বোলিং যুগের কাটাছেঁড়া

নব্বইয়ের দশকে বোলিং গড় সবচেয়ে কম, এবং যদি দেখি ম্যাচের সংখ্যাও সবচেয়ে কম। কাজেই নিঃসন্দেহে বলা যায়, টেস্ট খেলার সংখ্যা যত কম, বোলিং তত ধারালো। এছাড়া আরেকটা ব্যাপার রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে ছোট দল খুব বেশি না থেকেও বোলিং গড় ভালো। সেখানে ২০০০ থেকে ২০০৯ বাংলাদেশ আসা সত্ত্বেও বোলিং গড় বেড়ে গেছে। কাজেই এখনো যাঁরা বলেন, নব্বইয়ের দশকে বোলিং অনেক কঠিন ছিল, তাঁরা বোধহয় খুব ভুল বলেন না।

১৯৯০ থেকে ২০২০, এই তিরিশ বছরে বোলিং আক্রমণ সবচেয়ে ধারালো ছিল কোন সময়ে, এই বিষয়ে একটা পোস্ট দেখলাম আজ। অত্যন্ত জরুরি আলোচনা কারণ, অনেকের মতে এই মুহূর্তে গত তিরিশ বছরে সেরা বোলিং লাইন-আপ বিশ্বজুড়ে। তাই ব্যাটিং ব্যর্থতা গুলো ততটাও হৈচৈ ফেলে দেবার মতো নয়, যতটা আমরা ফেলি। তা এই প্রসঙ্গেই একটু ডেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। তাই তুলে দিচ্ছি এখানে।

১৯৯০ এর দশকে ৩৪৭ টেস্ট খেলা হয়, এবং সার্বিক ব্যাটিং গড় ২৯.৪৫। সাকুল্যে মোট ৫০০ জন এই দশকে টেস্ট ম্যাচ খেলেন। এই সময়ে সার্বিক বোলিং গড় ৩১.৫১। ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের ফারাকের কারণ রান-আউট, যা বোলারের খাতায় যায় না। আমি এই আলোচনায় সার্বিক ব্যাটিং গড়ের চেয়ে সার্বিক বোলিং গড় নেওয়াই শ্রেয় মনে করছি। কারণ এখানে আমরা বোলিংয়ের ধার নিয়ে আলোচনা করবো।

এবার অনেকেই গত ৫ বছরে ফিল্ডিংয়ের প্রভাব নিয়ে বলবেন, যে রান আউটের সংখ্যা এখন বেশি। কিন্তু এতো বড়ো স্যাম্পেল স্পেসে এই ধরণের ছোট খাটো ব্যাপারগুলো নিউট্রালাইস হয়ে যায়। সেটা আমরা যত এগোবো তত দেখতে পাবো। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ৪৬৪ টেস্ট খেলা হয় এবং সার্বিক বোলিং গড় গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪.১০। এই সময় উল্লেখযোগ্য ভাবে ৫৮৬ জন টেস্ট খেলেন।

এই সময়ের সার্বিক ব্যাটিং গড় ৩২.০১। শেষ দশকে মাত্র ৪৩৩ ম্যাচ খেলা হয়, যা আশ্চর্য্যজনক ভাবে আগের দশকের চেয়ে কম। এই সময় বোলিং গড় দাঁড়িয়েছে ৩২.৪৫। যেটা আরো আশ্চর্য্যের এইসময়ে ৪৩৩ টেস্ট খেলেছেন ৬০০ লোক মিলে। অর্থাৎ গত দশকের চেয়ে এই দশকে বেশি লোক প্রয়োজন হয়েছে কম টেস্ট খেলতে। এটার কারণ হিসাবে ২০১০ পরবর্তী পাইকারি হারে গজিয়ে ওঠা কুড়ি-বিশ ক্রিকেট লিগকে দায়ি করা যায়।

কারণ, যদি একদিনের আন্তর্জাতিকের সংখ্যা দেখি তবে ২০০০ থেকে ২০০৯, ১৪০৫ ওয়ানডে খেলা হয়েছে, এবং খেলেছেন ১০১৮ খেলোয়াড়। সেখানে গত দশকে ১০৮৪ খেলোয়াড় মিলে খেলেছেন মাত্র ১২৮৭ একদিনের ম্যাচ। অর্থাৎ, নতুন ফরম্যাটের উৎপত্তি, নতুন ধরণের ক্রিকেটের উৎপত্তির কারণে গত দশকে টেস্ট হয়েছে কম, খেলোয়াড় এসেছেন বেশি।

বোলারদের জন্যে এই ব্যাপারটা জরুরি, কারণ টেস্ট খেলার ধকল খুব বেশি। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির তুলনায় অনেক কম। সেক্ষেত্রে কম টেস্ট হবার কারণে, বোলাররা আরো তরতাজা থাকতে পেরেছেন। এবং খেলোয়াড়ের সংখ্যা থেকে পরিষ্কার, রোটেশন পদ্ধতিতেও খেলেছেন অনেক বেশি খেলোয়াড়। অনেক সময় যদিও টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে খেলতে গিয়ে অনেকে চোট পেয়েছেন, যে কারণে অন্যান্যরা সুযোগ পেয়েছেন বেশি।

আবার ২০০০ থেকে ২০০৯ যদি দেখি, সে সময় এতো বেশি আন্তর্জাতিক হয়েছে, যে বিশ্রামের অবকাশ ছিল কম। আজকের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটে তখন দলের সেরা খেলোয়াড়রা বিশ্রাম নিতেন না। ম্যাকগ্রা, লি রা এমনকি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও ওয়ানডে খেলতেন। যেটা গত দশকে হয়নি। মিশেল স্টার্ক, ডেল স্টেইনরা সুযোগ পেলেই ওয়ানডে থেকে বিশ্রাম নিয়েছেন।

নব্বইয়ের দশকে বোলিং গড় সবচেয়ে কম, এবং যদি দেখি ম্যাচের সংখ্যাও সবচেয়ে কম। কাজেই নি:সন্দেহে বলা যায়, টেস্ট খেলার সংখ্যা যত কম, বোলিং তত ধারালো। এছাড়া আরেকটা ব্যাপার রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে ছোট দল খুব বেশি না থেকেও বোলিং গড় ভালো। সেখানে ২০০০ থেকে ২০০৯ বাংলাদেশ আসা সত্ত্বেও বোলিং গড় বেড়ে গেছে। কাজেই এখনো যাঁরা বলেন, নব্বইয়ের দশকে বোলিং অনেক কঠিন ছিল, তাঁরা বোধহয় খুব ভুল বলেন না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...