ওয়াহ! মার্ক ওয়াহ!

বলা হয় তাঁর ব্যাটিং ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য্যকেই বাড়িয়ে তুলেছিল। এছাড়া ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা স্লিপ ফিল্ডার হিসেবেও তাঁর নাম আসবেই। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ছাপিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যাদের চিনেছিল ওয়াহ ব্রাদার্স নামে তাঁদেরই একজন মার্ক ওয়াহ। 

বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন আর মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তবে মা-বাবা বাদে পরিবারের বাকি সবাই কোনোনা কোনো খেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে পরিবারের সকলকে ছাড়িয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ভাইয়ের একজন তিনি।

বলা হয় তাঁর ব্যাটিং ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য্যকেই  বাড়িয়ে তুলেছিল। এছাড়া ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা স্লিপ ফিল্ডার হিসেবেও তাঁর নাম আসবেই। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ছাপিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যাদের চিনেছিল ওয়াহ ব্রাদার্স নামে তাঁদেরই একজন মার্ক ওয়াহ।

ওয়াহদের পুরো পরিবাররটাই ছিল ক্রীড়া প্রেমী। স্টিভ ও মার্ক ওয়াহ’র আরেক ভাই ডিন ওয়াহও অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। এছাড়া পরিবারের বাকি সদস্যরাও কোনো না কোনো খেলার সাথে জড়িত ছিলেন। মার্ক ওয়াহ’র বাবা মা তাই মাত্র ছয় বছর বয়সেই দুই ভাইকে ক্রিকেট, ফুটবল ও টেনিস ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তবে স্টিভ ও মার্ক ওয়াহ দুজনেই বেঁছে নিয়েছিলেন ক্রিকেট। তবে প্রথম যেদিন দুই ভাই ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল সেদিন দুই ভাই ই ব্যাট হাতে করেছিলেন শূন্য রান।

তবুও চলতে থাকে ক্রিকেট যাত্রা। তবে হঠাতই ১৫ বছর বয়সে একধরনের স্ট্রেস ইনজুরিতে পড়েন মার্ক ওয়াহ। ডাক্তার বলেছিলেন এর ফলে থেমে যেতে পারে দৈহিক বৃদ্ধি। তবে নিয়তি হয়তো লিখে রেখেছিল অন্যকিছুই। তারপর এক বছরে মার্কের উচ্চতা প্রায় এক ফুট বাড়ে। আবার শুরু হয় তাঁর ক্রিকেট উৎসব। আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি অজি এই ব্যাটসম্যান।

যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং ও বোলিং দুটিই সমান তালে করতেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ১৯৮৩ সালে অনুর্ধব-১৯ দলের হয়ে খেলার ঢাক পান মার্ক। সেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে ১২৩ রানের এক ইনিংস খেলে নজর কারেন। পরের বছরই ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। চার মিনিটের বড় ভাই মার্ক ওয়াহ তারপর দ্রুতই জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও মার্কের ভাগ্য যেনো সহায় হচ্ছিল না।

তবে ১৯৮৮ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্মেন্সের পুরষ্কার হিসেবে ওয়ানডে দলে ডাক পান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকও হয় সেই বছরের ডিসেম্বরে। সেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুই ভাই একসাথে খেলেন। যদিও প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং কোনোটিরই সুযোগ পাননি এই অলরাউন্ডার। সেই ম্যাচে নয় উইকেটে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে এরপরের ম্যাচগুলোতেও নিজেকে সেভাবে প্রমান করতে না পারায় দলে স্থায়ী জায়গা করতে পারেননি।

এরপর ১৯৯১ সালে আবার টেস্ট দলে ডাক পান এই অলরাউন্ডার। তবে সেই সময়ে বড় ভাই মার্ক ওয়াহ ব্যাট হাতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। সেই বড় ভাইয়ের জায়গাতেই টেস্ট অভিষিক্ত হন মার্ক ওয়াহ। অভিষেক টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেই সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।

এরপর থেকে জাতীয় দলে নিয়মিত পারফর্ম করে গেছেন মার্ক। ওদিকে স্টিভ ওয়াহ ও সেবছরই আবার ফিরে আসেন জাতীয় দলে। এরপর থেকে প্রায় এক যুগ দুই ভাই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন।

তবে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হঠাত ওপেনিং করানোর সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকে যেনো এক অন্য মার্ক ওয়াহকে দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ওপেনিং পজিশনে তাঁর গড় ৪৪ এর ও বেশি। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৯.৩৫ গড়ে ৮৫০০ রান করেন তিনি।

সেখানে ওপেনার হিসেবেই করেছেন ৫৭২৯ রান। এরপর সবচেইয়ে বেশি রান করেছেন তিন নম্বর পজিশনে। এই পজিশনে তাঁর রান সংখ্যা ১১৯৭। ওদিকে টেস্ট ক্রিকেটেও তাঁর ঝুলিতে আছে ৮ হাজারের বেশি রান। টেস্টে ৪১.৮১ গড়ে ব্যাটিং করে করেছেন ২০ টি সেঞ্চুরিও।

ঘরোয়া ক্রিকেটের অলরাউন্ডার মার্ক ওয়াহ জাতীয় দলে এসে ব্যাটিং এই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। জাতীয় দলে কখনো কখনো স্পিন বোলিং ও করেছেন। তবুও তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলে তাঁর ঝুলিতে আছে ১৪৪ টি উইকেট। ওদিকে স্লিপ ফিল্ডার হিসেবেও সেরাদের সেরা তিনি। পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ধরেছিলেন ১৮১ টি ক্যাচ।

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও আছেন ক্রিকেটে সাথেই। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেছেন অনেকদিন। তবে ২০১৮ সালে সেই দায়িত্ব ছেড়ে এখন তিনি পুরোদস্তুর ক্রিকেট কমেন্টেটর। ব্যাটটা আজকাল আর হাতে নেন না তবে ব্যাটিং সৌন্দর্য্যর কথা উঠলে আজো ঘুরে ফিরে তাঁর নামটাই আসে সবার আগে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...