রুবেলের নীরব প্রস্থান

রুবেল হোসেনের বয়স  এখন কাগজে কলমে ৩২-এর ওপর। ফলে, এই সময়ে এসে তাঁর ওপর নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইছে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলে, কার্য্যত বাংলাদেশের হয়ে রুবেল হোসেনের ক্যারিয়ারটা শেষই ধরে নেওয়া যায়।

মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বাদ রেখে, জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার যদি খুঁজতে যাওয়া হয়, তাহলে সবার আগেই সম্ভবত আসবে রুবেল হোসেনের নাম। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গাটা কম।

অভিষেক হয়েছে সেই ২০০৯ সালে। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়ের। তবে, সেই অভিজ্ঞতাটা এই সময়ে এসে খুবই মূল্যহীন। কারণ, জাতীয় দলের বর্তমান সেট আপে কোনো ভাবেই জায়গা হচ্ছে না বাগেরহাটের এই ফাস্ট বোলারের।

লাসিথ মালিঙ্গার মত সিলিং আর্ম অ্যাকশনের কারণে ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন এই রুবেল হোসেন। তবে, এটা ঠিক যে – জাতীয় দলের হয়ে যেকোনো ফরম্যাটেই প্রায় পুরোটা ক্যারিয়ার যাওয়া আসার মধ্যে ছিলেন তিনি।

তাই তো সব ফরম্যাট মিলে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৫৯ টা  ম্যাচ। তাতে, উইকেট ১৯৩ টি। ফলে, অনেক সময় রুবেল হোসেন কার্য্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতো। তবে, এটা ঠিক বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রুবেল হোসেন। বিশেষ করে তাঁর নাম বলতেই ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচের বোলিংয়ের প্রসঙ্গ টানবেন কেউ কেউ, কেউ বা বলবেন ২০১৩ সালে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই হ্যাটট্রিকের কথা।

তবে, ব্যাপার হল এতদিন পুরনো পারফরম্যান্সের স্মৃতিচারণা করে আজকাল আর জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া যায় না। তাই, রুবেল হোসেনের জন্য সময়টা খুবই কঠিন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ তিনটি বিশ্বকাপেই খেলেছেন তিনি। আর জাতীয় দলে শেষবার তাঁকে দেখা গেছে গেল বছর নিউজিল্যান্ড সফরের ম্যাচে।

হ্যাঁ, রুবেল হোসেন খুব বেশিদিন হল, দলে জায়গা হারাননি। তবুও তাঁর জন্য সময়টা কঠিন। কারণ, এই সময়ে এসে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে নতুন একটা উত্থান দেখা যাচ্ছে। তিন ফরম্যাটেই নিজেকে দারুণ মানিয়ে নিয়ে এগোচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইসলামও কম না। তিনিও খেলছেন প্রায় সবগুলো ফরম্যাটেই।

এর বাদে মুস্তাফিজুর রহমান তো আছেনই। তাঁকে টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা স্মরণ করে না বাংলাদেশ। তবে, সাদা বলে তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত সেরা। এর বাদে হাসান মাহমুদ, শহিদুল ইসলামরা আছেন। ইদানিং টেস্টে এবাদত হোসেন কিংবা আবু জায়েদ রাহিরা বেশ ভরসার প্রতীক হয়ে উঠছেন।

ফলে, রুবেল হোসেনকে ফিরতে হলে অতিমানবীয় কোনো বিস্ময়কর পারফরম্যান্সই করতে হবে। শুধু তাই নয়, পাল্লা দিতে হবে তরুণদের সাথেও । এই যেমন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি এতটাই আলোচিত হয়েছেন যে, তাকে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই নেক্সট বিগ থিঙ মনে করা হচ্ছে।

তাই, রুবেল হোসেনের জায়গাটা কোথায়!

আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন চলছে পালাবদলের সময়। চলছে তারুণ্যের জয়োগান। তরুণদের জায়গা দিতে পুরনোদের ছেটে ফেলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো হবে।

রুবেল হোসেনের বয়স  এখন কাগজে কলমে ৩২-এর ওপর। ফলে, এই সময়ে এসে তাঁর ওপর নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইছে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলে, কার্য্যত বাংলাদেশের হয়ে রুবেল হোসেনের ক্যারিয়ারটা শেষই ধরে নেওয়া যায়।

রুবেল হোসেন অবশ্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপিএলে পারফরম করেছেন। হয়তো সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও করবেন। তবে, সব লড়াইয়ের শেষ তো আর জাতীয় দল দিয়ে হয় না। নীরব বিদায় আগেই হয়ে গেছে রুবেলের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...