বসুন্ধরার হতাশা, আবাহনীর আবেদন
মালদ্বীপের বিমানে উঠার ঘন্টা পাচেঁক আগে বসুন্ধরা কিংস জানতে পারল এএফসি কাপ স্থগিতের খবর। সবকিছু গুছিয়ে এনেও শেষ মুহুর্তে খেলতে যেতে না পারায় বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্লাবটির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে অনেকটা অন্যায়ভাবে বাদ পড়া আবাহনী লিমিটেডও আবেদন করেছে নতুন করে খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। করোনা ভাইরাসের থাবায় পড়ে অনেকটা ভজঘট অবস্থা এশিয়ার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের আসরের। গত আসরের মতো এবারের আসরের পরিণতি হতে যাচ্ছে সেটি এখনই অনুমান করা যাচ্ছেনা।
অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য থেকে আর ঘুরে দাড়ানো সম্ভব হয়নি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি)। ২০২০ সালের এএফসি কাপের এক ম্যাচ খেলার পর স্থগিত করতে হয়েছিল আসরের সব খেলা। এবারো কয়েকটা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতেই আবারো একই ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে।
মালদ্বীপের বিমানে উঠার ঘন্টা পাচেঁক আগে বসুন্ধরা কিংস জানতে পারল এএফসি কাপ স্থগিতের খবর। সবকিছু গুছিয়ে এনেও শেষ মুহুর্তে খেলতে যেতে না পারায় বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্লাবটির কর্মকর্তারা। এশিয়ার ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটির কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন বসুন্ধরা সভাপতি ইমরুল হাসান।
অন্যদিকে অনেকটা অন্যায়ভাবে বাদ পড়া আবাহনী লিমিটেডও আবেদন করেছে নতুন করে খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। করোনা ভাইরাসের থাবায় পড়ে অনেকটা ভজঘট অবস্থা এশিয়ার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের আসরের। গত আসরের মতো এবারের আসরের পরিণতি হতে যাচ্ছে সেটি এখনই অনুমান করা যাচ্ছেনা। তবে করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে না আসার পূর্ব পর্যন্ত এএফসি কাপ আয়োজন নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনামিষা।
বসুন্ধরা যেমন মালদ্বীপে যাবার সবকিছু প্রস্তুতি রেখেছিল ঠিক তেমনি আবাহনীও একই দেশে যাওয়ার জন্য তৈরি ছিল। কাকতালীয়ভাবে দুটি ক্লাবেরই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে আর যাওয়া হলোনা। হোম ম্যাচ আয়োজন করতে না পারার যে অপরাধে আবাহনীকে বাদ দেওয়া হয়েছিল কোন ম্যাচ না খেলার সুযোগ দিয়ে, তাহলে এখন মালদ্বীপ যে সবকিছু ঠিক থাকার পরও ’ডি’ গ্রুপের খেলাগুলো আয়োজন করতে পারেনি তাহলে তাদের কি শাস্তি হতে পারে?
আবাহনীকে বাদ দেওয়ার জন্য বড় কোন কারণও দাড় করাতে পারেনি সংস্থাটি। অথচ বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য টিম বাসে উঠে পড়েছিলেন বসুন্ধরা খেলোয়াড়, কোচ আর কর্মকর্তারা। অনেকটা আচমকাই শুনতে পান এএফসি কাপ না হওয়ার খবর।
গ্রপ পর্বের লড়াইয়েল মধ্যে একমাত্র ’ডি’ গ্রুপের খেলাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১১ মে মালদ্বীপের ঈগলস এফসি ও ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এফসি’র মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আসর শুরু হওয়ার কথা ছিল। এই ম্যাচে জয়ী দল যোগ হতো বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস, মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস ও ভারতের এটিকে মোহনবাগান এফসি। এরপর দেশটির রাজধানী মালেতে গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হতো।
গ্রুপপর্বের খেলাগুলোর জন্য ১৪-২০ মে সময় নির্ধারিত ছিল। সে হিসেবে ব্যাঙ্গালুরু এফসি আগেই ভারতে পৌছে গিয়েছিলেন। মোহনবাগানেও মালদ্বীপের বিমানে উঠার কথা ছিল। কিন্তু একটা বিবৃতিই অনেকের স্বপ্নের এই টুর্নামেন্টে বাতিলের খাতায় চলে গেল আপাতত। এদিকে বাফুফে থেকে জানানো হয়েছে, মালদ্বীপ খেলা স্থগিত করতে এএফসিকে অনুরোধ করেছিল। তাতেই মন গলে যায়।
