গুণে গুণে তিন বার

রেললাইনের দুই পাত অন্ততকাল ধরে সমন্বয় করে যাচ্ছে অবিরাম। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে এই সমন্বয়ে বড্ড প্রয়োজন। ক্রিকেট মাঠেও ফুরায় না সে প্রয়োজন। ক্রিকেট মাঠে ব্যাটিং হোক কিংবা বোলিং সমন্বয় আর মেলবন্ধন বড্ড বেশি প্রয়োজন। আর টেস্ট ক্রিকেটে এই সমন্বয় আর মেলবন্ধন তো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করে যেতে হয়।

রেললাইনের দুই পাত অন্ততকাল ধরে সমন্বয় করে যাচ্ছে অবিরাম। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে এই সমন্বয়ে বড্ড প্রয়োজন। ক্রিকেট মাঠেও ফুরায় না সে প্রয়োজন। ক্রিকেট মাঠে ব্যাটিং হোক কিংবা বোলিং সমন্বয় আর মেলবন্ধন বড্ড বেশি প্রয়োজন। আর টেস্ট ক্রিকেটে এই সমন্বয় আর মেলবন্ধন তো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করে যেতে হয়।

লম্বা সময় বাইশ গজে থাকা দুই ব্যাটারের মাঝে চাই মেলবন্ধন। বড় বড় সব রানের জুঁটি হয়। রেকর্ড বইয়ে কাটাছেড়া হয়। হরহামেশাই ক্রিকেটে ঘটছে এমন ঘটনা। তবে টেস্টে এক ইনিংসে তিনবার ১০০ এর বেশি রানের জুঁটি হরহামেশাই দেখা মেলে না। ভারতের হয়ে বেশ কয়েকজন ব্যাটার এমন কীর্তি গড়েছেন। সেই কীর্তিই থাকছে আজকের আলোচনায়।

  • বিনোদ কাম্বলি- জিম্বাবুয়ে (১৯৯৩)

১৯৯৩ সালে ভারতের হয়ে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে তিনটি ১০০ এর বেশি রানের পার্টনারশীপ করেছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটার বিনোদ কাম্বলি। দিল্লিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনি সে কীর্তি গড়েন। সে ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিলো ২২৭ রান। তাঁর ব্যাটিং দৃঢ়তায় জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধান ও ১৩ রানে হারিয়েছিলো ভারত।

তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বিনোদ কাম্বলি। প্রথমে তিনি জুঁটি গড়েন নভজোৎ সিং সিন্ধুর সাথে। সে জুঁটিতে রান আসে ১০৭। সিন্ধু আউট হয়ে যান ৬১ রান করে। তারপর নতুন করে জুঁটি গড়েন কাম্বলি শচীন টেন্ডুলকারের সাথে। সে জুঁটিতে আসে ১৩৭ রান। তারপর শেষ জুঁটিটা গড়েন তিনি মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সাথে। সেই জুঁটিতে ভারতের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ১০৭ রান।

  • রাহুল দ্রাবিড়- পাকিস্তান (২০০৪)

পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে ভারত। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই অভিজ্ঞ ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় তাঁরা। সেই বিপদ সামাল দিতে পার্থিব প্যাটেলের সাথে ১২৯ রানের জুঁটি গড়েন ভারতের দেয়ালখ্যাত রাহুল দ্রাবিড়। সেখানেই থামেননি তিনি। দেয়াল নামের সুবিচার সেদিন করেন দ্রাবিড়। তারপর আরো একটি ১০০+ রানের পার্টনারশীপ গড়েন তিনি। এবারের সঙ্গী ভিভিএস লক্ষ্মণ।

মাঝে শচীন টেলন্ডুলকার আউট হন মাত্র একরান যোগ করেই। লক্ষ্মণের সাথে দ্রাবিড়ের পার্টনাশীপটা ছিলো ১৩১ রানের। শেষ ১০০ পার করা পার্টনারশীপটা তিনি গড়েন সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে। সেই জুঁটিতে দুজন যোগ করেন আগের জুঁটির সমান ১৩১। ২৭০ রানে দ্রাবিড় আউট হন তাছাড়া এত বড় বড় জুঁটি ভারতকে পার করায় ৬০০ রানের মাইলফলক। ম্যাচটা ভারত জিতেছিলো সেই ১৩১ রান ও ইনিংস ব্যাবধানে।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ – পাকিস্তান (২০০৫)

