সিডন্স ‘পাওয়ারফুল’ মিশন

পরিকল্পনামাফিক অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং প্যানেল। ব্যাটারদের দূর্বলতাগুলোই টাইগারদের ম্যাচ হারের কারণ। সেটাও আন্দাজ করে নিতে হাতিঘোড়া বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। সুদিনের অপেক্ষাটা অন্তত করা যায়। তবে পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে। স্বল্প সময়ে ফলাফলের পেছনে ছুটে আর যাই হোক পাওয়ার হিটার কিংবা টেকনিক্যাল স্ট্রং ব্যাটার কোনটারই দেখার মিলবে না।

মিরপুর হোম অব ক্রিকেট বেশ সরব। না শুধু সরব না, অনেকটা গমগম করছে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ‘পাওয়ারফুল’ একটা আবহাওয়াই যেন বিরাজমান। ম্যাড়ম্যাড়ে পরিবেশটা যেন গত হয়েছে। সুদিনের বাতাসটা বেশ প্রতাপশালী। ক্রিকেট পাড়ায় এখন সবাই ব্যস্ত। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আক্ষেপ ঘোচাতে।

টাইগার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ একজন পাওয়ার হিটার না থাকা। একজন পাওয়ার হিটার তো নেই বাকি ব্যাটাররাও ঠিক গায়ের জোরে বল মাঠছাড়াও করতে পারেন না। বলের গতি, লাইন-লেন্থ আর ব্যাটের সংযোগ এই সবকিছু সংমিশ্রণটা ঠিকঠাক না হলে বাউন্ডারি হাকাতেই যেন ভুলে যান বাংলার ব্যাটাররা।

সে বিষয়টা টাইগার ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের নজর এড়ানোর কথাও না। সাদা চোখেই তো তা স্পষ্ট। কোচ তাই পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছেন। ব্যাটারদের বানাবেন তিনি ‘পাওয়ারফুল’। নেটে ব্যাটিং করা ছাড়াও, খেলোয়াড়দের ব্যাটিং অনুশীলনের বিস্তৃতি এখন ছড়িয়ে গেছে সেন্টার উইকেট অবধি। সেখানে সাকিব আল হাসান বোলিং মেশিনে নিজের পেশি শক্তি যাচাই করছেন। অধিনায়কের তো একটা বাড়তি দায়িত্ব থাকে।

তিনি তো সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেবেন দলের বাকি ক্রিকেটারদের। হচ্ছেও তাই। সাকিবকে অনুসরণ করে বোলিং মেশিনের সামনে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম থেকে শুরু করে তরুণ মেহেদি মিরাজ ও এনামুল বিজয়রাও নিজেদের প্রস্তুত করে নিচ্ছে। নতুন দীক্ষায় নিজেদেরকে আরেকটু শাণিত করে নিচ্ছে। টোটকাটা দিচ্ছেন কোচ জেমি সিডন্স। তিনি চাচ্ছেন না তাঁর শিষ্যদের দিকে আরও একবার আঙুল উঠুক।

নিজের জ্ঞানাধারে যতটুকুন যা আছে তার সবটুকুই ঢেলে দিতে চাইছেন জেমি সিডন্স। অন্যদিকে টাইগার ব্যাটারদের মধ্যেও শিখতে পারার অনীহা নেই। তাঁরা যেন নতুন সব চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে রয়েছেন। পিচের মাঝে সিমেন্টের স্ল্যাপগুলো অন্তত সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সামনের টুর্নামেন্টের ভেন্যু গুলোর কথা মাথায় রেখেই দল নিচ্ছে প্রস্তুতি।

সামনেই এশিয়া কাপ। সেখানটার উইকেটও খানিকটা বাউন্সি। তবে তা স্লো। সুতরাং সেই উইকেটে পাওয়ার হিট করা ছাড়া তেমন কিছু করবার সুযোগ নেই ব্যাটারদের। আর রইলো বাকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা। সেটার আয়োজন তো বসতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেখানকার উইকেট নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অন্তত এতটুকু নিশ্চিত পরিকল্পনার ছকটা ঠিকঠাকই সাজানো হচ্ছে।

অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ওয়াইডিশ ইয়োর্কার বিষয়টা বেশ প্রচলিত। সেখানটায় বাংলাদেশি ব্যাটারদেরও দুর্বলতা স্পষ্ট। পর্যালোচনা করে সিডন্স বিজয় ও মিরাজকে সে বল মোকাবেলার টেকনিকটাও ঠিকঠাক শিখিয়ে দিচ্ছেন। তিনি জানেন কঠিন পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্বভার সামলাতে হলে ঝুলিতে অস্ত্রের কমতি থাকাটা মানায় না।

পরিকল্পনামাফিক অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং প্যানেল। ব্যাটারদের দূর্বলতাগুলোই টাইগারদের ম্যাচ হারের কারণ। সেটাও আন্দাজ করে নিতে হাতিঘোড়া বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। সুদিনের অপেক্ষাটা অন্তত করা যায়। তবে পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে। স্বল্প সময়ে ফলাফলের পেছনে ছুটে আর যাই হোক পাওয়ার হিটার কিংবা টেকনিক্যাল স্ট্রং ব্যাটার কোনটারই দেখার মিলবে না।

সেটাও নিশ্চয়ই সিডন্স তথা দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ই বোঝেন। তাইতো তাঁরা নিজেদের দূর্বলতাগুলোকে শক্তিতে পরিণত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এই যেমন মিরাজ তাঁর সুইপ শটকে শাণিত করবার কাজ করছেন। আর তাতে ব্যবহার করছেন অপেক্ষাকৃত ভারি বল। তাতে অন্তত ব্যাট সুইং করবার গতিটা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়।

ক্রমান্বয়ে নিজদের দূর্বলতা চিহ্নিত করে ভুল শুধরে নেওয়ার কাজটা করছে টাইগার ব্যাটাররা। দেরিতে হলেও অন্তত সে কাজটা করছেন তাঁরা। আর দক্ষ নাবিক সিডন্স অন্তত স্বপ্নের তরী ভুল পথে নিয়ে যাবেন না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...