মুস্তাফিজ এখন নেট বোলার

মুস্তাফিজ মাঠে প্রবেশ করতেই চওড়া হাসি এই কোচের মুখে। মজা করে বললেন,’ আরে মুস্তাফিজ এদিকে আয়, আমাদের নেটে বোলার লাগবে।‘ বাংলাদেশ টাইগার্সের নেট বোলার হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে মুস্তাফিজও খুব একটা মন খারাপ করেননি। কোচের এমন প্রস্তাবে মুস্তাফিজের মুখেও স্মিত হাসি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে দেশে ফিরেছেন মাত্র ক’দিন হল, ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতেও রওনা দিয়ে ফেলেছেন এরই মধ্যে। তবুও গেল বৃহস্পতিবার হোম ক্রিকেটে দেখা মিলেছিল মুস্তাফিজুর রহমানের। মাঠে আসলেও অনুশীলন করেননি দ্য ফিজ, খুনসুটি করেই কাটিয়েছেন সময়। এরই মাঝে মুস্তাফিজকে একটু খোঁচা দিয়ে বসলেন কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। মুস্তাফিজকে বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে নেট বোলিং করার আমন্ত্রন জানালেন তিনি।

মুস্তাফিজ মাঠে ঢুকতেই চওড়া হাসি এই কোচের মুখে। মজা করে বললেন, ‘আরে মুস্তাফিজ এদিকে আয়, আমাগো তো নেট বোলার লাগবো।’ বাংলাদেশ টাইগার্সের নেট বোলার হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে মুস্তাফিজও খুব একটা মন খারাপ করেননি। কোচের এমন প্রস্তাবে মুস্তাফিজের মুখেও স্মিত হাসি।

বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে কোচ মিজানুর রহমান বাবুল প্রস্তাবটা নিছকই মজা করে দিলেও এর মাঝে একটা গল্প লুকিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর বোলিং পারফর্মেন্স খুবই হতাশাজনক। বিশেষ করে দেশের বাইরে তাঁর বোলিং যেন একেবারেই সাদামাটা।

যে রহস্য নিয়ে মুস্তাফিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছিলেন সে রহস্য ভেদ হয়েছে অনেক আগেই। তবে এরপর নিজেকে ভাঙা গড়ার কাজটা আর খুব বেশি করেননি তিনি। তাঁর আঙুলের কাজ, কব্জি বাঁকানো, কাঁধের ব্যবহার সবই যেন দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। শুধু বলটা ছুঁড়ে দেয়াতেই যেন তাঁর কাজ শেষ।

নিজের কিপ্টে বোলিং এর জন্যও খ্যাতি ছিল বাঁ-হাতি এই পেসারের। অথচ ২০২২ সালে সেই মুস্তাফিজের দেখা নেই। এবছর নয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজ ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন প্রায় নয় করে। উইকেট পেয়েছেন মোট সাতটা। আর বোলিং গড় ৩৬.৩৭।

সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে পেস বোলিং কন্ডিশনে তাঁর বোলিং দুর্বলতা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই ম্যাচেই তিনি ছিলেন ভীষণ খরুচে। এক ম্যাচে চার ওভার বোলিং করে খরচ করেছেন ৩৭ রান। পরের ম্যাচে মাত্র দুই ওভারেই দিয়েছেন ২৭ রান। কোন ম্যাচেই পাননি উইকেটের দেখা।

এরপর জিম্বাবুয়েতে গিয়েও বল ফেলার জায়গা পাচ্ছিলেন না এই পেসার। জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা যেন খুব সহজেই খেলতে পেরেছে তাঁকে। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে চার ওভারে খরচ করেছিলেন ৫০ টা রান। পরের ম্যাচেও এক উইকেট নিয়ে দিয়েছেন ৩০ রান।

এছাড়া পেস বোলিং কন্ডিশনে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই এমন ধারহীন বোলিং করে এসেছেন মুস্তাফিজ। যেমন নিউজিল্যান্ডে যে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সেখানে তাঁর বোলিং গড় ৯৯। উইকেট পাননি একটিও। ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন ৮.২৫ গড়ে।

এমনকি পাকিস্তানের মাটিতেও নিজের পেস দিয়ে ঝড় তুলতে পারেননি কাটার মাস্টার। দুইটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও ঝুলিতে নেই কোন উইকেট। ওভার প্রতি খরচ করেছেন প্রায় ১০ রান। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা আমেরিকার মাটিতে তো তাঁর ইকোনমি রেট দশেরও বেশি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একমাত্র বাংলাদেশের মাটিতেই তাঁর ইকোনমি রেট সাতের নিচে রাখতে পেরেছেন মুস্তাফিজ।

ক্যারিয়ারের এমন একটা সময়ে এসে মুস্তাফিজ খেলতে যাবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। পেসারদের জন্য স্বর্গরাজ্য অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে। যেখানে আগে কখনও খেলার অভিজ্ঞতাও নেই তাঁর। তবে অন্য পেস বোলিং সহায়ক দেশগুলোতে মুস্তাফিজের যা পরিসংখ্যান তাতে খুব বেশি আশা করাও কঠিন।

সব মিলিয়ে মুস্তাফিজের ফর্ম কিংবা কন্ডিশন বিবেচনায় তিনি কী সত্যিই এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অটোচয়েজ? নাকি এখনও তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে নেয়ার কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ। আর যদি মুস্তাফিজই খেলেন তাহলে কী তিনি নিজেকে অমন কন্ডিশনে মেলে ধরতে পারবেন। যদি না পারেন তাহলে বোধহয় জাতীয় দলে তাঁর জায়গাটা আর খুব বেশিদিন পাকা থাকবেনা। তখন আবার কোচ মিজানুর রহমান বাবুবের মশকরাই সত্যি হবে। বাংলাদেশ টাইগার্সের নেটেই তো তখন বোলিং করতে হবে তাঁকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...