দেরিতে ফোঁটা পদ্মফুল

এখন পর্যন্ত চার বার ভারতীয় যুবারা জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। অন্য কোনো দেশ এখন অবধি এতবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। সেই দিক বিবেচনায় বেশকিছু দারুণ খেলোয়াড়ের দেখাও পেয়েছিলো ভারত। কিন্তু সমৃদ্ধ ক্রিকেট কাঠামোর দেশ ভারতে পাইপলাইন সুদক্ষ খেলোয়াড় দিয়ে ভরপুর। তাই তো ভারত জাতীয় দলের সুযোগ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়, খেলোয়াড়দের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। যুব বিশ্বকাপের সম্ভাবনাময়ী পারফর্মেন্স যথেষ্ট নয়।

১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। এর পর মোট ১২টি আসর বসলেও প্রথম ও দ্বিতীয় আসরের মাঝে দূরত্ব ছিলো প্রায় এক দশকের। ১৯৯৮ সাল থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আইসিসি আয়োজন করে আসছে এই বয়সভিত্তিক বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর আয়োজিত হয় যুব বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপের মূল কারণ থাকে পাইপলাইনে থাকা খেলোয়াড়দের একটি সুযোগ দেওয়া। যেন তাঁরা বিশ্ব মঞ্চে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারে।

এই বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক আয়োজনে সফলতম দেশ ভারত। এখন পর্যন্ত চার বার ভারতীয় যুবারা জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। অন্য কোনো দেশ এখন অবধি এতবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। সেই দিক বিবেচনায় বেশকিছু দারুণ খেলোয়াড়ের দেখাও পেয়েছিলো ভারত। কিন্তু সমৃদ্ধ ক্রিকেট কাঠামোর দেশ ভারতে পাইপলাইন সুদক্ষ খেলোয়াড় দিয়ে ভরপুর। তাই তো ভারত জাতীয় দলের সুযোগ পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়, খেলোয়াড়দের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। যুব বিশ্বকাপের সম্ভাবনাময়ী পারফর্মেন্স যথেষ্ট নয়। অনূর্ধ্ব ১৯ এ সম্ভাবনা জাগানিয়া কিন্তু দেরিতে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড়দের নিয়েই আজকের আয়োজন। 

  • হনুমা বিহারি

২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন হনুমা বিহারি। অনেক প্রত্যাশা থাকলেও বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। ব্যাট ও বল হাতে মোটামুটি ব্যর্থই ছিলেন তিনি সেই আসরে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে ঘরোয়া লিগে নিয়মিত রান করতে থাকেন হনুমা। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তাঁর গড় চমকপ্রদ।

ঘরোয়া ক্রিকেটের লঙ্গার ভার্শনে নিজেকে প্রমাণ করে ২০১৮ সালে ভারত টেস্ট দলের ক্যাপ পরার সুযোগ পান হনুমা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও তাঁর জাতীয় দলের অভিষেকের মাঝে দূরত্ব ছয় বছরের। এই ছয় বছরে তিনি নিজেকে পরিপক্ক করেছেন এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের নিষ্প্রভতা কাটিয়েছেন ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিয়মিত পারফর্ম করেই।

  • শিখর ধাওয়ান

২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে ছিলেন শিখর ধাওয়ান। প্রায় ৮৪ গড়ে সেই টুর্নামেন্টে রান করেছিলেন ৫০৫। দারুণ সম্ভাবনাময়ী এই বা-হাতি টপ অর্ডার ব্যাটারকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ছয়টি বছর। ২০১০ সালে তাঁর জাতীয় দলে অভিষেক হয়।

এরপর তিনি আইসিসি আয়োজিত ওয়ানডে টুর্নামেন্ট গুলোতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের স্থানটি রীতিমত নিজের জন্যে পাকাপোক্ত করে ফেলেন। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ধাওয়ান ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটার বিবেচনা করাই যায় ধাওয়ানকে।

  • মায়াঙ্ক আগারওয়াল

২০১২ তে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা ভারত দলের আগের মৌসুমটি কেটেছিল বেশ খারাপ ভাবেই। ২০১০ এর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যায় পার করতে পারেনি ভারত। সেই টুর্নামেন্টে ভারতীয় ব্যাটারদের অবস্থা ছিলে বেহাল। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ছিলেন ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

তিনি করেছিলেন কেবল ১৬৭ রান তাও মাত্র ২৭.৮৩ গড়ে। এমন নাজেহাল পারফর্মেন্সে নিশ্চয়ই আর ভারত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে নিজের জায়গাটা তৈরি করে নেন মায়াঙ্ক। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর আট বছর নিজেকে শাণিত করেই জাতীয় দলে এসেছেন মায়াঙ্ক।

  • আম্বাতি রাইডু

২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আম্বাতি রাইডু। সেমিফাইনাল অবধিই যেতে পেরেছিলো সেবার ভারত। অধিনায়ক রাইডু ব্যাট হাতে খুব একটা কিছু করে দেখাতে পারেননি। রাইডু পুরো টুর্নামেন্ট ২৪.৮৩ গড়ে রান করেছিলেন মাত্র ১৪৯। খুব একটা আশাব্যাঞ্জক পারফর্মেন্স ছিলোনা তাঁর।

এরপর আবার আলোচনায় এসেছিলেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ দিয়ে। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিলো না। ২০১০ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাথে যুক্ত হয়ে দারুণ পারফর্ম করতে থাকা রাইডু জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলো ২০১৩ সালে। কিন্তু তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। বর্তমানে রাইডু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।

  • সিদ্ধার্থ কৌল

ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সেই দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেনানি ছিলেন সিদ্ধার্থ কল। তিনি পাঁচ ম্যাচে নিয়েছিলেন দশ উইকেট। কিন্তু তাতেই ভারত জাতীয় দলের বোলিং আক্রমণে জায়গা পাওয়ার খুব একটা সুযোগ ছিল না।

তাইতো সুদীর্ঘ এক দশক সিদ্ধার্থ অপেক্ষা করে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ও আইপিএলে নিজের মতো করে পারফর্ম করে গেলেন। অবশেষে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৮ সালে তাঁর জাতীয় দলের অভিষেক হয়। মাত্র তিনটি করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ম্যাচ খেলা সিদ্ধার্থ হতে পারেননি জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...