ব্রিটানিয়া স্টেডিয়ামের এক শীতল শনিবার বিকেল। গ্যালারিতে স্টোক সিটির ভক্তরা ভিড় জমিয়েছে, চোখে মুখে উত্তেজনা। কারণ, আজ তারা অপেক্ষা করছে এক বিশেষ দৃশ্যের জন্য: ররি ডেলাপের সেই বিখ্যাত থ্রো-ইন।
প্রিমিয়ার লিগে তারকারা যেখানে গোল করার পায়ের কারিকুরিতে মুগ্ধতা ছড়ায়, সেখানে ররি ডেলাপ অন্য রকম। তার অস্ত্র ছিল হাতের শক্তি—বলটিকে প্রায় ৩০ মিটার দূরে ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষমতা, যা প্রতিপক্ষের জন্য একেবারে ভয়ংকর একটি কৌশল হয়ে উঠেছিল।
২০০৮-০৯ মৌসুম ছিল ডেলাপের জন্য জাদুকরী এক সময়। তার অসাধারণ থ্রো-ইন থেকে স্টোক সিটি প্রায় ৮টি সরাসরি গোল করেছিল, যা তাদের লিগে টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রায় ৪০% থ্রো প্রতিপক্ষের বক্সে পড়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতো, যা সহজেই গোলের সুযোগে পরিণত হত।
এদিনও ডেলাপ বল হাতে নিলেন। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা জানে এই থ্রো’র ক্ষমতা, তাই তারা কর্নারের মত সজাগ-ভাবে রক্ষণ সাজিয়েছে। ডেলাপ শান্তভাবে সাইডলাইনের দিকে এগিয়ে গেলেন, বলের গ্রিপ ঠিক করতে নিজের জার্সিতে মুছে নিলেন।
তারপর এক সংক্ষিপ্ত দৌড়ে বলটি পেছনের দিকে টেনে নিয়ে এমন শক্তি দিয়ে ছুঁড়লেন যে তা প্রায় শূন্যে ভাসতে ভাসতে ডিফেন্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল। বলটি সরাসরি বক্সে নেমে এল রিকার্ডো ফুলারের সামনে।
ফুলার লাফিয়ে উঠলেন, তার শরীর আকাশে ভাঁজ হলো, আর মাথা দিয়ে বলটিকে এমন জোরে গোলে ঠেলে দিলেন যে, গ্যালারি যেন আনন্দে ফেটে পড়ল। আরও একটি গোল—ডেলাপের থ্রো-ইন থেকে!
ডেলাপের এই অসাধারণ থ্রো-ইন প্রিমিয়ার লিগের প্রতিপক্ষ দলগুলোকে নতুন কৌশল নিতে বাধ্য করে। কিছু দল তার থ্রো-ইন প্রতিরোধ করতে আলাদা অনুশীলন শুরু করে। ধীরে ধীরে ডেলাপের থ্রো-ইন প্রিমিয়ার লিগের কিংবদন্তি কৌশলে পরিণত হয়। এমনকি আজও, এই থ্রো’র গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।
ররি ডেলাপ তার এই সাধারণ থ্রো-ইনকে এক শিল্পে পরিণত করেছিলেন, আর ফুটবল ইতিহাসে তিনি নিজের জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছিলেন।