দ্য ধোনিইজম

বাংলাদেশের বিপক্ষে রান আউট দিয়ে শূন্য রানে যে ক্যারিয়ারের ‘শুভ সূচনা’ হয়েছিল, সে ক্যারিয়ারের শেষটাতেও লেখা থাকল - রান আউট! নিজের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মস্তিষ্ক দিয়ে কত কিছু বদলেছেন তিনি, অথচ ‘দ্য গ্রেটেস্ট ফিনিশার এভার’ ক্যারিয়ারের ফিনিশিং টাচটা ‘রান আউট’ থেকে ‘নট আউট’-এ রূপান্তর করার সুযোগই পেলেন না! নাকি নিলেন না?

মহেন্দ্র সিং ধোনি ঠিক তাঁর মতো করেই বিদায় নিলেন। একদম অননুমেয় ভাবে! কাপ্তান ছিলেন যখন, তখন ঠাণ্ডা মাথায় এমন সব সিদ্ধান্ত নিতেন, আপাতভাবে মনে হতো – ‘এও কী সম্ভব?’ অথচ ফাটকাটা লেগে যেত!

ধোনি কিংবদন্তিগাঁথা লিখেছেন। সম্ভবত, তিনি যেভাবে লিখতে চেয়েছেন, ঠিক সেভাবেই লিখেছেন। যেটা আমাদের মগজে কোনদিনও পাণ্ডুলিপি হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি! ‘ধোনিইজম’ কথাটা এজন্যই এতোটা প্রচলিত।

নতুন শতাব্দীর শুরুতে, আমরা যখন কৈশোরে, মানে সদ্য টিনএজে ঢুকেছি, তখন যে নতুন প্রজন্মটি বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন দিনের দামামা বাজিয়েছিল, কিংবা যাদের খেলা দেখে আমরাও খেলার মাঠে টগবগে রক্তে প্রতিপক্ষকে শাসন করতে চেয়েছি, ধোনি একটু পরে হলেও, মূলত সেই প্রজন্মেরই উজ্জ্বল প্রতিনিধি।

১৫-১৬ বছর আগে কে জানত, একদিন এই ধোনিই তাঁর সময়ের উজ্জ্বলতম প্রতিনিধি হিসেবে বিদায় নেবেন!

ঘটনাচক্রে, ধোনিদের যে প্রজন্মটার কথা বলছি, সে প্রজন্মটায় সবচেয়ে বেশি প্রতিভাবান ক্রিকেটার প্রতিনিধিত্ব করেছে ভারতীয় দলে এবং প্রায় সবারই অভিষেক কিংবা ক্যারিয়ারের শুঁয়োপোকা প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বে। এই ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার পরে ভারতীয় দলে ঢুকে ধোনি হয়ে উঠেছিলেন এঁদের অধিনায়ক।

না, শুধু অধিনায়কই হননি তিনি। হয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সফল অধিনায়ক। কত বড় অধিনায়ক ছিলেন, এটা আমরা বুঝব আগামী কিছুদিন পরই। যখন চাপের মধ্যে বিরাট কোহলিকে নির্দেশনা দেওয়ার মতো একজন ধোনি থাকবেন না মাঠে। ফলে, হয়তো বিরাটের চঞ্চল মস্তিষ্ক সেই লোকটির অভাবে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে ‘বাধ্য থাকিবেন’ এবং গ্রেট ব্যাটসম্যান হলেও, বিরাট কোহলি যে তেমন আহামরি কোন অধিনায়ক নন, সেটাও আমরা পাকাপোক্তভাবে বুঝে যাব!

কিন্তু, চাঁদে যেমন কলংক থাকে, সেই কলংক অধিনায়ক ধোনির গায়েও আছে। তাঁর প্রজন্মের কোন বড় ক্রিকেটার (শেভাগ, হরভজন, যুবরাজ, জহির প্রমুখ) মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি৷ এমনকি একটু সিনিয়র ভিভিএস লক্ষ্মণও নন।

এসব আবেগ-টাবেগের ধার ধোনি খুব একটা ধারতেন বলে মনে হয় না! তবুও এই ক্রিকেটাররা ভারতীয় ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটকে যা দিয়েছেন, তাতে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়াটা তাঁদের প্রাপ্য ছিল। ধোনিরও প্রাপ্য ছিল। এমন ক্রিকেটার আবার কবে আসবেন কে জানে! ধোনিও তো একজনই। অথচ, কাকতালীয়ভাবে, তিনিও মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না! একটা পুরো প্রতিভাবান প্রজন্মের কেউই খেলতে খেলতে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারল না, ব্যাপারটা বিস্ময়কর বৈকি!

বাংলাদেশের বিপক্ষে রান আউট দিয়ে শূন্য রানে যে ক্যারিয়ারের ‘শুভ সূচনা’ হয়েছিল, সে ক্যারিয়ারের শেষটাতেও লেখা থাকল – রান আউট! নিজের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মস্তিষ্ক দিয়ে কত কিছু বদলেছেন তিনি, অথচ ‘দ্য গ্রেটেস্ট ফিনিশার এভার’ ক্যারিয়ারের ফিনিশিং টাচটা ‘রান আউট’ থেকে ‘নট আউট’-এ রূপান্তর করার সুযোগই পেলেন না! নাকি নিলেন না?

এটাই হয়তো ‘দ্য’, একদম নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাকি সবাইকে সংশয়ে রেখে গেলেন৷ জীবন কখনও কখনও এমন হয়। তাই, আস্ত একজন ক্রিকেটারের জীবন নয়, জীবনের শিক্ষার জন্যও এই জীবনটির পাঠ নেওয়া জরুরি। দ্য জার্নি অব ধোনি ওয়াজ লারজার দ্যান লাইফ! কনগ্র্যাচুলেশনস টু ইউর গ্রেট ক্যারিয়ার অ্যান্ড লাইফ, দ্য এমএসডি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...