সময়ের দোলাচলে, একদিন সব নক্ষত্র নিভে যায়। এবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও সেই পথে। তাকে আর দেখা যাবে না লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের সাইলেন্ট কিলার হয়ে মাঠে নামতে। ১৭ বছরের দীর্ঘ পথচলা শেষে, ভারতের মাটিতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অবশেষে একজন ফিনিশার হিসেবে তার ক্যারিয়াররের সমাপ্তি ঘটালেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহকে কেন “ফিনিশার” বলা হয়, তা নিদাহাস ট্রফির সেই মহাকাব্যিক মুহূর্তই প্রমাণ করে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইসুরু উদানার বলে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে মারা সেই ছক্কা ছিলো তার ফিনিশিং দক্ষতার সেরা উদাহরণ। প্রতিপক্ষের বোলিং কিংবা ম্যাচের চাপে কখনও কোন ঠাসা হননি তিনি। সাইলেন্ট কিলার ছিলেন ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করায় দক্ষ।
টি-টোয়েন্টিতে ১৩৯টি ম্যাচে ২৩৯৫ রান, ৮টি অর্ধশতক এবং ১১৭.৭৪ স্ট্রাইক রেট। বল হাতেও ৪০টি উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার। কিন্তু পরিসংখ্যান কি তার পুরো গল্পটা বলে? নাহ। তার নির্ভরযোগ্যতা আর অবদান এসব সংখ্যার বাইরেও অনেক বেশি।
তার সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিলো অপরাজিত ৬৪ রানের যা খেলেছিলেন ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দ্বিতীয়টি ৬২ রানের যা ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ছিলো ৫৪ রানের। তার ক্যারিয়ারে তিনি তিনবার আউট হয়েছেন এই ৫৪ রানে। প্রথমবার ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং এরপর ২০২৪ সালে এসে দুবার ।
তবে, নিদাহাস ট্রফির সেই মুহূর্তের মতো মাহমুদউল্লাহকে হয়তো আর ফিরে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এটি অস্বীকার করা যায় না যে, মাহমুদউল্লাহর ফিনিশিংয়ে যেমন অনেক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, তেমনি কিছু হারও এসেছে।
মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এ নিয়ে বেশ কিছু বিতর্ক হয়েছিলো। তিনি কি দলের বোঝা হয়ে গিয়েছিলেন? ফিনিশার হিসেবে তার দক্ষতা কি হারিয়ে যাচ্ছিল? তার সেরা কয়েকটি ইনিংস বের করতে গেলেই হয়তো যে কেউ উপলব্ধি করবেন।
টেস্ট ক্রিকেট থেকেও মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিয়েছিলেন নি:শব্দে, কাউকে কিছু না জানিয়ে। কোনো ধুমধাম ছিলো না, কোনো বিদায়ী ম্যাচ ছিলো না। কিন্তু সতীর্থদের গার্ড অব অনার তার প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে থাকবে।
একরাশ আক্ষেপ বা ক্ষোভ নয়, বিদায় মুহূর্তেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন নিজের মতো—নি:শব্দ, নির্বিকার। সাইলেন্ট কিলার হিসেবে পরিচিত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার বিদায়ের মুহূর্তেও শান্তভাবে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ!’
কোনো আবেগঘন বক্তৃতা নয়, কোনো নাটকীয়তা নয়, ঠিক যেমন মাঠে চাপের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখতেন, তেমনি নিজের দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারেরও ইতি টানলেন সেই নীরব দক্ষতায়। ফিনিশার তকমার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যিনি বহু ম্যাচে বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন, আজ নিজের ক্যারিয়ারকেও একইভাবে ফিনিশ করে দিলেন—অবিচল, নীরবে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরা এক বিদায়ে।