নিজের আচরণ দেখলে নিজেই লজ্জা পাবেন মার্টিনেজ
ফাইনালের মঞ্চে টাইব্রেকারে ফরাসিদের দুইটি শট ঠেকিয়ে জয়ের নায়ক তিনি। এছাড়া টুর্নামেন্টজুড়ে অনবদ্য সব সেভে নির্বাচিত হয়েছেন সেরা গোলকিপার। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর মার্টিনেজের অশোভন আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। আলবিসেলেস্তেদের শিরোপা জেতার পেছনে বড় অবদান ছিল গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজের। ফাইনালের মঞ্চে টাইব্রেকারে ফরাসিদের দুইটি শট ঠেকিয়ে জয়ের নায়ক তিনি। এছাড়া টুর্নামেন্টজুড়ে অনবদ্য সব সেভে নির্বাচিত হয়েছেন সেরা গোলকিপার। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর মার্টিনেজের অশোভন আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার।
গত কয়েক বছরের বদলে গেছে এমি মার্টিনেজের ক্যারিয়ার। আর্সেনালের বেঞ্চে কিংবা নিচু সারির ক্লাবে লোনেই কেটেছে ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়। এরপর বার্নাদো লেনোর ইনজুরির কপাল খুলে তাঁর। মাত্র অর্ধেক মৌসুমেই নজর কাড়েন, দল বদলে প্রথম পছন্দের কিপার হিসেবে যোগ দেন অ্যাস্টন ভিলায়। তা সত্ত্বেও জাতীয় দলে কোনোভাবেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
এবারেও ভাগ্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে তাঁর জন্য, কোপা আমেরিকার ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়েন ফ্রাঙ্কো আরমানি। সুযোগটা দুহাত ভরে নেন মার্টিনেজ, দারুণ পারফর্ম করে দলকে জেতান শিরোপা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এবারে তো জিতলেন বিশ্বসেরার খেতাবই।
তবে মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে বরাবরই সমালোচিত হয়েছেন নিজের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির জন্য। কোপার আমেরিকার সেমিতেও টাইব্রেকার কলম্বিয়ার বিপক্ষে দলকে জেতানোর পর বাজে অঙ্গভঙ্গির জন্য নিন্দা কুড়িয়েছেন। এবার বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতার পরও একই কাজ করেছেন। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে, সমর্থকদের উসকে দিয়েছেন।
এবারে মার্টিনেজের এমন আচরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এমি নিজের আচরণ দেখলে নিজেই লজ্জা পাবে। তবে সে দারুণ একজন মানুষ। আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না কতোটা ভালো সে, কেবলমাত্র তাঁর সাথে মেশার পরই বুঝতে পারবেন সেটা।’
তাঁর অধীনেই সেরা ফর্মের মেসিকে দেখেছে গোটা বিশ্ব। নির্ভার মেসির জাদুতে বারবার আটকে গেছে প্রতিপক্ষ। অথচ স্কালোনি দায়িত্ব নেবার সময় আর্জেন্টিনা ছিল পথ হারানো এক জাহাজ। সেই দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনার কোচ হবার পর প্রথমেই আমি আর সহকারী কোচ পাবলো আইমার মেসির সাথে ভিডিও কলে আলোচনায় বসি। সে আমাদের বলেছিল সে ফিরতে প্রস্তুত। আমরাও প্রথম সুযোগেই জানিয়ে দিই আমরা তাঁর অপেক্ষাতেই আছি। সেটাই ঘটে, মেসি ফিরে আসে এবং আট মাসের মাঝেই দারুণ একটা দল দাঁড়িয়ে যায় আর্জেন্টিনার।’
এছাড়াও মেসিকেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে আখ্যায়িত করেন স্কালোনি। তিনি বলেন, ‘স্ট্রোক করার পর থেকে আমার বাবা কেবল একটি হাতই নাড়াতে পারতেন। টিভিতে যখনই বিশ্বকাপ ট্রফি দেখাতো, তিনি হাত উঁচু করে আমাকে বলতেন আমাকে ওটা এনে দাও। তিনি সবসময়ই নিশ্চিত ছিলেন আমরা বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি।’
বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণা করে স্ক্যালনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপের যাত্রাটা ছিল একটা সিনেমার মত। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা ছিল। তবে আমরা পুরোটা সময় উপভোগ করতে চেয়েছি। জানতাম কঠিন হতে যাচ্ছে সময়টা এবং যে কেউই জিতে নিতে পারে। ৮০ মিনিট পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল, এরপরই চিত্রটা বদলে যায়। টাইব্রেকারের আগের দলকে উজ্জীবিত করাটা ছিল ভীষণ আবেগের।’
২০০৬ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে খেলোয়াড় হিসেবে ছিলেন স্কালোনি। তবে তাঁর ভাষ্যমতে, বর্তমান স্কোয়াডে জায়গা হত না তাঁর। স্কালোনি বলেন, ‘বর্তমানের দলে কোনোভাবেই জায়গা হত না আমার। এই দলে জায়গা পাবার যোগ্যতা আমার ছিল না তখন। সেই সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে দলের খেলার মান। আমার খেলার ধরণ খানিকটা রদ্রিগো ডি পলের মত। তবে সে আমার চাইতে অনেক ভাল ফুটবলার।’