মৃত্যুপুরীতে এ কেমন আইপিএল!

আমরা মৃত মানুষের বাড়িতে গিয়ে হাসি তামাশা করি না। কিন্তু তাতে যুক্তিতে কোনো বাঁধা নেই। হাসি তামাশা করলে লোকটা আরেকবার মরবে না। এমনকি হাসি তামাশা বন্ধ করলেও লোকটার বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমি কোনো প্রয়াতের বাড়ি গিয়ে নাচ গান করি না।

আমরা জানি,  আইপিএল বন্ধ হলে এক জন মৃত মানুষও বেঁচে উঠবেন।

কোনো হাসপাতালে আইপিএল হচ্ছে না। ফলে আইপিএল চললেও চিকিৎসায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আইপিএলের জন্য যা খরচ হচ্ছে, সে টাকা চিকিৎসা খাতের নয়। ফলে আইপিএল বন্ধ হলে মানুষের আরোগ্য বাড়বে না। আইপিএল অক্সিজেন দিয়ে চালাতে হয় না। তাই আইপিএল বন্ধ করলে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়বে না।

অতএব, যুক্তিবিদ্যা বলে, আইপিএল বন্ধ করে কোনো লাভ নেই। এই শ্মশানের ওপর দাড়িয়েও আইপিএলের নৃত্য চলতে পারে। তাকে যুক্তিতে কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু দুনিয়াটা এমন সব কেজো যুক্তি দিয়ে চলে না। এই দুনিয়ায় এসব অসভ্য যুক্তির বাইরেও কিছু কথা থাকে। শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা বলে কিছু ব্যাপার আছে।

আমরা মৃত মানুষের বাড়িতে গিয়ে হাসি তামাশা করি না। কিন্তু তাতে যুক্তিতে কোনো বাঁধা নেই। হাসি তামাশা করলে লোকটা আরেকবার মরবে না। এমনকি হাসি তামাশা বন্ধ করলেও লোকটার বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমি কোনো প্রয়াতের বাড়ি গিয়ে নাচ গান করি না।

করিনা কারণ, আমরা ওই বিদেহী মানুষটাকে সম্মান দেখাতে চাই। এসব করিনা কারণ, আমরা পরিবারের বেচে থাকা লোকগুলোর প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা দেখাতে চাই।

আর এই একটা কারণেই আইপিএল বন্ধ করা এখন খুব জরুরী ব্যাপার।

যে দিল্লিতে অক্সিজেন না পেয়ে ডজনে ডজনে মানুষ মরেছে, সেই শহরে দাড়িয়ে আপনি চার-ছক্কার নৃত্য করতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই হয় না। যে শহরে শত শত ডাক্তার, সেবিকা প্রাণান্ত করছে মানুষ বাচাতে; সেই শহরে দাড়িয়ে আপনি কোনোভাবেই টাইম আউট বলে বিজ্ঞাপন চালিয়ে দিতে পারেন না। যে শহরে চিতায় মানুষ তুলতে দু দিনের সিরিয়াল দিতে হচ্ছে, সেখানে আপনি উইকেট পেয়ে নৃত্য করতে পারেন না।

এটা হতে পারে না। মানুষের জীবনকে এতো স্বস্তা করে দিয়ে খেলার মত একটা তুচ্ছ কাজ চালিয়ে যাওয়া যায় না।

আরেকটা বিপরীত যুক্তি আছে।

টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময়ও অর্কেস্ট্রা বাজানো হচ্ছিলো। মানুষ যাতে একটা মুহুর্তের জন্য হলেও শোক থেকে, আতঙ্ক থেকে নজর ঘোরাতে পারে। কিন্তু এ যুক্তিতেও আমি আইপিএল চলার পক্ষে নই। আইপিএল কেবলই বানিজ্যিক এক প্রদর্শনী। এর পেছনে কোনো মানবিকতা নেই। এই শো চালিয়ে গিয়ে এরকম গণমরণের শোক ভোলানো সম্ভব না। বরং এই আইপিএল শো এই মৃত্যুর মিছিলের প্রতি এক তাচ্ছিল্যে পরিণত হয়েছে।

আমরা ক্রীড়া সাংবাদিক।

বাংলাদেশি হলেও আমাদের কাছে আইপিএলের একটা বাজার আছে। আইপিএল চললে আমাদের জীবিকাটা ভালো চলে। আমাদের একটু স্বস্তি থাকে। তারপরও আমরা মনে করি, এই মৃত্যু উপত্যকায় দাড়িয়ে আইপিএল চালানো ঠিক না।

আমরা নিশ্চিত যে, ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন্ডিয়ায় (বিসিসিআই) মানবিক বোধ সম্পন্ন লোকেরা আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই অনতি বিলম্বে এই শো বন্ধ করে দেবেন।

না, বন্ধ করে দিলে অবশ্য সম্মান নিয়ে টান পড়তে পারে। ইতোমধ্যে আইপিএল ছেড়ে ফিরে যেতে শুরু করেছেন বিদেশী তারকারা। এমনকি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো ভারতীয় খেলোয়াড়ও আইপিএল ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

সব খেলোয়াড় দল ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেই আসরটা স্থগিত করে দিন, প্লিজ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...