মহাত্মা গান্ধী ও বাইশ গজ

একবার তৎকালীন ভারতীয় ওপেনার বিজয় বণিকের বোন লক্ষ্মী বণিক গান্ধীর অটোগ্রাফ চাইলেও অটোগ্রাফ দেওয়ার মতো কিছু আশপাশে ছিল না। পরে সেসময় ভারত সফরে থাকা এমসিসি দলের খেলোয়াড়দের নামের তালিকাসম্বলিত একটি নোট পান। ১৬ সদস্যের সেই তালিকার নিচে ১৭ নাম্বার দিয়ে নিজের নাম লিখে দেন মহাত্মা গান্ধী।

মহাত্মা গান্ধী আর ক্রিকেট, দুই মেরুতে যাদের অবস্থান। ন্যায়, অধিকারের জন্য গান্ধীজীর লড়ার সময়ে উপমহাদেশে ক্রিকেট অত ডালপালা ছড়ায়নি। তখনো এটি পাশ্চাত্যের আভিজাত্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবু দেশটি যখন ভারত লোকটি যখন গান্ধী, ক্রিকেটের সাথে খানিক হলেও পরিচয় থাকবে না তা কী করে হয়! স্বাধীন ভারতের অন্যতম রূপকার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে ক্রিকেটের যোগসূত্র নেহাৎ কম নয়। বরঞ্চ কিছু ক্ষেত্রে সেটি প্রভাব ফেলেছে গোটা ভারতীয় ক্রিকেটে।

গান্ধীর জীবনী লেখা লুই ফিশার গান্ধী সম্পর্কে জানতে গান্ধীজীর বোনকে অনেকগুলো প্রশ্ন পাঠান। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি গান্ধীজীর টান সমন্ধে। বাইশ গজের সঙ্গে সখ্যতার বিষয় খোলাসা করেন তাঁর বোন। জানা যায়, ছেলেবেলায় টেনিস, বেলুন দিয়ে খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতেন গান্ধীজী। মাঝেমাঝে এতটাই বুঁদ হতেন, নাওয়া খাওয়ার কথা ভুলে যেতেন। কখনো এমনকি সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও খেলা থামতো না। সময়ের পরিক্রমায় ক্রিকেটের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও খোঁজ নিতেন।

না, থেকেও ক্রিকেটে ছিলেন গান্ধী বর্ণবাদের ডামাডোলে প্রায়শই দিশেহারা হয় ক্রিকেটাঙ্গন। ভারতীয় ক্রিকেটেও এর ভয়াল থাবা ছিল। তাও এমন এক সময়ে যখন হিংসা, বর্ণবাদ, জাতিপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন গান্ধী। সেই সময়টায় চমৎকার খেলেও কেবলমাত্র জাতিগত বিভেদের কারণে দলে জায়গা পাচ্ছিলেন না স্পিনার পালওয়ানকর বালো। তবে গান্ধীজীর লড়াই থেকে সাহস সঞ্চয় করে বালুর জন্য লড়াই চালায় তার দুই ভাই শিবরাম ও ভিত্তাল। পরবর্তীতে ভারতের সহ-অধিনায়ক হওয়া বালু এক টেস্টে একটা ইনিংসে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন দেশকে।

রঞ্জি ট্রফির জনপ্রিয়তা সকলের জানা। প্রথম শ্রেণীর এই টুর্নামেন্টকে ভারতের ভবিষ্যৎ তারকা তৈরির অন্যতম প্রধান সহায়ক বললে ভূল বলা হবে না একরত্তিও। এই টুর্নামেন্টের জন্মের পেছনে পরোক্ষ অবদান গান্ধীজীর! ১৯৪০ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরের কথা চলছিল। গান্ধী তাতে বাঁধ সাধেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আভাসে তখন উত্তাল গোটা বিশ্ব। শেষপর্যন্ত ভারতের আর যাওয়া হয়নি ব্রিটিশদের ডেরায়। তারপর বিশ্বযুদ্ধে সব বন্ধ! যুদ্ধ শেষ হলে শুরু হয় রঞ্জি ট্রফির যাত্রা। যা মূলত ’৪০ এর সফরে যাওয়ার অতৃপ্তি মেটাতেই আয়েজিত হয়েছিল।

ক্রিকেটের প্রতি গান্ধীর অত টান না থাকলেও তার ছেলে ছিলেন ডন ব্র্যাডম্যানের বড় ভক্ত।  ব্র্যাডম্যানের বিদায়ী ম্যাচে লন্ডন ছিলেন ছেলে দেবদাস। ডনের শেষ ম্যাচ বলে কথা! সব টিকিট বিক্রয় হয়ে যায়। দেবদাস উপর মহলের মাধ্যমে টিকিট তো ম্যানেজ করে ফেললেন, কিন্তু পারলেন না থাকার বন্দোবস্ত করতে। শেষমেশ ব্যবস্থা হয় ইংল্যান্ডের নটিংহাম কারাগারের ওয়ার্ডেনের বাড়িতে। ব্র্যাডম্যানকে তিনি দেখেই ছাড়বেন।

ক্রিকেটকে জড়িয়ে গান্ধীর একটি মজার ঘটনা আছে। একবার তৎকালীন ভারতীয় ওপেনার বিজয় বণিকের বোন লক্ষ্মী বণিক গান্ধীর অটোগ্রাফ চাইলেও অটোগ্রাফ দেওয়ার মতো কিছু আশপাশে ছিল না। পরে সেসময় ভারত সফরে থাকা এমসিসি দলের খেলোয়াড়দের নামের তালিকাসম্বলিত একটি নোট পান। ১৬ সদস্যের সেই তালিকার নিচে ১৭ নাম্বার দিয়ে নিজের নাম লিখে দেন মহাত্মা গান্ধী।

মহাত্মা গান্ধী আর ক্রিকেট একটা জায়গায় অভিন্ন। ভারতীয়দের একসুতোয় গেঁথেছিলেন গান্ধী যা সুগম করে স্বাধীনতার পথ। অন্যদিকে ক্রিকেট ভারতীয়দের কতটা আপন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের বাইশ গজে তাই না থেকেও ছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...