ভিভ বনাম ওয়ার্ন!

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে বসলে একটি যুক্তি সর্বদা দেয়া হয়, ‘দুটি আলাদা প্রজন্মর তুলনা চলতে পারে না।’ তা যুক্তিটা অকাট্য। কিন্তু ক্রিকেট রোমান্টিকের মন তা মানে না। সে মনে মনে ভাবে, শচীন টেন্ডুলকার যদি ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টসদের পেতেন, তাহলে কি একই গড় ধরে রাখতে পারতেন? বা ভিভ রিচার্ডস যদি বডিলাইন সিরিজে খেলতেন, তাহলে বোথাম-উইলিস দের মতো ভোস বা লারউডকেও কি চুইং গামের মতো ছিবড়ে করে ফেলতেন? ডন যদি আজ খেলতেন তাহলে তাঁর গড় কত হতো? এইরকমই কিছু ক্রিকেট ফ্যান্টাসির ডালা খুলে বসলাম। যদি, শেন ওয়ার্নের বিপক্ষে খেলতেন ভিভ - কেমন হত?

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বাছতে বসলে একটি যুক্তি সর্বদা দেয়া হয়, ‘দুটি আলাদা প্রজন্মর তুলনা চলতে পারে না।’ তা যুক্তিটা অকাট্য। কিন্তু ক্রিকেট রোমান্টিকের মন তা মানে না। সে মনে মনে ভাবে, শচীন টেন্ডুলকার যদি ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টসদের পেতেন, তাহলে কি একই গড় ধরে রাখতে পারতেন? বা ভিভ রিচার্ডস যদি বডিলাইন সিরিজে খেলতেন, তাহলে বোথাম-উইলিস দের মতো ভোস বা লারউডকেও কি চুইং গামের মতো ছিবড়ে করে ফেলতেন? ডন যদি আজ খেলতেন তাহলে তাঁর গড় কত হতো? এইরকমই কিছু ক্রিকেট ফ্যান্টাসির ডালা খুলে বসলাম। যদি, শেন ওয়ার্নের বিপক্ষে খেলতেন ভিভ – কেমন হত?

অ্যান্টিগার এই ভদ্রলোকের সম্পর্কে দুর্নাম রয়েছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের লেগ স্পিন উনি খুব একটা ভালো খেলতেন না। বিল ওরিলি এবং শেন ওয়ার্ন-সর্বকালের সেরা দুই লেগ স্পিনারের মধ্যবর্তী সময়ের দুই সেরা লেগস্পিনার, চন্দ্রশেখর এবং কাদির, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এই দুই মক্কেলই ভিভ কে যথেষ্ট বেগ দিয়েছেন। বিশেষত তাঁদের নিজেদের দেশে।

তা পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেলো, কথাটি অনেকাংশে ঠিক, আবার কিছুটা অতিরঞ্জনও লুকিয়ে আছে এর মধ্যে। ভারত বা পাকিস্তানের ঘূর্ণি পিচে, চন্দ্রশেখর বা কাদিরের বিরুদ্ধে ভিভ কিন্তু তাঁর সহজাত ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেননি। চন্দ্রের সাথে তাঁর মোলাকাত ভারতের মাটিতে মাত্র একবারই। সেই ১৯৭৪-৭৫ এর প্রথম সফরে। সেই সিরিজে চন্দ্রশেখর ভিভ কে বার তিনেক আউট করেন। তিনবারই এক অঙ্কের স্কোরে।

ভিভের প্রথম সেঞ্চুরি, দিল্লীতে দ্বিতীয় টেস্টে, সেখানে চন্দ্রশেখর খেলেননি। চন্দ্রশেখরের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে ভিভের গড় মাত্র ২৩।পাকিস্তানের মাটিতে কাদিরের বিরুদ্ধে অবশ্য সেটা কিঞ্চিৎ উন্নত।৪৮। পাকিস্তানের মাটিতে ভিভ কাদির খেলেছেন দুবার। একবার মাত্র ৬ টেস্ট পুরোনো কাদির (১৯৮০), আরেকবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেকে যাওয়া কাদির (১৯৮৬) ।

১৯৮৬ সালের সফরে কাদির মোটামুটি ভাবে ভিভকে পেড়ে ফেলেছিলেন, সেটা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। সেই সফরে ভিভের গড় মোটেই ভিভ-চিত নয়। মাত্র ৩৫। আরেকটা কথাও নির্দ্বিধায় বলে ফেলা যায়। সচিনের ক্ষেত্রে যেমন বিভিন্ন অবতারে তাঁকে আমরা দেখেছি গোটা ক্রিকেট জীবন জুড়ে, এবং তাঁর কোন অবতারটি মার্শাল-রবার্টসদের গোলাগুলি সামলানোর জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সেটা ভেবে বার করতে মাথার চুল ছেঁড়ার উপক্রম হয়।

ভিভের ক্ষেত্রে ততটা নয়। ১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনে চিরকালই ব্যাটিং টা এমন ভাবে করেছেন, যেন ব্যাট দিয়ে বোলার পেটাচ্ছেন না। হাতের মুদ্রায় মশামাছি তাড়াচ্ছেন। কাজেই তাঁর কোন অবতারকে নিয়ে লিখবো সেটা ভাবতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি। ভিভ রিচার্ডস একজনই, এবং তাঁর অবতারও এই একটিই।

