শিকড়ে ফিরতেই হবে

শিকড়ে ফিরতেই হবে। যে কোনো ভাবেই হোক। তা না হলে লম্বা দৌড়ে সাফল‍্যের কথা ভুলে যান। গানের ক্ষেত্রে একটা কথা চালু আছে যে, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ভালো ভাবে জানলে আপনি যে কোনো গানই গাইতে পারবেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ও কথাটা সত‍্যি। মনে রাখবেন , বীরেন্দ্র শেবাগ নামে আধুনিক ক্রিকেটের বিস্ময় যে ভদ্রলোক তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই উঠেছিলেন।

আপনি ক্রিকেটে খুব উৎসাহী, বিশেষ করে ভারতের ক্রিকেটে? ক্রিকেটের সব পরিসংখ্যান আপনার নখদর্পণে? ক্রিকেট আপনার প্রাণ? খুব ভালো কথা। আচ্ছা আপনি অমরজিৎ কেপি এর নাম শুনেছেন? অথবা সুরেন্দ্র ভাবে? শান্তনু সুগেকার? কেপি ভাস্কর ? বান্টু সিং?

আরো অনেক অনেক নাম আছে। সেগুলো আর বললাম না। এদের কারোর, কারোর নাম আপনি হয়তো শুনেছেন , কারোর নাম শোনেননি। আপনি শুনলেও অন‍্যরা হয়তো শোনেন নি। এরা প্রায় কেউই ভারতের হয়ে কখনো খেলেন নি। তাই এদের নাম জানার তাগিদ আপনি বা আমি অনুভব করিনি সেভাবে। কিন্তু এরা ভারতীয় ক্রিকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে গেছেন এক সময়ে। আপনার ভ্রু কুঁচকে গেলো তো ?

তাহলে ব‍্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। এঁরা সবাই ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের এক একজন মায়েস্ত্রো ছিলেন বলা যায় । ভারতীয় দলে সু্যোগ পান নি হয়তো কিন্তু সব সময় মূল দলে সুযোগ পাওয়া প্লেয়ার রা চাপে থেকেছেন যে, আমি যদি রান না পাই তাহলে দেশে এরা সব বসে আছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের বাঘ , শয়ে শয়ে রান করছে প্রতিবছর বা ঝুড়ি ঝুড়ি উইকেট তুলছে।

অমরজিৎ কেপি। দীর্ঘদিন রঞ্জির সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীর রেকর্ড টি তাঁর ঝুলিতে ছিল, পরে যা অমল মজুমদারের দখলে যায়, সেখান থেকে ওয়াসিম জাফরের। অথবা সরকার তলোয়ার। হরিয়ানার ডানহাতি অফস্পিনার। রঘুরাম ভাট, কর্ণাটকের বাঁ হাতি স্পিনার (বোধহয় ভারতের হয়ে একটা দুটো ম‍্যাচ খেলেছেন)। বাংলার উৎপল ও মাত্র তিনটে ওয়ান ডে ম‍্যাচে সুযোগ পেয়েই বাতিল হন। এঁরা সবাই রঞ্জি, দুলীপ , ইরানী বা দেওধর ট্রফি খেলে উঠে এসেছেন । এবং এরা ভারতীয় ক্রিকেটের ভিতটাকে ধরে রেখেছিলেন।

আমি আই পি এল বা টি টোয়েন্টির বিরোধী নয় কখনোই। কিন্তু আপনাকে একটা জিনিস মানতেই হবে যে, কুড়ি ওভারের ক্রিকেট খেলে আর যাই হোক সারা দিন উইকেটে টিকে থাকার টেম্পারমেন্ট তৈরি হয় না। সেটা একমাত্র চার বা পাঁচ দিনের রণজি বা দলীপ খেলেই সম্ভব। গত বছর রঞ্জি ট্রফি করা সম্ভব হয়নি। এ বছরেও সম্ভব হবে নাই ধরে নেওয়া যায়।

তা হলে টেস্টে ভারত হেরে গেলে ‘হায়, হায় এ কী হল!’ আওয়াজ ও আর তুলবেন না। আর আইপিএল হোক। আমি , আপনি সন্ধ্যা বেলায় জমিয়ে সে খেলা দেখি বাড়িতে বসি। ওয়ান ডে বা টি টোয়েন্টি তে ভারত জিতলে সেলিব্রেট করবো। কিন্তু টেস্টে ভালো কিছুর আশা করবেন না। কারণ মনে রাখবেন ঘরোয়া চার বা পাঁচ দিনের ক্রিকেট চরম ভাবে অবহেলিত এ দেশে। করোনা সে অবহেলায় ঘৃতাহুতি করেছে ।

শিকড়ে ফিরতেই হবে। যে কোনো ভাবেই হোক। তা না হলে লম্বা দৌড়ে সাফল‍্যের কথা ভুলে যান। গানের ক্ষেত্রে একটা কথা চালু আছে যে, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ভালো ভাবে জানলে আপনি যে কোনো গানই গাইতে পারবেন। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ও কথাটা সত‍্যি। মনে রাখবেন, বীরেন্দ্র শেবাগ নামে আধুনিক ক্রিকেটের বিস্ময় যে ভদ্রলোক তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই উঠেছিলেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...