যাদের দুর্বল হৃদয়, তাঁদের জন্য এই ম্যাচ নয়!

স্নায়ু নিয়ে ছেলেখেলা করার এক ম্যাচের ইতি ঘটল। তবে, কে জানে শেষ ওভারে বার্ল স্ট্রাইকটা আরেকটু বেশি পেলে হয়তো চিত্রটা ভিন্ন হলেও হতে পারত।

দিনের শুরু নাকি বাকিটা সময়ের পূর্বাভাস দেয়। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটায় সেটা সত্যি, আবার মিথ্যাও। সত্যি, কারণ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টস জেতার পর শেষে ম্যাচও জিতেছেন। আর মিথ্যা কারণ, শুরুতে যেমন ম্যাড়মেড়ে একটা ম্যাচের আভাস পাওয়া গিয়েছিল – ম্যাচের শেষে সেটা আর হয়নি। বরং চলতি বিশ্বকাপেরই অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর একটা ম্যাচের দেখা মিলল ব্রিসবেনের গ্যাবায়।

গ্যাবার এই উইকেটটা অনেক রানপ্রসবা নয়। তবে, টি-টোয়েন্টিতে ১৫০-১৬০ রানের নিচে করলে আসলে জয়ের আশা করাই যায় না। বাংলাদেশ ১০ ওভার শেষে দুই উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান করে। সেখানে দলটা বেশ একটু যে ব্যাকফুটে ছিল – তা নি:সন্দেহে বলাই যায়। এরপর ম্যাচের মোমেন্টাম পাল্টে ফেলেন শান্ত। শুরুতে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে শেকি থাকলেও শেষ দিকে একটু ঝড় তুলতে পেরেছিলেন। তাতে তিনি ৫৫ বলে ৭১ রানের ইনিংস শেষ করেন। এরপর সঙ্গ দেন আফিফ হোসেন। যদিও, শেষ ওভারে বাংলাদেশ ঝড় তুললে হয়তো ইনিংসটা আরো বড় হত।

তবে, এই ধরণের উইকেটে ১৫০ রান মন্দ নয়। বিশেষ করে সামনে যখন জিম্বাবুয়ের মত দল – তখন আশা করাই যায়। বাংলাদেশ দলও আশা করেছিল। সেই আশার পালে হাওয়া দিয়েছিল দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান বোলিং। দু’জনই দু’টো করে উইকেট নেন পাওয়ার প্লেতে। ফলাফল, প্রথম ছয় ওভারে মাত্র ৩৬ রান তুলতেই চারটি উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজাও ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই।

সেখান থেকে সহজ জয়টাই চোখে ভাসছিল। কিন্তু, অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস তখনও উইকেটে। তিনি একটা প্রান্ত আগলে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ের ইনিংস। মাঝে রেগিস চাকাভা সাজঘরে ফিরলেও উইলিয়ামস ছিলেন অবিচল।

তবে, জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান রেটটা ক্রমেই আকাশ ছুয়ে যাচ্ছিল। প্রথম ৫০ রান জিম্বাবুয়ে করে ৫০ বলে, পরের ৫০ আসে ৪৪ বলে। রায়ান বার্ল ক্রিজে আসার পর একটু একটু করে ভাগ্য পাল্টাতে থাকে জিম্বাবুয়ের। তারপরও রান রেটের চাপ ছিলই।

১৩ তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন ১১ রান দেন। এরপর ১৮ তম ওভারে ১৪ রান দেন হাসান মাহমুদ। শেষ দুই ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য দরকার ২৬ রান। হাতে আছে পাঁচটা উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে সেটা খুবই সম্ভব।

