রজত দ্য ইকোনমিক ভাটিয়া

আইপিএল থেকে হয়তো জাতীয় দলে একটা সুযোগ পেতে পারেন; এমনটা ভেবেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই সুযোগ আর পাননি তিনি! ২০১৪ সালে একবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন রজত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ ১৬ তে ঠাই মেলেনি তাঁর!

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরমারদের প্রসঙ্গ টানলে আসবে অলরাউন্ডার রজত ভাটিয়ার নাম। বেশ সম্ভাবনাময়ী এই অলরাউন্ডার অনেক স্বপ্ন নিয়ে এলেও উঠতে পাড়েননি সফলতার শীর্ষে। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে রেখে গেছেন বেশ উপরে।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও তিনি দূর্দান্ত। টাইট লাইন-লেন্থ আর ভ্যারিয়েশন সব মিলিয়ে স্লোয়ার বোলিংয়ে তিনি ছিলেন অন্যতম সেরা। ব্যাটসম্যানরা বাধ্য হয়ে জেদের বশে হিট করতে গিয়ে প্রায়সই ক্যাচ দিয়ে ফেরত গেছেন! রান আটকে রাখা কিংবা ব্যাটসম্যানকে স্লোয়ার বলে মারতে বাধ্য করাটাই ছিলো ভাটিয়ার বোলিংয়ের অন্যতম কৌশল।

তবে, জীবনের অনেক বড় আক্ষেপটা বোধহয় জাতীয় দলে জায়গা মেলাতে না পারা। অবশ্য দলটাও যে ভারত! তারকায় ঠাসা এই দলটায় জায়গা মেলাটাও যে দুষ্কর। ঘরোয়া ক্রিকেটের এতো এতো পারফরমারের মাঝে যারা বিশেষ ভাবে নজরকাঁড়তে পেরেছেন নির্বাচকদের, তারাই বহু ঝড় ঝাপটা পাড়ি দিয়ে টিকেট পেয়েছেন জাতীয় দলের।

অনূর্ধ্ব ১৯ দল, বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট সব পেরিয়ে ১৯৯৯ সালে তামিল নাড়ুর হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেক। পরের বছর লিস্ট এ তেও তামিল নাড়ুর হয়ে যাত্রা শুরু করেন ভাটিয়া। দু’বছর বাদেই নিজ রাজ্য দিল্লিতে ফিরে আসেন তিনি। আর ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা সেখানেই কাটান ভাটিয়া। অবশ্য ক্যারিয়ারের শেষ দুই মৌসুম খেলেন উত্তরাখণ্ডের হয়ে। ২০০৩ থেকে ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়টা দিল্লির হয়েই খেলেন ভাটিয়া।

সেসময়ে অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি জাতীয় দলের জন্য লোয়ার-মিডল অর্ডারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একজন হতে পারতেন। ঘরোয়া ক্রিকেট পারফরম্যান্সটাও ছিলো ঠিকঠাক। কিন্তু তখন জাতীয় দলের অলরাউন্ডার কোটায় থিতু ছিলেন রবিন সিং। যিনি সেসময় ছিলেন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তাই সেই প্রতিযোগিতায় ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ভাগ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি ভাটিয়া।

২০০৭-০৮ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে ৯ ম্যাচে প্রায় ৪৮ গড়ে ৫২৫ রান করেন তিনি! ওই মৌসুমের ফাইনালে উত্তর প্রদেশের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে বোলিং করে দিল্লি। প্রথমে ব্যাট করে বেশ ভালো সংগ্রহ পায় উত্তর প্রদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার আকাশ চোপড়া ছাড়া বাকিরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে! ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে দলের হাল ধরেন ভাটিয়া। ছয়ে নেমে ১৮ চার ও ৪ ছয়ে হার না মানা ১৩৯ রানের ইনিংসে দলকে উদ্ধার করেন তিনি। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ২৯০ রান করে দিল্লী।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তর প্রদেশ ১৭৭ রানেই গুড়িয়ে গেলে ২২৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটের বড় জয় পায় দিল্লি। সেই সাথে রঞ্জি ট্রফির শিরোপাও ঘরে তোলে রজত ভাটিয়ার দল। বল হাতেও ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ওই মৌসুমে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটান তিনি! ১২ গড়ে শিকার করেন ৩৪ উইকেট!

২০১২-১৩ মৌসুমে লিস্ট এ তে ৮ ম্যাচে প্রায় ৬৭ গড়ে ২০০ রান করেন ভাটিয়া। ২০০৮ থেকে প্রায় প্রতিটি আসরেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলেছেন তিনি। রাজস্থান রয়্যালসের পর যোগ দেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। সেখানে কলকাতার হয়ে শিরোপাও জেতেন তিনি। ছিলেন দলের অন্যতম নিয়মিত মুখ। ইকোনমিক বোলিং আর ব্যাট হাতে লোয়ার -মিডল অর্ডারে হ্যান্ডি পারফরম্যান্সে আইপিএলেও বেশ ধারাবাহিক ছিলেন ভাটিয়া।

আইপিএল থেকে হয়তো জাতীয় দলে একটা সুযোগ পেতে পারেন; এমনটা ভেবেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেই সুযোগ আর পাননি তিনি! ২০১৪ সালে একবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন রজত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ ১৬ তে ঠাই মেলেনি তাঁর!

ধীরে ধীরে বয়সটাও ত্রিশের কোটায়! তখনো হয়তো কিছুটা আশায় ছিলেন, যদি স্বপ্নের দুয়ার একবার খুলে যায়। কিন্তু বয়স যতোই বেড়েছে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখাও ছেড়ে দেন ভাটিয়া। ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবেই প্রায় ২১ বছরের ক্যারিয়ার শেষে ২০২০ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত জানান তিনি।

ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচে ৪৯ গড়ে ৬৪১২ রান। ১৭ সেঞ্চুরির সাথে করেছেন ৩০ ফিফটি। লিস্ট এ তে খেলেছেন ১১৯ ম্যাচ। আর এই ১১৯ ম্যাচে ৪১ গড়ে করেছেন ৩ হাজারেরও বেশি রান। ৩ সেঞ্চুরি আর ১৯ ফিফটি নিজের নামে করেন রজত। বল হাতে ফার্স্ট ক্লাসে ১৩৭ ও লিস্ট এ তে শিকার করেছেন ৯৩ উইকেট!

পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র দুই মৌসুমে ভাটিয়ার ব্যাটিং গড় ৪০ এর নিচে ছিলো! এছাড়া পুরো ক্যারিয়ারেই ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। বল হাতে নিয়মিত উইকেট না পেলেও কিপটে বোলিংয়ে বরাবরই দলের জয়ে রেখেছেন অবদান।

দিল্লি থেকেই জাতীয় দলে পাড়ি দিয়েছিলেন বহু ক্রিকেটার। বীরেন্দ্র শেবাগ, বিরাট কোহলি, গৌতম গম্ভীর, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা উঠে এসেছিলেন দিল্লি থেকেই। এছাড়া মিথুন মানহাস, সুমিত নারওয়ালরাও ভারতের এ এবং বি দলে সুযোগ পেয়েছেন।

শুধু পাননি ভাটিয়া! ভারতের এ দল কিংবা বি দলেও কখনো ডাক পাননি তিনি। জাতীয় দল তো বহু দূরে! অবশ্য রজত ভাটিয়ার মতো বহু ক্রিকেটারই ঘরোয়া ক্রিকেটে তারকার তকমা পেলেও ভুড়ি ভুড়ি তারকা ক্রিকেটারদের ভীড়ে জায়গা করতে পারেননি জাতীয় দলে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...