একটি বিশ্বকাপ, এক জোড়া বুট ও একটি হাত

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার স্কোরলাইন ছিল ২-১। তাতে আর্জেন্টিনার করা প্রথম গোলটা ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত একটা গোল। গোলটি ম্যারাডোনাই করেছিলেন, এ কারনে ঐ সময়ের ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার, দ্য গ্রেইট স্যার ববি রবসন ‘রাসকেল’ উপাধি দিয়ে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনাকে। ম্যারাডোনার নিজের কি এই নিয়ে কোন অপরাধবোধ আছে?

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার স্কোরলাইন ছিল ২-১। তাতে আর্জেন্টিনার করা প্রথম গোলটা ছিল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত একটা গোল। গোলটি ডিয়েগো ম্যারাডোনাই করেছিলেন, এ কারনে ঐ সময়ের ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার, দ্য গ্রেইট স্যার ববি রবসন ‘রাসকেল’ উপাধি দিয়ে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনাকে। ম্যারাডোনার নিজের কি এই নিয়ে কোন অপরাধবোধ আছে?

সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনার খুব দ্রুত উত্তর ছিল, ‘আরে ধুর, একদমই না।’ এরপর ম্যারাডোনা ব্যাখ্যা করেছেন কেন তাঁর কোন আক্ষেপ বা অনুশোচনা নেই। এবং তিনি খোলামেলাই স্বীকার করেছেন যে গোল নিয়ে এতো কথাবার্তা, সেই গোলটা নিয়ে তিনি নিজে প্রতারণাই করেছিলেন।

‘আইচ্ছা আমারে বলেন, আমি কেন ঐ গোলটা নিয়া মাফটাফ চাইতে যামু?’ ম্যারাডোনার মুখে হাসি এবং একই সাথে কৌতুক।

‘একটা খেলা হইতেছে, সবাই খুব মজা কইরা দেখতাছে, আমরা খেলতাছি, দর্শক ধরেন গিয়া সেই খেলায় প্রায় লাখ খানেক, এতগুলা খেলোয়াড় আর দর্শক, এগো সবার চোখের সামনে আপনে এমন এক শয়তানি করলেন যে কেউ বুঝলোই না, এমন একটা গোল করলেন, যেইটা মনে করেন ফুটবলার হিসেবে কোনভাবেই গোল করার সিস্টেমের মইধ্যে পরেনা, হাত দিয়া গোল করছেন, কারো চোখে আটকাইলোও না। মজা না ব্যাপারটা? মজা তো। মজা নেন। সিরিয়াস হইতাছেন কেন?’

এরপর অবশ্য ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ বিজয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে সেই বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ড ফাইনালে স্রেফ ডাকাতি করে নিয়ে গিয়েছিল পশ্চিম জার্মানির কাছ থেকে। ওয়েম্বলির সেই ফাইনালের এক্সট্রা সময়ে জিওফ হার্স্টের যে শটটাকে গোল দিয়েছিলেন সুইস রেফারি গটফ্রায়েড ডেইনস্ট, সেই বল গোল লাইনই পার হয়নি।

ক্রসবারে লেগে গোল লাইনের সামনে পরেছে। জিওফ হার্স্ট ও পরে স্বীকার করেছিলেন আজারবাইজানের লাইন্সম্যান তোফিক বাখরামভ সেই গোল দেখতে ভুল করেছিলেন।

ম্যারাডোনার কথা হচ্ছে, ‘যে দেশ একটা গোল চুরি কইরা বিশ্বকাপ নিয়া যায়, সেই দেশ আবার ম্যারাডোনা চুরি করছে কয় কেমনে? আমার আগেই তো হেরা একটা আস্ত বিশ্বকাপ চুরি করছে, আমি তো খালি করছি একটা গোল। হেগো কোন অধিকারই নাই আমার গোল নিয়া কথা কওনের। ডাকাইতে চোরের আলাপ দিলে কিরম হইলো না বিষয়টা?’, কথাগুলোর সময় ম্যারাডোনার ঠোঁটে ছিল এক ধরনের মুচকি হাসি।

এই গোলটাই পরে নাম হয়ে যায় ‘হ্যান্ড অফ গড’। বিতর্কিত এই গোলের পরে ম্যারাডোনা করেন আরেক ইতিহাস বিখ্যাত গোল, ঐ গোলের মাত্র তিন মিনিট পরেই। নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে ছয়জন ইংলিশ খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে শেষে পরাক্রমশালী গোলকিপার পিটার শিলটনকেও ফাঁকি দেন ম্যারাডোনা। এই গোল করতে ম্যারাডোনা বলে পা ছুঁইয়েছিলেন মাত্র ১২ বার, সবই বাম পায়ের ছোঁয়া। ফিফা পরবর্তীতে এই গোলকে ঘোষনা দেয় ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে।

প্রিয় ম্যারাডোনা, যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। যদি বিখ্যাত কোন স্পোর্টস জার্নালিষ্ট হতাম, আমি অবশ্যই আপনার সাক্ষাৎকার নিতাম। দেখতে পাই হাভানা চুরুট জ্বালিয়ে মুখের সামনে একরাশ ধোঁয়া ছড়িয়ে বিচিত্র এক পরিবেশ তৈরী করে থেমে থেমে কথা বলছেন। মুখে চুরুট, ঠোঁটে হাসি। কুচ পরোয়া নেহি একটা ভাব। আমি সামনে উবু হয়ে বসে আছি, তন্ময় হয়ে আপনার কথা শুনছি, কথাবার্তা রেকর্ড হচ্ছে।

সেই কথাগুলো বিখ্যাত কোন পত্রিকায় একেবারে ‘অসম্পাদিত’ অবস্থায় বেরুবে! ভাবতে আসলে ভালোই লাগে। আপনার বিশ্বকাপ জয়ের এত বছর আজ। ঈশ্বর নিশ্চয়ই আপনাকে ওপারেও একটা ফুটবল, একজোড়া বুট আর একটা বিশ্বকাপ ধরিয়ে দিয়েছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...