সাদা পোশাকের শেষ বল। না, ব্যাট হাতে নয় – ইমরুল কায়েস সাগরের শেষটা হল বল হাতে। শেষ মুহূর্তেও তিনি ফ্রেমে, সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু তিনি। শেষ বলটা করলেন, জিতে গেল প্রতিপক্ষ। তিনি কখনওই তেমন একটা বোলিং করেন না। কিন্তু, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের বিদায়ী ম্যাচে কেন যেন বল হাতে নিলেন।
যেন, শেষবারের মত নিজেকে উজার করে দেওয়ার একটা শেষ চেষ্টা। সেই চেষ্টায় শেষ ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তেও তিনি থাকলেন। খেলা শেষ হল, সতীর্থ ও প্রতিপক্ষরা একে একে হাত মেলালেন ইমরুল কায়েসের সাথে। ক্রিকেটের লঙ্গার ভার্সনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় বলে দিলেন তিনি।
শেষটা হল সতীর্থদের কাঁধে চড়ে। এনামুল হক বিজয় আর শেখ পারভেজ জীবনের কাঁধে চড়ে ফিরলেন ড্রেসিংরুম পর্যন্ত। হাত মেলালেন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। ইমরুলের বিদায় দেখতে আসা তুষার ইমরানও তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন।
ব্যস, শেষ হয়ে গেল। শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইমরুল কায়েস অধ্যায়। অন্তত, সাদা পোশাকে তো বটেই। পেছনে পড়ে থাকল আট হাজার ছুঁইছুঁই রান আর ২০ টি সেঞ্চুরির গল্প। আরও থাকল অসংখ্য পাওয়া না পাওয়ার বেদনা।
শেষ দু’টো দিনে তিনি যতটা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, এতটা আগ্রহ গোটা ক্যারিয়ার জুড়েই কোনো দিন কেউ তাকে নিয়ে দেখায়নি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এতটাই অনাদরের সন্তান তিনি। আদর বা সমাদর পাওয়ার জন্য কখনওই তিনি নিজেকে যোগ্য দাবিদার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি!
তাঁকে কিংবদন্তি বলা যাবে না, বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ২০ বা ৪০ ক্রিকেটারের নাম নিলেও তিনি থাকবেন না। তবে, ইমরুল কায়েস একটা ম্যাটার ছিলেন। তাঁর নামটা নিলে একটা দু:খ জাগানিয়া গানের সুর উঠত। একটা অভাব, গ্লানি, গঞ্জনা বা আক্ষেপের গন্ধ পাওয়া যেত।
ঠিক যেন, মধ্যবিত্ত সংসারের সেই আন্ডাররেটেড ছেলেটার গল্প। যেখানে সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে অনেক গালগল্প হতে পারে, আর কিছু না। বিদায় বেলাতেও ইমরুল কায়েসের সাথে এই আক্ষেপের গালগল্প যোগ হল। যিনি পারতেন বটে, কিন্তু কখনওই নিজের সমসাময়িকদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে পারতেন না।
ক্লাসের সেই মিডিওকার ছেলেটার শেষটাও হল মিডিওকরই। শেষ ম্যাচের দুই ইনিংস মিলিয়ে করেন মোটে ১৭ রান। এই ১৭ রান দিয়ে আর ১৭ বছরের সংগ্রামকে প্রকাশ করা যায়!