সোনালি গোলক ডাকছে যাদের

ফিফা বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারকে দেয়া হয় গোল্ডেন বল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৮২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১২ জন ফুটবলার জিতেছেন এই খেতাব। এখন পর্যন্ত কোনো ফুটবলারই দু’বার এই সোনালি গোলক জিততে পারেননি। সেদিক থেকে এবার সুযোগ আছে লিওনেল মেসির। তিনি কি পারবেন?

ফিফা বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারকে দেয়া হয় গোল্ডেন বল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৮২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১২ জন ফুটবলার জিতেছেন এই খেতাব। এখন পর্যন্ত কোনো ফুটবলারই দু’বার এই সোনালি গোলক জিততে পারেননি। সেদিক থেকে এবার সুযোগ আছে লিওনেল মেসি। তিনি কি পারবেন?

মেসি ছাড়াও দৌঁড়ে আছেন আরও অনেকেই। বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলারের খেতাব জিততে পারেন কারা? – আসুন দেখে নেয়া যাক।

  • লিওনেল মেসি – আর্জেন্টিনা

এবারের বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। অনেক সমালোচকরাই ভাবেন ডিয়েগো ম্যারাডোনার সমপর্যায়ে যেতে বিশ্বকাপ জিততে হবে ক্ষুদে জাদুকরকে। লিওনেল মেসি তাই মুখিয়ে থাকবেন বিশ্বকাপ জিততে।

প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে প্রথম মৌসুমে তেমন ভালো করতে না পারলেও এবারের মৌসুমেই ফিরে এসেছেন পুরনো ফর্মে। পেনাল্টি ছাড়া ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে প্রতি ৯০ মিনিটে তাঁর চেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখতে পারেননি কেউই। ইতোমধ্যেই ১২ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১০টি।

কেবল গোল করা কিংবা করানো নয়, মাঠে মেসি থাকা মানেই প্রতিপক্ষের জন্য দুশ্চিন্তার।

এছাড়া লিওনেল স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনার জার্সিতেও তিনি আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। দলকে কোপা আমেরিকা জেতানোর পাশাপাশি নিজে জিতেছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা(যৌথভাবে লুইস দিয়াস) এবং সেরা ফুটবলারের পুরষ্কার। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর এবারের বিশ্বকাপেও সেরা ফুটবলার হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকবেন লিওনেল মেসি।

  • নেইমার – ব্রাজিল

২০১৮ বিশ্বকাপে নেইমার যতটা না ফুটবলশৈলীর জন্য আলোচিত ছিলেন, তার চাইতে বেশি সমালোচিত হন মাঠে তাঁর অভিনয়ের জন্য। এবারের বিশ্বকাপে নেইমার চাইবেন তাঁর ‘ডাইভার’ তকমা ঘুচিয়ে ফেলার।

নি:সন্দেহে বিশ্বের সেরা ফুটবল তারকাদের একজন নেইমার। ফলাফলের চাইতে বরং দর্শকদের আনন্দ দেয়াতেই তাঁর যত আনন্দ। এই মৌসুমে পিএসজির হয়ে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, সরাসরি অবদান রেখেছেন ১৩ গোলে। লিগা ওয়ানে তাঁর চাইতে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছেন মাত্র দুজন ফুটবলার।

জাতীয় দলে এবার খানিকটা নির্ভার হয়ে খেলতে পারবেন নেইমার। আন্তোনি, ভিনিসিয়াস, পাকুয়েতারা থাকায় চাপমুক্ত হয়ে নিজের সেরা ফুটবলটাই খেলতে চাইবেন তিনি। আর মাত্র তিন গোল করলেই পেলেকে ছাপিয়ে ব্রাজিলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন নেইমার। তিনি চাইবেন কাতার বিশ্বকাপেই পেলেকে পেছনে ফেলতে।

  • কেভিন ডি ব্রুইনা – বেলজিয়াম

সোনালী প্রজন্ম হিসেবে আবির্ভাব হলেও বেলজিয়ামকে কোনো শিরোপা জেতাতে পারেননি কেভিন ডি ব্রুইনারা। এবারের বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে একত্রে তাঁদের শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে কেভিন ডি ব্রুইনাকেই।

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এই মৌসুমে দুরন্ত ফর্মে আছেন এই আক্রমণাত্নক মিডফিল্ডার। গত মৌসুমে পুরোটা সময় খেলে যেখানে করেছিলেন আট অ্যাসিস্ট, সেখানে এই মৌসুমে মাত্র ১৩ ম্যাচেই করে ফেলেছেন নয় অ্যাসিস্ট। এখনও পর্যন্ত ৪৭ বার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন এই তারকা, ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের ফুটবলারদের মাঝে যেটা সর্বোচ্চ।

তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হল সিটিতে ডি ব্রুইনার পাসগুলোকে গোলে রুপান্তর করার জন্য একজন আর্লিং হ্যালান্ড ছিলেন, কিন্তু তিনি বেলজিয়ামে পাবেন রোমেলু লুকাকুকে। সামর্থ্য থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে লুকাকুর ফর্মটা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। তবে জাতীয় দলের হয়ে লুকাকু বরাবরই ভয়ংকর। মূলত এই দুজনের জুটির উপরেই নির্ভর করবে বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের ভবিষ্যত।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে – ফ্রান্স

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। কাতার বিশ্বকাপ তাঁর কাছে সর্বকালের অন্যতম সেরার কাতারে স্থান নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

রিয়াল মাদ্রিদকে ঘিরে নানা গুঞ্জন থাকলেও এবারের মৌসুমেও রয়ে গিয়েছেন পুরনো ক্লাব পিএসজিতে। মাঠের বাইরে যাই হোক না কেন, মাঠের পারফরম্যান্সে কখনও ভাটা পড়েনি এমবাপ্পের। দুর্দান্ত গতি আর ফিনিশিং দিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের নাকাল করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের মাঝে কেবল মেসি এবং লেওয়ানদোস্কির গোল-অ্যাসিস্ট হার এমবাপ্পের চাইতে বেশি। ক্লাবে রয়েছেন দারুণ ফর্মে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এর মাঝেই করে ফেলেছেন সাত গোল।

ক্লাবের ফর্মটা জাতীয় দলে টেনে নিতে পারলে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপ ধরে রাখার রেকর্ড নাম লেখানোর দৌঁড়ে এগিয়ে যাবে ফ্রান্স। ফরাসি সমর্থকরাও হয়তো তেমনটাই চাইবেন।

  • ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো – পর্তুগাল

২০২৬ বিশ্বকাপের সময় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বয়স হবে ৪১ বছর। সুতরাং অভূতপূর্ব কিছু না ঘটলে কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। তাছাড়া বিশ্বকাপের আগে পিয়ার্স মরগ্যানে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। রোনালদো তাই তাতিয়ে থাকবেন কাতার বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিতে।

বিশ্বকাপে আর মাত্র দুই গোল করতে পারলেই ইউসেবিও’র নয় গোলকে ছাপিয়ে বিশ্বকাপে পর্তুগালের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন রোনালদো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে বর্তমান ফর্ম অনুযায়ী অবশ্য দুই গোল করতেই কষ্ট হবার কথা তাঁর। তবুও নামটা রোনালদো বলেই হয়তো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এই মৌসুমে ফর্মে না থাকলেও বিগত মৌসুমে ২৪ গোল করেছিলেন রেড ডেভিলদের হয়ে। গত মাসেই পেরিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৭০০ গোলের মাইলফলক। নিজের শেষ বিশ্বকাপটা তাই আপন মহিমায় রাঙিয়েই শেষ করতে চাইবেন এই তারকা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...