ভুল ছাড়া কি জীবন হয়!

যিনি কখনও ক্যাচ মিস করেননি, তিনি কি আদৌ ক্রিকেট খেলেছেন? কিংবা যদি জীবনের সাথে মিলিয়ে বলা হয়, ভুল ছাড়া কি জীবন হয়?

যিনি কখনও ক্যাচ মিস করেননি, তিনি কি আদৌ ক্রিকেট খেলেছেন? কিংবা যদি জীবনের সাথে মিলিয়ে বলা হয়, ভুল ছাড়া কি জীবন হয়?

এই মুহূর্তে আর্শদ্বীপ সিংয়ের জন্য দু’টো প্রসঙ্গই অর্থহীন মনে হতে পারে। তিনি এই মুহূর্তে হয়তো কোটি কোটি লোকের বিদ্বেষের তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন। এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ১৮ তম ওভারে এসে আসিফ আলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস করেন। মুহূর্তের মধ্যে তিনি হিরো থেকে ভিলেন বনে যান।

বিশেষ করে উপমহাদেশীয় দর্শকদের এই চরিত্র নতুন নয়। ক্রিকেটের সাথে যেখানে জাতীয়তাবাদ মিলেছে সেখানে উগ্রতা থাকবেই। তাই, সমালোচনার ভাষাটা এখানে সব সময় সংযত নয়। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে এসে সেটা আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠলো।

রবিবার রাতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে ভারত পাঁচ উইকেটে হেরে যায়। এই রোমাঞ্চকর ম্যাচে ভারত দল, প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্থানের সামনে জয়ের জন্য ১৮২ রানের লক্ষ্য রেখেছিল। যে রান তারা করতে নেমে প্রতিবেশি দেশ এক বল বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গিয়েছিল আর্শদ্বীপের সেই মিস করা ক্যাচ।

১৮ তম অভারের তৃতীয় বলে আর্শদ্বীপ যখন আসিফের ক্যাচ ফেলে দেন, তখন রানের খাতাই খোলেননি পাকিস্তানি এই ব্যাটার। এর পর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ৮ বলে দুটি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ১৬ রানের ইনিংস খেলেন। এটা পাকিস্তানের জয়ে বড় ভুমিকা রাখে। সেই সময় আর্শদ্বীপ সিং যদি আসিফের ক্যাচ মিস না করতেন, তাহলে হয়ত ম্যাচের ফল ভারতের পক্ষেই যেত।

কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আসিফ আলীর সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তরুণ আর্শ্বদ্বীপ। ২৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের এমন ভুলের জন্য অধিনায়ক রোহিত শর্মা ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্ত জানেন কি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার সময় গ্রুপ পর্বে যে ভুল ভারত অধিনায়ক করেছিলেন, সুপার ফোরের ম্যাচে সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেন রোহিত শর্মা নিজেও। যদিও সে সময় ভারত জিতে গিয়েছিল। আর এজন্যই হয়ত তখন তাঁর ভুল সবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল।

ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি-সহ অনেক গ্রেটই বলেছেন, ক্যাচ মিসের ঘটনাটা ভুলে যাওয়ার জন্য। তবে, ভারতীয় উগ্র সমর্থক এই ঘটনা ভুলেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুধু ট্রলের শিকারই তিনি হননি, তাঁকে আঘাত করা হয়েছে ধর্মীয় ভাবেও। তাঁর পরিবার কিংবা তাঁর ধর্মের মানুষকেও কেউ কেউ টার্গেট করেছেন। আবার এর ব্যতিক্রমও আছে। সাবেক বর্তমান অনেক ক্রিকেটার ও আর্শদ্বীপের অনেক সতীর্থই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, টুইটারে তাঁর প্রতি জানিয়েছেন সমর্থন।

সবার মত একটাই, চাপের মুখে এরকম অঘটন ঘটতেই পারে। তবে, এটা দিয়ে আর্শদ্বীপের সামর্থের প্রমাণ পাওয়া যায় না। নিশ্চয়ই বয়সের সাথে সাথে আরো পরিণত হবেন আর্শদ্বীপ। শুধু আর্শদ্বীপ নয়, পরিণত হতে হবে দর্শক-সমর্থকদেরও।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...