খেলোয়াড়রা ক্যাম্পে ফিরে যান আর কোচ অস্কার ব্রুজোন নিজের হতাশার কথা লুকাতে পারেননি। এদিকে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে খবর বের হয়, মালদ্বীপে এএফসি কাপ খেলতে গিয়ে ভারতের সুনীল ছেত্রীর ব্যাঙ্গালুরু এফসি ইজ্জত বিলিয়ে এসেছে। সে দেশের করোনা বিধি ভাঙার অভিযোগ উঠে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে। মালদ্বীপ সরকার এই দলের খেলোয়াড়দের উপর ভীষন খেপেছেন।
অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে মালদ্বীপের ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ টুইটারে লিখেছেন, ‘এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ও আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মেনে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে ভারতের ক্লাব ব্যাঙ্গালুরু এফসি। অবিলম্বে মালদ্বীপ ছাড়তে হবে এই ক্লাবকে। কারণ আমরা এই আচরণ আর মেনে নিতে পারছি না। কয়েক মাস আগে জনগণের চাপ ও মামলার পরেও আমরা এএফসি কাপের আসর আয়োজন করতে রাজি হয়েছিলাম।’
তাহলে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে, করোনা আক্রান্ত দেশ হিসেবে ভারতের ক্লাবকে নিয়ে এমনিতে একটা অস্বস্থি কাজ করেছিল। তার ওপর নিয়ম না মেনে আসরটি স্থগিত করার কারণে ব্যাঙ্গালুরুকে জরিমানার মুখোমুখি করার দাবীও জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। মালদ্বীপ সরকার ভারত থেকে আসা ব্যাঙ্গালুরু এফসি ও এটিকে মোহনবাগান কড়া সুরক্ষা বলয় তৈরি করার পরিবল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু খেলোয়াড়রা তা না মেনেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন।
এতেই গোটা দলের ওপর মালদ্বীপের প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। যার সুত্র ধরেই স্থগিত করা হয় এএফসি কাপের আসর। ব্যাঙ্গালুরু এফসির দোষের কারণে কপাল পুড়েছে বসুন্ধরা কিংসের। বিষয়টিকে স্বাভাবিক না নিয়ে এখন এএফসির কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা।
তাতে কাজ না হলে ফিফা দ্বারস্ত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান, ‘বিমানের টিকিট কনফার্ম করার পাশাপাশি মালদ্বীপে হোটেলও বুকিং করা হয়েছিল। এএফসি কাপের জন্য খেলোয়াড় পোষাকসহ আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ করা হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিমান ভাড়া ও হোটেলে অনেক খরচ হওয়ার কারণে আমরা কি করব বুঝতে পারছিনা। এর দায় তো কাউকে না কাউকে নিতে হবে।’
জানা গেছে, করোনার কারণে আলাদা আলাদা রুমে থাকতে হবে বিধায় ৪৬ জনকে পৃথক রুমে থাকতে হবে। হোটেক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে কোন টাকা ফেরত দেওয়া হবেনা। বিমান ভাড়ার টাকাও একই অবস্থা রয়েছে। বসুন্ধরা সভাপতি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, খুব দ্রুতই ক্ষতিপূরন দাবী করে এএফসিকে চিঠি দেবেন।
মালদ্বীপ সরকার যখন এএফসির কাছে দাবী করে গ্রুপ পর্বের খেলা স্থগিত করে তখন আবাহনী লিমিটেড তো আর বসে থাকতে পারেনা। কারণ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ম্যাচটি আয়োজন করতে পারেনি ধানমন্ডির জায়ান্টরা। সে কারণে আবাহনীকে বাদ দিয়ে বিজয়ী ঘোষনা করা হয় ব্যাঙ্গালুরু এফসিকে। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আবাহনী আবারো খেলার দাবী করেছিল। এবার গ্রুপপর্বের খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে আবারো ম্যাচটি খেলার আশা দেখছে ঐীতহ্যবাহী দলটি।
আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু বলেণ, ‘যেহেতু গ্রুপপর্বের খেলাগুলো স্থগিত করা হয়েছে সে হিসেবে এএফসি এবার বিষয়টি নিয়ে ভাববে বলেই আমাদের বিশ্বাস। যেহেতু গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো মাঠেই গড়ায়নি তাই আমরা নতুন করে অনুমতি পেতেই পারি। বাফুফে বিষয়টি নিয়ে এখন এএফসির সঙ্গে কথা বলবে।’
আবাহনীকে বাদ দেওয়ার পর গ্রুপ পর্বের খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন ভাবনা ভাবলেও বাংলাদেশের ক্লাবকে যে হেয় করে দেখা হয় বিষয়টি অনেকটাই পরিস্কার হয়ে গেছে।