অজি কন্ডিশনে গ্রেটনেসের অসহায়ত্ব

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বোলারদের মধ্যে পেসাররাই সবচেয়ে বেশি সফল; আর সেটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার উইকেট পেস সহায়ক হওয়ায় স্পিনাররা খুব একটা সুবিধা পাননা বললেই চলে। যার কারণে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্পিনারদের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। তবে টেস্ট ইতিহাসে এমনও অনেক বোলার আছেন - যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বল হাতে সফল হলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ছিলেন সাদামাটা। ক্যারিয়ার জুড়ে দাপট দেখালেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁদের পারফরম্যান্সটা একেবারেই হতশ্রী।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বোলারদের মধ্যে পেসাররাই সবচেয়ে বেশি সফল; আর সেটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার উইকেট পেস সহায়ক হওয়ায় স্পিনাররা খুব একটা সুবিধা পাননা বললেই চলে। যার কারণে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্পিনারদের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। তবে টেস্ট ইতিহাসে এমনও অনেক বোলার আছেন – যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বল হাতে সফল হলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ছিলেন সাদামাটা। ক্যারিয়ার জুড়ে দাপট দেখালেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁদের পারফরম্যান্সটা একেবারেই হতশ্রী।

সাদা পোশাকে বল হাতে সব মিলিয়ে উজ্জ্বল হলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাদামাটা – এমন দশ বোলারকে নিয়েই এই আলোচনা। স্বাভাবিকভাবেই এই তালিকায় স্পিনারদের আধিক্য থাকছে।

  • মুত্তিয়া মুরালিধরন (শ্রীলঙ্কা)

ক্যারিয়ার গড় ২২.৭২, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৭৫.৪১

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজের প্রথম টেস্টে ২২৪ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন মাত্র দুই উইকেট! পার্থে হতশ্রী বোলিংয়ের পর মুরালি সুযোগ পান মেলবোর্ন টেস্টেও। সেই টেস্টে আরও করুণ দশা! উইকেটের দেখাই পেলেন না এই স্পিনার। তৃতীয় টেস্টেই বাদ পড়লেন দল থেকে।

ওই সিরিজে মুরালির বোলিং গড় ছিল ১১৬! অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সব মিলিয়ে মুরালির বোলিং গড় ৭৫.৪১; যেখানে ওভারঅল ক্যারিয়ারে মাত্র ২২.৭২। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই বোলার যিনি টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক – অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর রেকর্ডটা একেবারেই হতাশাজনক।

  • হরভজন সিং (ভারত)

ক্যারিয়ার গড় ৩২.৪৬, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৭৩.২২

ঘরের মাটিতে দুর্দান্ত হলেও দেশের বাইরে নিজের নামের প্রতি তেমন একটা সুবিচার করতে পারেননি হরভজন সিং। বলতে পারেন এশিয়ার বাইরে তিনি খুব বেশি সফলতা পাননি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বোলিং রেকর্ডটা চরম বাজে।

ক্যারিয়ার জুড়ে যেখানে মাত্র ৩২.৪৬ গড়ে উইকেট নিয়েছেন – সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হরভজনের বোলিং গড় ৭৩.২২! ভারতের মাটিতে অজিদের বিপক্ষে মাত্র ২৭ গড়ে নিয়েছেন ৮৬ উইকেট। অপরদিকে, অজিদের মাটিতে ৭৩ গড়ে নেন ৯ উইকেট।

  • ওয়াকার ইউনুস (পাকিস্তান)

ক্যারিয়ার গড় ২৩.৫৬, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৭৩.২২

অস্ট্রেলিয়ায় পেস সহায়ক উইকেট হলেও সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি পাকিস্তানের অন্যতম সেরা পেসার ওয়াকার ইউনিস। ১৯৯৫ সালে সিডনি টেস্ট ও ১৯৯৯ হোবার্ট টেস্টে অজিদের বিপক্ষে বেশ ভালই বল করেছিলেন।

তবুও, টেস্ট ক্যারিয়ারে এশিয়ার বাইরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়াকারের রেকর্ডটা বড্ড বাজে। অজিদের বিপক্ষে ১২ টেস্টে নিয়েছেন ৩০ উইকেট; যার মধ্যে ঘরের মাটিতেই ১৪ উইকেট। অজিদের মাটিতে ১৬ উইকেট নিয়েছেন ৪০.৫০ গড়ে!

