একদিন মহারাজ ফিরেছিলেন…

এরপর একদিন!নির্বাসন শেষে রাজারগড়ে একদিন মহারাজ ফিরলেন। ততদিনে তাঁর বেশভূষাতে কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছে। প্রজাদের সামান্য পশ্চাতে অনেকাংশেই অলক্ষ্যে রাজ্যে প্রবেশ করে, তিনি সঙ্কোচ করলেন, পুনর্বার রাজ্যের হাল ধরতে হবে!সেই মোতাবেক চলল প্রস্তুতি, জমে রইল খেলা! রাজ্যবাসীর আশায় বাঁধা খেলাঘর গুড়িয়ে দেবেন, এমন মহারাজ তো তিনি নন!

এক যে ছিল রাজা!

সে অনেক অনেক আগেকার কথা। রাজার গড়ের মহাজার তখন দিগ্বিজয়ী ছিলেন। এহেন রাজ্য ছিল না, যা কিনা তিনি জয় করেন নাই। দিকে দিকে তখন মহারাজার জয়োধ্বনী। মহারাজ তখন নিজ রাজ্যের নয়নেরও মণি। হবেন নাই বা কেন?

তার কিছুদিন আগেই তো তিনি জয় করে এলেন সপ্ত পারাবার, ধূসর মরুর রাজ্য, শ্বেত বর্ণের লোকালয় কিংবা ধরুন, বিশ্বে যা কিছু বাকি দেখার বা শোনার! কিন্তু শোকগ্রস্ত হবার পট কি শেষ হয়েছে? হয়নি। যুদ্ধ ময়দানে মহারাজ নিজে ছিলেন শ্রেষ্ট মুকুটের অধিকারী, কিন্তু তার দল যে যুদ্ধটা তার জন্যে জিততে পারল না! ফলাফল, ব্যার্থ বাহিনী নিয়ে রাজা ফিরে এলেন মুকুট মাথায় নিয়ে! কিন্তু রাজা কি এই মুকুট চেয়েছিলেন?

কবি বলেন, ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার।’ মহারাজও তাই মানেন।  সুদূর টেমস নদীর পাড়ে যুদ্ধটা জিততে পারেন নাই বটে, কিন্তু এরপরেরবার সবাইকে একেবারে ঘোল খাইয়ে দেওয়া যাবে। কেন? এরপরের যুদ্ধটা যে পাশের রাজ্যেই। চেনা মাটি, চেনা বালি, চেনা তার সজ্জা, মহারাজা দেখিয়ে দেবেন, শ্রেষ্ঠত্বের মজ্জা!

এই বিশ্বাসেই রাজারগড়ের মানুষ বেশ ফুলেফেঁপেই উঠছিল। মহারাজও তাগিদ দিচ্ছিলেন, এরপরের যুদ্ধটা তাঁর জেতা চাই! সেই মোতাবেক চলছিল প্রস্তুতি, যুদ্ধকৌশল শেখানোর জন্যে নিয়োগ দেওয়া হল নতুন প্রশিক্ষক, এরপর একদিন সেই প্রশিক্ষকের সাথে মহারাজ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসলেন!

চলছে বৈঠক, রাজ্যবাসীর সেদিন সে কি কৌতুহল! মহারাজ কি বলবেন, কিভাবে বলবেন, কি কি আসছে? কিন্তু মহারাজ কিছুই বললেন না! শুধু মুচকি হেসে বুঝিয়ে দিলেন, সামনের বার আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না কিছুই!

মহারাজা রাজ্যের নয়নের মণি। শোনা যায়, সামনের যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে নাকি মহারাজ নিজেই যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। রাজ্যবাসীর খুশি এতে আরো বাড়ে, এমন মহারাজ যদি যুদ্ধে সেনাপতি হন, সে যুদ্ধ কি রাজারগড় আর হারবে?

দিন চলছিল, মাসও চলছিল, সূর্যও উঠছিল ডুবছিল। কিন্তু রাজারগড়ের সুখ বিধাতার বেশিদিন সইল না।

মহারাজ নির্বাসিত হলেন!

শেষ যেবার রাজারগড় ছেড়ে মহারাজ চলে যাচ্ছিলেন, তখন তার মুখে মলিন হাসি, যে হাসি লুকাতে চাইছে অজস্র কান্না। মহারাজ তো এভাবে চলে যেতে চাননি, চাননি রাজারগড় ছেড়ে বহুদূরের পথে নির্বাসিত হতে!

মহারাজার নির্বাসনের খবর মুহুর্তেই রাজ্যের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ল। রোজ সকালে কাপড় ধুয়ে দেয় যে মতিন ধোপা, সে মহারাজার শোকে ধৌত হয়ে গেল পুরোপুরি।  প্রতিমা বানায় যে শিব কর্মকার, মহারাজের শোকে সে হয়ে গেল পাথুরে মূর্তির ন্যায়। দিন আনে দিন খায় যে কুলি, সেও যেন এই শোক বইতে পারল না।

মহারাজের সেনাপতিরা তো আরো শোকগ্রস্ত হয়ে গেলেন। যে মহারাজ এতদিন ছিলেন ছায়াবৃক্ষের ন্যায়, সেই মহারাজাকে নাকি আর সামনে পাওয়া যাবেনা। এও কি সম্ভব?

বিধির লিখন, না যায় খণ্ডন! রাজারগড় ছেড়ে মহারাজ একদিন বেরিয়ে গেলেন… নির্বাসিত মহারাজ আবার ফিরবেন তো!

এর মাঝে রাজ্যে মহামারী দেখা দিয়েছে, শয়ে শয়ে লোক মরেছে। মরেনি কেবল রাজ্যবাসীর চাতক পাখির মত অপেক্ষা- মহারাজ কবে ফিরবেন?

এরপর একদিন!

নির্বাসন শেষে রাজারগড়ে একদিন মহারাজ ফিরলেন। ততদিনে তাঁর বেশভূষাতে কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছে। প্রজাদের সামান্য পশ্চাতে অনেকাংশেই অলক্ষ্যে রাজ্যে প্রবেশ করে, তিনি সংকল্প করলেন, পুনর্বার রাজ্যের হাল ধরতে হবে!

সেই মোতাবেক চলল প্রস্তুতি, জমে রইল খেলা! রাজ্যবাসীর আশায় বাঁধা খেলাঘর গুড়িয়ে দেবেন, এমন মহারাজ তো তিনি নন!

প্রস্তুতি হয়েছে অনেক। ছোটখাট খেলায় মেতে নেমে পড়লেন একদিন মহারাজ। চুল কখানা পেছনে টানা, কাঁধে জমেছে রানের বায়না, খেলায় ফিরতে কত দেরি মহারাজ?

মহারাজ আজকে খেলায় ফিরেছেন, অনেক অনেক দিন পর তাকে বেশ আড়ষ্টও লাগছে! কিন্তু আমরা জানি। মহারাজ একদিন ফিরবেন আগের মতই। কারণ রাজার নাম যে সাকিব আল হাসান!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...