সুপার ক্লাসিকোর সুপার বিতর্ক!

যদিও শুরুতে এ নিয়ে কোন আপত্তি তুলেনি ব্রাজিলের সরকারের কোন পক্ষ। এরপর খেলা শুরুর আগে বাঁধা না দিলেও ম্যাচ শুরুর পরপরই তৎপরতা শুরু করেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে, মূলত এই চারজনকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। তারা নাকি মিথ্যা কথা বলে মাঠে নেমেছেন। তাই খেলার সাত  মিনিটের মধ্যেই ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্যদের নিয়ে সরাসরি মাঠে ঢুকে পড়ে। হুট করে রোমেরো, লো সেলসো এবং মার্টিনেজকে আটক করার জন্যই তাঁদের এই কর্মকাণ্ড।

ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতোই ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই বিশেষ কিছু। সেটি বয়সভিত্তিক দল হোক কিংবা জাতীয় দল, সবখানেই আলাদা উত্তেজনার দেখা মেলে। যার সর্বশেষটির দেখা মিলর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে।

তবে, ফুটবলবিশ্ব এমন ম্যাচ আগে কখনো দেখেনি বললেই চলে। ম্যাচ শুরু হওয়ার মিনিট পাচেঁকের মধ্যেই সেটি স্থগিত হয়ে যায়। একটা ম্যাচে কতটা নাটকীয়তা হতে পারে তার প্রমাণ যেন হয়ে থাকল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচটি। এই ম্যাচটি স্থগিতের বিষয়টি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিশ্চিত করা পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল এক টুইটে জানায়, ম্যাচ রেফারি স্থগিত করে দিয়েছে ফিফা আয়োজিত বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এই ম্যাচটি।

এদিকে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, আর্জেন্টিনার চার জন খেলোয়াড় করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ না মেনে ভঙ্গ করেছেন। যারা ইংল্যান্ডে খেলেন, তারা কোয়ারেন্টাইন মানেনি। যদিও কারা এমনটি করেছে সরকারিভাবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ব্রাজিলিয়ান হেলথ রেগুলেটরি এজেন্সির নির্দেশনা অনুয়ায়ী, ব্রাজিলিয়ান ছাড়া অন্য কেউ ইংল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ব্রাজিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে।

যাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, নিয়ম মেনে তাদের অবশ্যই দেশটিতে আসার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু এই নিয়ম মানা হয়নি আর্জেন্টিনার স্কোয়াডে থাকা চার ফুটবলার এমি বুয়েনদিয়া, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, জিওভানি লো চেলসো ও ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর ক্ষেত্রে। কিন্তু নিয়ম না মানলেও তাদের তিনজনকে একাদশে রাখে আর্জেন্টিনা।

যদিও শুরুতে এ নিয়ে কোন আপত্তি তুলেনি ব্রাজিলের সরকারের কোন পক্ষ। এরপর খেলা শুরুর আগে বাঁধা না দিলেও ম্যাচ শুরুর পরপরই তৎপরতা শুরু করেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে, মূলত এই চারজনকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। তারা নাকি মিথ্যা কথা বলে মাঠে নেমেছেন। তাই খেলার সাত  মিনিটের মধ্যেই ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্যদের নিয়ে সরাসরি মাঠে ঢুকে পড়ে। হুট করে রোমেরো, লো সেলসো এবং মার্টিনেজকে আটক করার জন্যই তাঁদের এই কর্মকাণ্ড।

এর পরপরই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পরই মাঠ ছেড়ে টানেলে প্রবেশ করেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরার পর তারা মেসি ও নেইমারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় রেফারি কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের ড্রেসিং রুমে চলে যাবার নির্দেশ দেন।

আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি পুরোটা সময় মাঠে থেকেই প্রতিবাদ করতে থাকেন। এই সময়টাতে কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়। যাদেরকে নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়, এই চারজন আর্জেন্টিনার একাদশে শুরু থেকেই ছিলেন। ম্যাচের তিন দিন আগে থেকেই তারা ব্রাজিলে অবস্থান করেন এবং অনুশীলনও করেছেন দলের সঙ্গে।

কিন্তু, ম্যাচ শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্তও তাঁদের খেলার ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানায়নি দেশটির ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি বলেছেন, ’যে চারজন খেলোয়াড়কে নিয়ে সমস্যা তারা যে খেলতে পারবেন না এ ব্যাপারে আমাকে স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। আমাদের একটি বারের জন্যেও বলা হয়নি তারা খেলতে পারবেন না। আমরা মেন ম্যাচটা খেলতে চেয়েছিলাম, তেমনি ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরাও খেলতে চেয়েছিল।’

কোচ লিওনেল স্কালোনি দাবি করেছেন, কনমেবল (লাতিন আমেরিকার ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা) তাদেরকে বলেছে, ওই চারজনকে নিয়ে মাঠে নামতে আর্জেন্টিনার কোন সমস্যা নেই। মুখ খুলেছেন স্বয়ং লিওনেল মেসিও। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমরা এখানে আছে। অথচ, তারা ম্যাচ শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল। আমাদের আগে জানানো হল না কেন!’

এদিকে কনমেবল এক টুইটে জানিয়েছে, ফিফা আয়োজিত কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এই ম্যাচ রেফারি স্থগিত করে দিয়েছে। এখন ম্যাচ রেফারি ও ম্যাচ কমিশনার ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির কাছে এ নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর পরই তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে।

এরপরই জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে, ম্যাচের পূর্ণ ৩ পয়েন্ট কোন দল পাবে। খেলা না হলে আর্জেন্টিনাকে ৩ পয়েন্ট দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। এখন যদি আবার খেলা না হয় তবে পূর্ণ তিন পয়েন্টই যাবে মেসিদের বাক্সে। কনমেবলের শৃঙ্খলাবিধিতে স্পষ্ট বলা আছে, খেলোয়াড় সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে সেটা মেটাতে হবে ম্যাচ শুরুর আগে অথবা পরে। সেটি ম্যাচ চলাকালীন সময়ে করার কোন সুযোগ নেই। তবুও যদি ম্যাচ বন্ধ করা হয় তাহলে যে দলের কারণে ম্যাচ থেমে যাবে, সেই দল তিন পয়েন্ট কেটে নেওয়া হবে। আর প্রতিপক্ষ দল পাবে সেই পূর্ণ তিন পয়েন্ট।

এদিকে ব্রাজিলে ম্যাচ নিয়ে চরম নাটকীয়তার পর সেলেসাওদের দেশ ছেড়ে দেশে ফিরে আসে লিওনেল মেসির দেশ। যত রকম  নাটকীয়তা হতে পারে একটি ম্যাচে তার সবই হয়েছে। তর্ক-বিতর্ক আর দফায় দফায় আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে যায় ম্যাচটি। আর্জেন্টিনায় পৌছে আগামী বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা।

নিজেদের মাঠে ম্যাচটি হওয়ায় আপাতত ওই ম্যাচ নিয়েই মনোযোগী হতে চাচ্ছে আলবিসেলেস্তারা। ম্যাচের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে সেটি জানার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে নিয়ম বলছে, আর্জেন্টিনাকে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...