  • শোয়েব আখতার (পাকিস্তান)

ক্যারিয়ার গড় ২৫.৬৯, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৪৩.৫০

ক্রিকেট দুনিয়ায় গতিদানব হিসেবেই পরিচিত। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির ডেলিভারির রেকর্ডটাও পাকিস্তানী পেসার শোয়েব আখতারের দখলে। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে প্রতিপক্ষকে ডমিনেট করেছেন এই পেসার। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ছিলেন সাদামাটা।

২৫.৬৯ গড়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে বল করেন; বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আখতারের বোলিং গড় ৪৩.৫০! অস্ট্রেলিয়ার অতিরিক্ত গরমে লম্বা স্পেল করতেও ব্যর্থ হতেন তিনি। অজিদের মাটিতে ৪৩.৫০ গড়ে তিনি শিকার করেন ১৭ উইকেট।

  • ইয়াসির শাহ (পাকিস্তান)

ওভারঅল গড় ৩১.০৮, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৮৯.৫০

সাদা পোশাকে পাকিস্তানের হয়ে লম্বা সময় সার্ভিস দিয়েছেন লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। লেগ স্পিন ভেলকিতে ক্রিকেট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি সফলতার ছাপ রেখেছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনি সফল হতে পারেননি।

টেস্ট ক্যারিয়ারে বোলিং গড় ৩১.০৮ হলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটা ৮৯.৫০। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫ টেস্টে ১০ উইকেট শিকার করেন ইয়াসির। এর মধ্যে দুই ইনিংসে দুইশোর বেশি রানও দেন এই লেগ স্পিনার।

  • গ্রায়েম সোয়ান (ইংল্যান্ড)

ক্যারিয়ার গড় ৩০, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৫২.৫৯

‘একজন অফ স্পিনারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে কঠিন কন্ডিশন নেই।’ – এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন সাবেম ইংলিশ অফ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান। সোয়ানের বোলিং রেকর্ডও তাই বলে। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে সাদা পোশাকে প্রায় ৩০ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উল্টো চিত্র। অজিদের ডেরায় প্রায় ৫৩ গড়ে উইকেট নেন এই ইংলিশ স্পিনার। অজিদের মাটিতে ৮ টেস্টে সোয়ান শিকার করেছেন মাত্র ২২ উইকেট। এর মধ্যে অ্যাডিলেডে একবার পাঁচ উইকেট নেন তিনি।

  • মিশেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)

ক্যারিয়ার গড় ৪৫.৬৩, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ১০৪

রঙিন পোশাকে নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে নিয়মিত মুখ হলেও টেস্ট ফরম্যাটে অনেকটাই অনিয়মিত মিশেল স্যান্টনার। বাঁহাতি এই অফ স্পিনার টেস্ট ক্যারিয়ারে খুব একটা সফল হতে পারেননি।

সাদা পোশাকে বোলিং গড় ৪৫.৬৩। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্যান্টনারের রেকর্ডটা আরও ভয়াবহ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিন টেস্টে মোটে ৩ উইকেট শিকার করেছেন স্যান্টনার! গড় ১০৪!

  • আব্দুল কাদির (পাকিস্তান)

ক্যারিয়ার গড় ৩১.৮২, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৬১

পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার, নিজের সময়ে বিশ্বের সেরাদের একজন ছিলেন। আশির দশকে আব্দুল কাদির ছিলেন অন্যতম সেরা এক স্পিনার। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বল হাতে তিনি দাপট দেখিয়েছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ছিলেন সাদামাটা।

টেস্টে বোলিং গড় ৩১.৮২। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটি ৬১। ৫ টেস্টে অজিদের মাটিতে শিকার করেছেন ১২ উইকেট; এক ইনিংসে পাঁচ উইকেটও নিয়েছেন একবার।

  • স্টিভ হার্মিসন (ইংল্যান্ড)

ক্যারিয়ার গড় ৩১.৮২, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৫০.৮৬

দুর্দান্ত গতি আর বাউন্সে ব্যাটারদের জন্য আতঙ্ক ছিলেন সাবেক ইংলিশ পেসার স্টিভ হার্মিসন। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ছিলেন দুর্দান্ত। সাদা পোশাকে প্রায় ৩২ গড়ে শিকার করেছেন দুইশোর বেশি উইকেট। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দাপট দেখাতে পারেননি এই পেসার। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলেছেন ১০ টেস্ট। এই ১০ টেস্টে ৫০.৮৬ গড়ে শিকার করেছেন ২২ উইকেট।

  • ড্যানি মরিসন (নিউজিল্যান্ড)

ক্যারিয়ার গড় ৩৪.৮৩, অস্ট্রেলিয়ায় গড় ৬১.৪০

ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এক নাম ড্যানি মরিসন। আশির দশকের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের বোলিং বিভাগে অন্যতম সেরা অস্ত্রও ছিলেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রায় ৩৫ গড়ে নিয়েছেন ১৬০ উইকেট। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পারফরম্যান্সটা হতাশাজনক। ৬১.৪০ গড়ে অজিদের ডেরায় সাত টেস্টে শিকার করেছেন মাত্র ১২ উইকেট।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...