প্রথমে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে বড় রানের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন ওপেনার রেগিস চাকাভা। এর পর শেষের দিকে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান রায়ান বার্ল। এই দু’জনের ব্যাটেই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ২৯৯ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে এর বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। তবে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ৩১৩ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এছাড়া আগের ম্যাচেও ২৪১ রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ করেছিল ২৭৬ রান। তাই এত রান তাড়া করে জিম্বাবুয়েকে হোয়াটওয়াশ করতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে ব্যাটসম্যানদের।
সিরিজের আগের দুই ম্যাচেও দারুণ ব্যাট করা চাকাভার আক্ষেপ ছিল উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে না পারার। তবে আজ প্রথম বারের মত ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়েই দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তিনি। খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ৮৪ রানের ইনিংস। আর শেষে দিকে ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করেন বার্ল। এছাড়া
সিকান্দার রাজা করেন ৫৭ রান।
জিম্বাবুয়ে বড় সংগ্রহ দাঁড় করালেও আজ বল হাতে অনেক দিন পর নিজকে মেলে ধরেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রায় আড়াই বছর পর ওয়ানডেতে উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তিন বছর পর নিজের বোলিং কোটার দশ ওভার পূরণ করে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট শিকার করেন এই স্পিনার। এছাড়া তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
তবে বড় সংগ্রহ পেলেও টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার রেগিস চাকাভা ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি। উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে মাত্র নয় ওভারেই পাঁচ বোলার ব্যবহার করে বাংলাদেশ। নবম ওভারে সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে এনে প্রথম সাফল্য পায় সফরকারীরা। সাকিবের মিডল স্টাম্পের লেংথ বল সুইপ করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মারুমানি।
দলীয় ৩৬ রানে ১৯ বলে ৮ রান করে মারুমানি ফিরে যাওয়ার পর ব্রেন্ডন টেইলরের সাথে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন চাকাভা। তবে এই জুটিকেও বেশি দূর যেতে দেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই স্পিনারের অফ স্টাম্পের সাধারণ এক বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে তামিমের হাত ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান টেইলর। ২৮ রান করে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ফিরে গেলে ভাঙে ৪২ রানের জুটি।
৭৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেণ চাকাভা ও ডিয়ন মেয়ার্স। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৭১ রান। এই জুটি ভাঙতে মারিয়া তামিম আবার আক্রমণে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহকে। অধিনায়ককে হতাশ করেননি তিনি। ক্রমেই বিপদজনক হয়ে ওঠা জুটি অভিজ্ঞ এই বোলার। তারঁ একটু জোরের উপর করা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান মেয়ার্স।
৩৮ বলে ৩৪ রান করে মেয়ার্স ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি ওয়েসলি মাধেভারা। সিরিজে প্রথম বারের মত খেলতে নামা মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। এই পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে শর্ট মিড উইকেটে সাকিবের কাছে ক্যাচ দিয়ে ৪ বলে ৩ রান করে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান।
এক প্রান্তে উইকেটে থিতু হয়ে সবাই আউট হলেও অপর প্রান্ত থেকে দলকে একাই বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন চাকাভা। নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ানডেতে আগের ক্যারিয়ার সেরা ৭৮ রান অতিক্রম করার পরেই মনোযোগ হারান এই ওপেনার। তাসকিন আহমেদের লাইনে থাকা ফুল লেংথের বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
৯১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৪ রান করে চাকাভা ফিরে যাওয়ার পরেও রানের গতি থেমে থাকেনি জিম্বাবুয়ের। রাজা ও বার্লের ১১২ রানের জুটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারের তিন বল আগে অলআউট হয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। রাজা ৫৭ রান ও বার্ল ৫৯ রান করেন।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া দুটি উইকেট পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও একটি করে উইকেট পেয়েছরন সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে: ২৯৮/১০ (ওভার: ৪৯.৩; চাকাভা- ৮৪, মারুমানি- ৮, টেইলর- ২৮, মেয়ার্স- ৩৪, রাজা-৫৭, বার্ল- ৫৯) (মাহমুদউল্লাহ- ১০-০-৪৫-২, সাকিব- ১০-০-৪৬-২, সাইফউদ্দিন- ৮-০-৩৭-৩, মুস্তাফিজুর- ৯.৩-০-৫৭-৩)