টাইগারদের সম্পদের ফিরিস্তি

গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ। এখনও বড় দল হয়ে উঠতে না পারলেও সে দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে টাইগাররা। ফলে বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য আকৃষ্ট হয়েছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো, নিজেদের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন তারকা সব ক্রিকেটারদের।

গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ। এখনও বড় দল হয়ে উঠতে না পারলেও সে দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে টাইগাররা। ফলে বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য আকৃষ্ট হয়েছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো, নিজেদের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন তারকা সব ক্রিকেটারদের। আসুন দেখে নেয়া যাক সর্বোচ্চ আয়কারী দশ বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সম্পর্কে।

  • মমিনুল হক সৌরভ

লাল  বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মমিনুল হক সৌরভ আছেন তালিকার দশ নম্বরে। অধিনায়কত্ব হারানো কিংবা মাঝে ফর্মের টানাপোড়েন গেলেও বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে এখনও দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। জাতীয় দলের হয়ে এখনও পর্যন্ত ১০০ ইনিংস খেলে প্রায় ৩৭.৫৪ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৫২৯ রান। লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ্চ ১১ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।

২০২২ সালের মার্চে টেস্টের জন্য বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় আসেন মমিনুল। প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য তিনি পান প্রায় ছয় লক্ষ টাকা করে। এছাড়া সূত্রমতে ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটারের মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। তবে কোনো ব্র্যান্ড কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে মমিনুলের সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

  • রুবেল হোসেন

বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার রুবেল হোসেন। বিশ্বকাপে  ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক জয় এনে দেয়ার অন্যতম রূপকার ছিলেন এই পেসার। তাঁর চার উইকেটে ভর করেই সেবার নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। যদিও ২০২১ সালের পরে আর জাতীয় দলের হয়ে ডাক পাননি তিনি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মোট উইকেট সংখ্যা ১৯৩।

৩২ বছর বয়সী এই পেসারের মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। যদিও রুবেল এই মূহুর্তে কোনো ফরম্যাটেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। এ বছরের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এই ক্রিকেটার।

  • তাসকিন আহমেদ

কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলে দেয়া যায় বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা পেসারের নাম তাসকিন আহমেদ। ২০১৪ সালে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হলেও টেস্টে অভিষেক আরও তিন বছর পরে। এখনও পর্যন্ত ১০৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নেমে তাঁর সংগ্রহ ১২০ উইকেট।তাসকিনের মোট সম্পত্তির মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৭.৫কোটি টাকা। তিনি সেই পাঁচজন ক্রিকেটারদের মাঝে একজন, যারা কিনা তিন ফরম্যাটেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন।

বিসিবি থেকে একদিনের ম্যাচ প্রতি তিন লক্ষ টাকা এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ প্রতি দুই লক্ষ টাকা করে পেয়ে থাকেন এই তারকা পেসার। বিলাসবহুল বাড়ি ছাড়াও গাড়ি এবং মোটর বাইক কেনার প্রতি নেশা আছে তাসকিনের। ইয়ামাহা, র নেশন, ব্র্যাক ব্যাংক, ওপো, প্রাণ, দুরন্ত বাইকের বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি।

  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ 

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ক্রিকেটারের নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দশ হাজার রানের পাশাপাশি শিকার করেছেন শতাধিক উইকেট। অতীতে তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

টেস্ট থেকে অবসর নেয়ায় বর্তমানে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রয়েছেন তিনি। বিসিবি থেকে একদিনের ম্যাচ প্রতি তিন লক্ষ টাকা এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ প্রতি দুই লক্ষ টাকা করে পেয়ে থাকেন এই বর্ষীয়ান তারকা। স্পোর্টসসালার তথ্যমতে মাহমুদউল্লাহর মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। নাইকি, পেপসি, স্যামসাংয়ের মত বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশি অ্যাম্বাসেডর তিনি।  

  • মুস্তাফিজুর রহমান

বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকেই হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তাঁর দুর্বোধ্য স্লোয়ার আর কাটারে নাস্তানাবুদ হয়েছেন বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যানরা। এরই মাঝে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের সংগ্রহ ২৫০ উইকেট। 

দ্য ফিজ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এই ক্রিকেটারের আর্থিক সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। বিসিবির বর্তমান কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সাদা বলের ক্রিকেটের চুক্তিতে আছেন তিনি। এছাড়াও আইপিএলের দল দিল্লি ক্যাপিটালস থেকে পেয়েছেন দুই কোটি ভারতীয় রুপি। অতীতে কোকাকোলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন তিনি।

  • লিটন দাস

অভিষেকের পর আলো ছড়াতে না পারলেও গত বছর দুয়েক ধরেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল লিটন কুমার দাস। ইতোমধ্যেই ১৫২ ম্যাচে মাঠে নেমে আট সেঞ্চুরিতে লিটনের সংগ্রহ ৫২০৮ রান। 

বিসিবির তিন ফরম্যাটের চুক্তিতেই আছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। বিভিন্ন সূত্রমতে, প্রায় ১৩০ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পত্তির মালিক লিটন। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্র্যান্ডের সাথে যোগসূত্র থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি লিটনের সম্বন্ধে।

  • তামিম ইকবাল

তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত রান করেছেন এই ড্যাশিং ওপেনার। ৯৩ ফিফটি আর ২৬ সেঞ্চুরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের সংগ্রহ ১৪,৮৫৭ রান।

বিডিটেলিটকের সূত্রমতে, প্রায় ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক তামিম ইকবাল। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়ায় ওয়ানডে এবং টেস্টের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন তিনি। চেরি বাংলাদেশসহ রবি এবং আইপিডিসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি। এছাড়াও অতীতে ক্যাটস আই এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন তিনি।

  • মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে। জাতীয় দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তিনি। ১৭ সেঞ্চুরিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর রানসংখ্যা ১৩,৫০৯। ৩৫ বছর বয়সী মুশফিক তিন ফরম্যাটেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ছিলেন।

টেস্ট ম্যাচপ্রতি ছয় লক্ষ টাকা ছাড়াও ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি প্রতি যথাক্রমে তিন লক্ষ এবং দুই লক্ষ টাকা করে পেতেন তিনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। পপুলার বায়োর তথ্যমতে, মুশফিকের মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ২১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে দারাজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মুশফিক অতীতে ছিলেন স্যামসাংয়ের বাংলাদেশি অ্যাম্বাসেডর।

  • সাকিব আল হাসান

বাংলাদেশকে ক্রিকেটের বিশ্বদরবারে প্রথমবারের মত পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এক যুগের বেশি সময় ধরে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজারের বেশি রানের পাশাপাশি ৬৩২ উইকেটের মালিক সাকিব। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তিনি। 

স্পোর্টস আনফোল্ডের তথ্যমতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে সাকিবের। তিন ফরম্যাটেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন এই অলরাউন্ডার। বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কে জড়ালেও মাঠের বাইরেও সরব উপস্থিতি সাকিবের। ব্লুচিজ, ইশো, গ্রামীণফোন,ওপোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা রয়েছে সাকিবের। নতুন করে যুক্ত হয়েছে মোনার্ক মার্ট নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

  • মাশরাফি বিন মর্তুজা

বাংলাদেশ তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সময়টা পার করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়কত্বে। ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন এই পেসার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৮৯ উইকেট, যা কিনা বাংলাদেশিদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে না থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ আয়কারী ক্রিকেটার তিনি। নানা সূত্রমতে মাশরাফির মোট সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। গ্রামীণফোন, পুর্নাভা, ওয়ালটনের মত ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর তিনি।

– ক্রিকট্র্যাকার অবলম্বনে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...