বিশ্বকাপের যত হট ফেবারিট!

ভক্ত-সমর্থকদের দমিয়ে রাখা যায় না; সাম্প্রতিক ফর্ম আর স্কোয়াডের শক্তিমত্তার বিচারে ঠিকই টুর্নামেন্টের ফেভারিটদের খুঁজে নেয়। এবার তাই কাতার বিশ্বকাপে শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করাই যায়।

ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা, নব্বই মিনিটের এই লড়াইয়ে ঘটতে পারে যেকোনো কিছু; মুহূর্তের মাঝে বদলে যেতে পারে সমীকরণ। তাই তো ফুটবলের পরতে পরতে মিশে আছে রোমাঞ্চ, আর যদি বলা হয় ফুটবল বিশ্বকাপের কথা তবে রোমাঞ্চের অনুভূতিকে কোন সীমানায় বন্দি করা যায় না। বিশ্বের সব ফুটবলপ্রেমীদের মহোৎসব হয়ে আরো একবার মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এই ফুটবল যজ্ঞ।

অনিশ্চয়তার খেলা ফুটবলে আগে থেকে ফলাফল অনুমান করা বেশ কঠিন, আর বিশ্বকাপে এই কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তবু ভক্ত-সমর্থকদের দমিয়ে রাখা যায় না; সাম্প্রতিক ফর্ম আর স্কোয়াডের শক্তিমত্তার বিচারে ঠিকই টুর্নামেন্টের ফেবারিটদের খুঁজে নেয়। এবার তাই কাতার বিশ্বকাপে শিরোপার দৌড়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করাই যায়।

  • ব্রাজিল

বিশ্বকাপের সফলতম দেশের নাম ব্রাজিল। সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি সবকয়টি আসরে খেলার অনন্য রেকর্ডের মালিক তাঁরা। ২০২২ সালের বিশ্বকাপেও বরাবরের মতই অন্যতম ফেভারিট সেলেসাওরা।

আক্রমণভাগে নেইমার, ভিনিসিয়াস, জেসুসদের উড়ন্ত ফর্ম ব্রাজিলকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। অন্যদিকে ক্যাসেমিরো, থিয়াগো সিলভা, মার্কুইনহোসদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ বিশ্বের যেকোনো দলের জন্য চিন্তার কারণ। শুধু স্কোয়াডে বড় বড় নাম নয়, মাঠের খেলাতেও ব্রাজিল রয়েছে দারুণ ছন্দে।

  • ফ্রান্স

বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের স্কোয়াডে তারকার কোন অভাব নেই। মাঠের প্রায় সব পজিশনেই একাধিক বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে তাদের হাতে। তাই ইউরোপীয় দলটি শিরোপা ধরে রাখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তবে সাম্প্রতিক ফর্ম কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের। উয়েফা নেশন্স লিগে ছয় ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ম্যাচ জিততে পেরেছে তাঁরা। মূলত ইনজুরির কারণে এনগোলো কান্তে, পল পগবার মত নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড়দের না পাওয়ায় ভুগতে হয়েছে ফ্রান্সকে। চোট সমস্যা কাটিয়ে সেরা ফুটবলাররা ফিরলেই হয়তো স্বরূপে ফিরবে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

  • আর্জেন্টিনা

লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা বর্তমানে রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। টানা ৩৫ ম্যাচ ধরে অপরাজিত দলটি, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরেছিল আলবিসেলেস্তারা, এরপর থেকে আর পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পাওয়া হয়নি তাদের।

নিকট অতীতের তুলনায় আর্জেন্টিনার স্কোয়াডও এখন অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। আগের মত লিওনেল মেসিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজানোর প্রয়োজন হয় নি বিধায় তিনিও স্বাধীনভাবে খেলতে পারছেন। আর এটির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পিএসজি সুপারস্টারের পারফরম্যান্সে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ খরা কাটিয়ে সোনালী ট্রফি নিজেদের করে নেয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী লাতিন আমেরিকার দেশটি।

  • জার্মানি

২০২২ সালে আট ম্যাচ খেলে মাত্র দুইটি ম্যাচে জিতেছে জার্মানি। কিন্তু বিশ্বকাপের ফেভারিটের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেয়া রীতিমতো বোকামি হবে। হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে দলটি এরই মাঝে গুছিয়ে উঠেছে।

অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে সাহসী ফুটবল খেলতে শুরু করেছে তাঁরা। বিশেষ করে মিডফিল্ডে জামাল মুসিয়ালা, থমাস মুলার, ইকাই গুন্দোয়ান, আক্রমণে লিরয় সানে, কাই হাভার্টজ এর মত তারকারা একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। যদিও স্পেনের সাথে একই গ্রুপে স্থান পাওয়ায় পয়েন্টের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে তাদের।

  • নেদারল্যান্ড

লুইস ভন গাল দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বদলে গিয়েছে নেদারল্যান্ড জাতীয় দলের চিত্র। সর্বশেষ ১৫ ম্যাচ ধরে ডাচরা অপরাজিত। স্বাভাবিকভাবেই কাতার বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে তাঁরা।

দলটির মূল শক্তি মূলত নিঁখুত রক্ষণভাগ। ম্যাথিয়াস ডি লিটের মত ফুটবলারের জায়গা হয়না শুরুর একাদশে – এখান থেকেই বোঝা যায় কতটা শক্তিশালী নেদারল্যান্ডের ডিফেন্স। আবার বেলজিয়ামকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের আক্রমণভাগের সামর্থ্য জানান দিয়েছে ভন গালের শিষ্যরা।

  • স্পেন এবং ইংল্যান্ড 

স্পেন এবং ইংল্যান্ড দুই দলের স্কোয়াডেই রয়েছে এক ঝাঁক সেরা ফুটবলার। কিন্তু এই দুই দলের সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। ইংলিশরা ২০২১ সালের ইউরোর পর থেকেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে, অন্যদিকে স্পেন নেশন্স লিগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলেও পুরোপুরি সন্তোষজনক পারফর্ম করতে পারেনি। তবুও বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নের হিসেব-নিকেশে দল দুইটিকে বাদ দেয়া যাবে না।

এদের ছাড়াও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত লড়াই উপহার দিতে পারে। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নান্দো সিলভারা তো আছেনই সেই সাথে অধিনায়ক রোনালদো যদি নিজের ফর্ম ফিরে পান তবে দলটিকে হারাতে বেগ পেতে হবে অন্যদের। কেভিন ডি ব্রুইনা, ইডেন হাজার্ডদের নিয়ে গড়া বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্ম হয়তো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতার শেষ চেষ্টা করবে ২০২২ বিশ্বকাপে। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া যে বড় দলগুলোর কঠিন পরীক্ষা নিবে সেটিও প্রায় নিশ্চিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...