ফাফের পাপ!

ধারাবাহিক পারফরমের পর হয়তো আশায় বুক বেঁধেছিলেন শেষ সময়ে স্কোয়াডে ঠাঁই মিলবে! কিন্তু মিলেনি! এমন নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সের পরেও শেষ পর্যন্ত অজানা কারণে জায়গা করতে পারেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে! আরব আমিরাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও আমিরাতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ দলে নেই ফাফ।

‘আমি বিশ্বাস করি টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখনো আমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। সামনে পর পর দু’বছরে দু’টি বিশ্বকাপ। তাই এখন টি-টোয়েন্টিকেই প্রাধান্য দিতে চাই। আমি এখন পৃথিবির বিভিন্ন প্রান্তে খেলতে চাই যাতে আমি সেরাদের সেরা হতে পারি।’

চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান দিচ্ছিলেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। টি-টোয়েন্টিতে মনযোগ দিতে বিদায় জানান সাদা পোশাককে। কিন্তু প্রতিদানস্বরূপ কি পেলেন তিনি?! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের দলে নেই ফাফ!

বিশ্বমঞ্চের কঠিন লড়াইয়ে ফাফের মতোন অভিজ্ঞ আর ইনফর্ম খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে দল গঠনের পেছনের উদ্দেশ্যেটা সবারই অজানা। ফাফ কেন বাদ পড়েছেন এটা ক্রিকেট সমর্থকদের জন্যও বেশ বিস্ময়কর ব্যাপার! কারণ এই ফরম্যাটে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে!

গেলো বছর ৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২ ফিফটিতে ৩৩ গড় আর ১২৬ স্ট্রাইক রেটে ১৬৫ রান করেছেন তিনি। চলতি বছর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার সুযোগ পাননি এই ফরম্যাটে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) প্রথম অংশে ভারতের মাটিতে ৭ ম্যাচে করেন ৩২০ রান!

টানা চার ইনিংসে দেখা পান ফিফটির। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ইনজুরি কাটিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান! খেলেন হার না মানা ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রানের ইনিংস। এছাড়া এক ফিফটিও করেন।

এরপর আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে আরব আমিরাতেও ধরে রাখেন সেই ফর্ম। আইপিএলের এবারের আসরে ১৬ ম্যাচে ১৩৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৫ গড়ে করেছেন ৪৩৩ রান! আছে ৬ ফিফটিও! মাত্র ২ রানের জন্য হতে পারেননি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পুরো টুর্নামেন্টেই ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার।

ফাইনালে তাঁর ব্যাটে চড়েই আইপিএল ইতিহাসে চতুর্থ বারের মতো শিরোপা জয় পায় চেন্নাই সুপার কিংস। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৯ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আউট হন ইনিংসের শেষ বলে। এরপর বোলারদের দক্ষতায় ২৭ রানের জয় পায় চেন্নাই। ব্যাট হাতে দাপুটে ইনিংসের পর ম্যান অব দ্যা ফাইনাল নির্বাচিত হন ফাফ।

এই আইপিএল খেলাকালীনই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় অংশের সময় ঘোষিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ স্কোয়াড। উড়ন্ত ফর্মে থাকা সত্ত্বেও দলে জায়গা মেলেনি অভিজ্ঞ এই তারকার। তবে ব্যাট হাতে সেই উপেক্ষার জবাবটা ঠিক দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

ধারাবাহিক পারফরমের পর হয়তো আশায় বুক বেঁধেছিলেন শেষ সময়ে স্কোয়াডে ঠাঁই মিলবে! কিন্তু মিলেনি! এমন নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সের পরেও শেষ পর্যন্ত অজানা কারণে জায়গা করতে পারেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে! আরব আমিরাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও আমিরাতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ দলে নেই ফাফ। কী পাপে নেই ফাফ?

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৫০ ম্যাচে ৩৬ গড়ে ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে ১৫২৮ রান করেছেন ফাফ। ১০ ফিফটির পাশাপাশি করেছেন ১ সেঞ্চুরিও। ৩৭ বছর বয়সে এসেও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগে রান বন্যায় ভাসালেও আস্থার জায়গা গড়তে পারেননি নির্বাচকদের মনে। জাতীয় দলেও ব্যাট হাতে সবশেষ সিরিজে ছিলেন অন্যতম সেরা একজন।

তবুও উপেক্ষিত ফাফ! কারণটা কি বয়স? নাকি অন্য কিছু! সেসব কিছুই অজানা। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে ফাফের না থাকাটা দলকে কতটা ভোগাবে সেটা সময়ই বলে দিবে।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সেরাটা দিতে ছেড়েছিলেন টেস্ট। আর প্রতিদানস্বরূপ কিনা দলেই জায়গা পেলেন না! দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের দু:সময়ে দলকে কাঁধে চড়ে উঠে দাঁড়াতে লড়ে যাওয়া ফাফ সেরাটা দিয়েও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি নির্বাচকদের।

আইপিএলের শিরোপা হাতে নিয়ে মুখে হাসি টেনে সেই কষ্টটা আড়াল করতে চাইলেও সত্যিকার অর্থে তা পেরেছেন কি?! উপেক্ষার জবাবটা দিতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই ফরম্যাটে আর ফিরতে পারবেন তো? সেটা জানলেও হলেও আপাতত গুণতে হবে অপেক্ষার প্রহর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...