আরও বিপদের বিষয় হল, পেসারদের বোলিংয়ের কোটা তখন শেষ, আছেন কেবল সাকিব নিজে আর মোসাদ্দেক। ১৯ তম ওভারে সাকিব আসলেন। ১০ রান দিলেন। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, দারুণ একটা থ্রো-তে আউট করলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের প্রাণ ভোমরা উইলিয়ামসকে। উইলিয়ামস ৪২ বলে আটটি চারে ৬৪ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট পেয়ে গেল বাংলাদেশ।

শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য দরকার ১৬ রান। তখন প্রত্যাশা ছিল শেষ ওভারটা অধিনায়ক বল তুলে দেবেন মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকারের হাতে। কিন্তু, না। বোলিং করবেন মোসাদ্দেক। স্ট্রাইকে রায়ান বার্ল, তিনি কতটা ভয়ানক স্পিনের বিপক্ষে সেটা তো সবারই জানা। তবে, প্রথম বলেই সিঙ্গেল। একটু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় বলটায় ব্র্যাডলি ইভান্স স্নায়ুচাপের সাথে লড়ে পারেননি। ছক্কা হাকানোর ডেলিভারিতে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে আফিফ হোসেন হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ম্যাচ তখন বাংলাদেশের পক্ষে। চার বলে জিততে জিম্বাবুয়ের তখন দরকার ১৫ রান।

এরপর দুই বলের একটা ক্যামিও। পরপর দুই বলে একটা চার ও একটা ছক্কা হাকান রিচার্ড এনগ্রাভা। শেষ দুই বলে জিম্বাবুয়ের তখন দরকার মাত্র পাঁচ রান। ম্যাচ আবার হেলে গেছে জিম্বাবুয়ের দিকে। এবার পঞ্চম ডেলিভারিতে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার এনগ্রাভা। শেষ বলে দরকার পাঁচ রান।

এবার, যা হল তার প্রত্যাশা কেউ আদৌ করেছিল কি না সন্দেহ।

শেষ ডেলিভারিতে খেলতেই পারলেন না ব্লেসিং মুজারাবানি। ম্যাচ জিতে গেল বাংলাদেশ। চার রানের জয়। দলের খেলোয়াড়রা একটু উল্লাস করলেন। প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে মাঠ ছাড়লেন। গ্যাবার ‘বাংলাদেশি’ গ্যালারি তখন আনন্দে উদ্বেল।

স্রেফ রুটিন চেক আপের অংশ হিসেবে আম্পায়ার ম্যারিয়াস ইরাসমাস ও নিতিন মেনন নো-বল চেক করবেন, সচরাচর যা হয়। কিন্তু, তাতেই ঘটল বিপত্তি। দেখা গেল, শেষ ডেলিভারিটা ব্যাটার মিস করলেও, উইকেট ক্রস করার আগেই সামনে এগিয়ে ধরে ফেলেছেন উইকেট রক্ষক নুরুল হাসান সোহান।

ব্যাস, নো বল! আবার নামতে হবে মাঠে। হয়ে যাওয়া উল্লাস কিংবা হতাশা – সব মিথ্যা। নো-বলের কারণে একটা বাড়তি রানও পেল জিম্বাবুয়ে।

এবার এক বলে করতে হবে চার রান। মানে একটা বাউন্ডারি দরকার। স্ট্রাইকে তখন ওই মুজারাবানি। মোসাদ্দেক-সোহানদের ওপর তখন আকাশ সমান চাপ। তবে, এবার ঠাণ্ডা মাথায় বোলার কিংবা উইকেটরক্ষক – কেউই ভুল করলেন না। ফুলার লেন্থের শেষ ডেলিভারিতে বল ব্যাটে লাগাতে পারলেন না মুজারাবানি। সোহান এবার উইকেটের পেছনেই ছিলেন।

স্নায়ু নিয়ে ছেলেখেলা করার এক ম্যাচের ইতি ঘটল। তবে, কে জানে শেষ ওভারে বার্ল স্ট্রাইকটা আরেকটু বেশি পেলে হয়তো চিত্রটা ভিন্ন হলেও হতে পারত!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...