছিল তারা। এখানেও সেটাই হওয়ার আশংকা করছে তারা।

সিভিসি ও লা লিগার মধ্যকার এই চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হবে নাকি তা এখনো বলা যাচ্ছে না, তবে এটা নিশ্চিত বার্সা-রিয়াল কেউই এই চুক্তিতে সাক্ষর করছে না এবং দিনশেষে এই চুক্তি থেকে লাভ শুধু সিভিসিরই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...