তাদের বর্ননায় সেই প্রতিরোধ

এই দিনটি ছিলো আধুনিক টেস্ট ক্রিকেট সেরা একটি দিন। ব্যাটিংয়ের সময় তারা দুইজনই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। টেস্ট ম্যাচটি ড্র করাটা ছিলো তাদের জন্য বিশেষ কিছু। ম্যাচ ড্র হওয়ার পরও তারা বুঝতে পারেননি কিভাবে এটা হলো। এমনকি উৎযাপন করার পরও তারা বুঝতে পারেননি।

সিডনি টেস্টে যৌথভাবে রবিচন্দন অশ্বিন এবং হনুমা বিহারিকে ম্যাচের প্রধান চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তাদের দুইজনের চীনের প্রাচীরের মত প্রতিরোধ ইতিমধ্যে আলোচনার ব্যাপার হয়েছে। আর এই প্রতিরোধে জয় বঞ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া এবং সিরিজে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিহারি এবং অশ্বিন মাত্র ৬২ রানে জুটি গড়েন। কিন্তু এই জুটি গড়তে তারা মোকাবিলা করেন ২৫৬ বল। যা কিনা চতুর্থ ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্ব্বোচ্চ বল মোকাবিলা করার রেকর্ড। ২৫৬ বলের মধ্যে দুইজনই সমান ১২৮ টি করে বল মোকাবিলা করেন। ৭ নাম্বার পজিশনে ব্যাটিং করতে নেমে অশ্বিন ভারতের হয়ে চতুর্থ ইনিংসে সর্ব্বোচ্চ বল মোকাবিলা করার রেকর্ড গড়েন।

বিহারি এবং অশ্বিন জুটির দুইজনই ইঞ্জুরি নিয়ে পুরো ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হ্যামস্ট্রিংয়ের ইঞ্জুরিতে পড়েন বিহারি। ইঞ্জুরি সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয় বোলারদের গোলার মত ছুটে আসা বল তাদের কাউকেই পরাজিত করতে পারেনি। তারা তাদের ব্যাটিংয়ে ছিলেন অবিচল।

এই নাটকীয় প্রতিরোধের পর বিসিসিআই টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অশ্বিন বলেছেন, এই দিনটি ছিলো আধুনিক টেস্ট ক্রিকেট সেরা একটি দিন। ব্যাটিংয়ের সময় তারা দুইজনই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। টেস্ট ম্যাচটি ড্র করাটা ছিলো তাদের জন্য বিশেষ কিছু। ম্যাচ ড্র হওয়ার পরও তারা বুঝতে পারেননি কিভাবে এটা হলো। এমনকি উৎযাপন করার পরও তারা বুঝতে পারেননি।

ম্যাচের পর তারা ড্রেসিংরুমের বাইরে বসে তারা খুব ক্লান্ত ছিলেন। কিন্তু ম্যাচের ফলাফল তাদেরকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখছিলো। তিনি আরো বলছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় বিহারির সাথে আমার খুব ভালো বোঝাপড়া হচ্ছিলো। এই জুটিতে বেশি রান করার চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকাটাই আমাদের জন্য ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেক স্পেলে নির্দিষ্ট বোলারকে নির্দিষ্টভাবে খেলতে চেয়েছিলাম।’

এই কৌশলে তারা সফল হয়েছেন। তারা দুইজনের কেউই নিজেরদের ইঞ্জুরি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। বরং, তারা ম্যাচ নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন।

অশ্বিন বলেন, ‘বিহারি দারুন খেলেছে এবং দারুনভাবে বোলারদেরকে মোকাবিলা করেছে।’

সিডনিতে বিহারি তার ১২তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল। আগের ৫ ইনিংসে ভালো করতে না পারায় তিনি চাপের মধ্যে ছিলেন। হানুমা বিহারি বলছিলেন, ‘টেস্টের পঞ্চম দিনে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করাটা স্বপ্নের মত। আমি নিজের ব্যাটিং এবং ডেডিকেশন নিয়ে সন্তুষ্ট। অশ্বিন আমাকে বড় ভাইয়ের মত সমর্থন দিয়েছে। আমি যখন মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম, তখন অশ্বিন আমাকে যতটুকু সম্ভব বলের উপর নজর রেখে খেলতে বলেছেন।’

ম্যাচ ড্র করার জন্য ভারত চতুর্থ ইনিংসে ১৩০ ওভার ব্যাটিং করেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ম্যাচ ড্র করার জন্য ১৩০ কিংবা এর চেয়ে বেশি ওভার ব্যাটিং করার ষষ্ঠ ঘটনা এটা। এর আগে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩০ ওভার ব্যাটিং করেছিলো।

সেই ম্যাচে ডু-প্লেসিস ৩৭৬ বল মোকাবিলা করে ১১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। অশ্বিন জানান, আগের দিন রাতে ডু-প্লেসিসের সেই ইনিংসের কথা তিনি স্মরণ করছিলেন এবং নিজেকে একটি সুযোগ দিয়ে ওইরকম ইনিংস খেলতে চেয়েছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে অশ্বিনের আত্মবিশ্বাসের কমতি হয়নি। প্রথম দিকে অশ্বিন অস্ট্রেলিয় পেসারদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে চেস্ট গার্ড পড়ে খেলা শুরু করেন। কারণ অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা শরীর বরাবর বল করে যাচ্ছিলেন। ইনিংসের শুরুতে যখন অশ্বিন লায়নের স্পিন খেলছিলেন, তিনি পিছনে ব্যথা অনুভব করেন। তাই তিনি হানুমা বিহারিকে স্ট্রাইকে চাচ্ছিলেন।  যেন বিহারি লায়নের বিপক্ষে খেলে। আর অশ্বিন কামিন্সকে মোকাবিলা করতে চাচ্ছিলেন।

এক স্পেলের মাঝখানে, বিহারি এবং অশ্বিন দুইজনই কামিন্সের ঝড়ের গতির বেগের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু তারা ভাগ্যবান। কারণ তারা যেকোনো ভাবেই কামিন্সের বল মোকাবিলা করতে পেরেছেন।

হ্যামস্ট্রিংয়ের ইঞ্জুরির পর, বিহারি বুঝতে পেরেছিলেন তিনি শেষ টেস্ট খেলতে পারবেন না। এমনকি তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষের সিরিজও মিস করতে পারেন। এটা বোঝার পরও হানুমা বিহারি সিডনি টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছেন। বিহারি বলছিলেন, ‘এই টেস্ট ড্র করাটা অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। আমি যদি ইঞ্জুরিতে না পড়তাম এবং পূজারা যদি আউট না হত, তাহলে ম্যাচের ফলাফল অবিশ্বাস্য কিছু হতে পারতো। ম্যাচ ড্র করে ১০ পয়েন্ট পাওয়াটাও এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...