ভারতের সাবেক ড্যাশিং ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগও রয়েছেন আজকের তালিকায়। মারকাটারি ব্যাটিং এর জন্যে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন শেবাগ। তবে টেস্ট ক্রিকেটের টেম্পারমেন্টের দিক থেকেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। ২০০৫ সালে মোহালিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে তিন বার একশোর বেশি রানের জুঁটিতে অবদান রেখেছিলেন তিনি। প্রথমে তিনি এবং গৌতম গম্ভীরের পার্টনারশীপ থেকে আসে ১১৩ রান। সেটা ছিল ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংস।

তারপর বীরেন্দ্র শেবাগকে সঙ্গ দিতে মাঠে হাজির হন রাহুল দ্রাবিড়। দুইজনে মিলে ১১৩ রান জড়ো করেন দু’জন কিংবদন্তি। তারপর ক্রিকেটের ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার যোগ হন বীরেন্দ্র শেবাগের সাথে। এই জুঁটি থেকে আসে ১১৮ রান। সেই জুঁটিতেই প্রস্থান হয় শেবাগের। সেদিন তিনি ব্যক্তিগত ১৭৩ রানে আউট হয়ে যান। শেষদিনে দুই দলের অধিনায়ক ফলাফল ড্র মেনে নেন।

  • করুণ নায়ার – ইংল্যান্ড (২০১৬)

চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে তিনটি ১০০ রানের জুটি করা ছাড়াও নিজেই ত্রিশতক করেছিলেন করুণ নায়ার। সেদিন তিনি ছাড়াও লোকেশ রাহুল খেলেছিলেন ১৯৯ রানে এক দূর্দান্ত ইনিংস। ভারতের প্রথম ইনিংসে করুণ নায়ার ব্যাটিং করতে নামেন পাঁচ নম্বরে। প্রথম থেকেই দূর্দান্ত খেলতে থাকা লোকেশ রাহুলের সাথে গড়ে তোলেন ১৬১ রানের এক বিশাল জুঁটি। রাহুল ১৯৯ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর মুরালি বিজয় সঙ্গ দিতে নেমে ব্যর্থ হন।

তবে নায়ার ছিলেন অনড়। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তোলেন আরো ১৮১ রান। তাঁকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে যান অশ্বিন। এরপর রবিন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত ইনিংসের পাশাপাশি দলের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন করুণ নায়ার। জাদেজার সাথে তাঁর জুঁটি থেকে আসে ১৩৮। ৩০৩ রানে নায়ার সে ম্যাচে ছিলেন অপরাজিত। ওমন অনবদ্য পারফর্মেন্সের পর ফলাফল ভারতে পক্ষেই আসে।

  • রবীন্দ্র জাদেজা- শ্রীলঙ্কা (২০২২)

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড গড়া ব্যক্তিগত ইনিংসের দিনে আরো এক রেকর্ড করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। মোহালিতে সাতে নেমে ভারতের হয়ে সর্বাধিক রান করার রেকর্ড গড়েন জাদেজা। এছাড়া তিনটি একশ এর বেশি পার্টনাশীপ গড়ার কারিগর ছিলেন ক্রমশই আরো সমৃদ্ধ হওয়া রবীন্দ্র জাদেজা। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন জাদেজা। প্রথমে তিনি ১০৪ রানের জুটি গড়েন দারুণ ছন্দে থাকা ঋষাভ পান্তের সাথে।

৯৬ রানে পান্ত আউট হয়ে গেলেও জাদেজার মনোবল থাকে অঁটুট। তিনি এরপরের জুঁটিতে সঙ্গী করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। দুই রবির জুঁটিতে আরো আলোকিত হয় ভারতের সংগ্রহ। দু’জনে মিলে যোগ করেন ১৩০ রান। এরপর ৬১ রান করা অশ্বিন চলে যান প্যাভিলনে। জয়ন্ত যাদব এলেন তবু পার্টনারশিপটা বড় হলো না। তারপর মোহাম্মদ শামি যোগ্য সঙ্গীর মতো সঙ্গ দেন জাদেজাকে। আর জাদেজা তাঁর আপন ছন্দে রান তুলতে থাকেন। শেষের জুঁটিতে ১০৩ রান যোগ করেন ৫৭৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...