এবার আসা যাক ওয়ার্নের বিশ্লেষণে। ওয়ার্ন মহাশয় ড্যারিল কালিনান, আলেক স্টুয়ার্ট ও তাঁদের দেশজ সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে যতটা মস্তানি দেখিয়েছেন, স্পিন খেলতে ওস্তাদ ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে কিন্তু তিনি ততটাই স্তিমিত। ১৯৯৮ বা ২০০১ এর ভারত সফরে ওয়ার্নের কি দশা করেছিলেন যথাক্রমে শচীন ও লক্ষণ, সেটা সর্বজনবিদিত।

আর ১৯৯৯ এর ওয়েস্ট ইন্ডিজে, লারা তাঁর এমন দশা করেন যে, শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্নকে ছাড়া মাঠে নামে। কয়েকটা ছোট্ট তথ্য দি। ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ার্নের গড় যেখানে ২৫ এর কম, সেখানে দেশ বিদেশ মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর গড় ৪৭ এবং লারা সহ ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩০।

এবার আলোচনা করা যাক সেই মাহেন্দ্রক্ষণ নিয়ে, যখন বোলিং মার্কে দাঁড়িয়ে ওয়ার্ন এবং গার্ড নিচ্ছেন ভিভ। আমরা ধরে নিচ্ছি ওয়ার্নের কাঁধে কোনো অস্ত্রপ্রচার হয়নি। ফ্লিপার দিতে তাঁর খুব একটা অসুবিধা হয় না। খেলা হচ্ছে সিডনির মাঠে। উইকেটে হালকা স্পিন রয়েছে। ওয়েস্টইন্ডিজ ৫৫ রানে ১ উইকেট। ২০ তম ওভার। ওয়ার্ন মোটামুটি সাধারণ ফিল্ড রেখেছেন। সিলি পয়েন্ট, স্লিপ। লেগসাইডে শর্ট ফাইন লেগ, শর্ট স্কোয়ার লেগ ও মিড অন। বাকি লেগসাইড পুরো ফাঁকা। ফ্লিক মারতে পারলে আরামসে ৪।

ওয়ার্ন শুরু করবেন সাধারণ লেগ-ব্রেক দিয়ে। ওয়ার্নের সাথে অন্যান্য লেগস্পিনারদের প্রধান পার্থক্য হলো, বাজে বলের সংখ্যায়। ৩০ ওভার বল করলে ১০ টা লংহপও বেরোয় না। কাজেই ভিভ কে কিছুটা আক্রমণাত্মক হতেই হবে। মনে হয় না তিনি ওয়ার্নকে দেখে খেলে অন্যদের মারবেন। ভিভ আসলে এমনই, বিপক্ষ দলের সেরা অস্ত্রকে ভোঁতা করতে ঝুঁকি নেবেন। কিন্তু তাকে মাথায় চড়ে বসতে দেবেন না।

ওয়ার্ন প্রথম দিকেই তাঁর ভেরিয়েশনের ঝুলি খুলে বসবেন বলে মনে হয় না। বরং ক্রমাগত লেগব্রেক করে যাবেন। যার কয়েকটি হবে মিডিল-লেগে। ভিভ স্বভাবতই ফ্লিক করতে চাইবেন। সফলও হবেন কয়েকবার। কিন্তু একটা বাড়তি টার্ন করলেই কানায় লেগে স্লিপ বা কিপারের হাতে যেতে পারে। স্টাম্পিং হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। ওয়ার্নের যে বলে সবচেয়ে ফ্যাসাদে পড়তে পারেন ভিভ, সেটি হলো ফ্লিপার।

তার আগে কয়েকটা শর্ট অফ লেংথ, কাট মারার উপযোগী বল আসবেই। ভিভ যখন হালকা শর্ট দেখলেই ভাববেন, এটা আবার কাট করব, তখনই আবিষ্কার করবেন এই বলটি প্রায় পেসারের গতিতে আসছে এবং সোজা উইকেটের দিকে । বোল্ড বা এলবি হবার সম্ভাবনা প্রবল। ভিভ যদি সাহস করে শুরু থেকে আক্রমণ করতে পারেন, ওয়ার্নের লাইন-লেংথ গুলিয়ে যাওয়া আশ্চর্য্য না। যেমন শচীন করেছিলেন ১৯৯৮ এর চেন্নাইতে।

চূড়ান্ত রায়: ভিভ কত রান করবেন সেটা বলা সম্ভব না। কারণ শচীনের বেলায় তিনি গোটা বোলিং আক্রমণকেই খেলেছিলেন, এই পর্বে সেটার অবকাশ নেই। ব্যক্তিগত ধারণা, ওয়ার্নের বিরুদ্ধে ভিভের প্রথম ২০-২৫ বল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা বল ডেড-ব্যাট ডিফেন্স করার প্রশ্ন নেই, বরং ভিভ কিছুটা আক্রমণাত্মক থাকবেন। ওয়ার্নও তাই। এই কটা বল ভিভ বিনা দুর্ঘটনায় টিকে গেলে, ওয়ার্নের কপালে কিন্তু দু:খ আছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...