রামোস ২.০

ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকে নিয়ে কথা উঠছে বড় বড় দলের। তার নাম জড়িয়ে গিয়েছে বড় বড় দলের সাথে। সার্জিও রামোসকে দলে নেওয়ার জন্য বড় বড় দলতাও রাজি, কিন্তু শেষমেশ কোন দলে ভিড়বেন রামোস? কোন দলের ডিফেন্স আর লিডারশিপ দুই-ই নিজের কাঁধে তুলে নিবেন রামোস? সেটা ঠিক করবেন তিনি নিজেই।

১৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন সার্জিও রামোস। চুক্তির শেষদিকে এসে আর কোনোভাবেই রিয়ালের সাথে নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারেননি সার্জিও রামোস। যে কারণে ফ্রি এজেন্ট হিসেবেই দল ছেড়েছেন তিনি।

রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক রিয়াল ছেড়েছেন চোখে অশ্রু নিয়ে, গোড়ালির চোট নিয়ে। তাতে করে ভাববেন না বিন্দুমাত্র হেরফের হয়েছে তার নামের। নামে এবং কাজে দুই দিক দিয়েই এখনও ইউরোপের সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকায় আছেন তিনি।

যে কারণে ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকে নিয়ে কথা উঠছে বড় বড় দলের। তার নাম জড়িয়ে গিয়েছে বড় বড় দলের সাথে। সার্জিও রামোসকে দলে নেওয়ার জন্য বড় বড় দলতাও রাজি, কিন্তু শেষমেশ কোন দলে ভিড়বেন রামোস? কোন দলের ডিফেন্স আর লিডারশিপ দুই-ই নিজের কাঁধে তুলে নিবেন রামোস? সেটা ঠিক করবেন তিনি নিজেই।

যদিও বলেছেন এই সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিবেন, তাতে করে তো আর গুজব থেমে থাকে না। কোথায় যোগ দিবেন নিয়ে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বই অবাক তাকিয়ে রয়েছে। তার সম্ভাব্য ক্লাবের তালিকাটা কিন্তু ছোট নয়।

তবে এই তালিকা থেকে তিনটি দলকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি নিজেই। সেভিয়া, বার্সেলোনা আর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ; রিয়ালের রাইভাল দলের ধারেকাছে ঘেঁষছেন না তিনি। বাকি দলগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

  • এসি মিলান

ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে আখ্যাতিত জকরাহয় পাওলো মালফিনিকে। সেই মালদিনি সরাসরি বলেছেন, সার্জিও রামোস হচ্ছে আমার ডিফেন্সের উত্তরসূরি। মালদিনিকে রামোসও মানেন আইডল হিসেবে। আর সেই মালদিনি যখন আছেন মিলানের ট্রান্সফারের দায়ত্বে, নিজের পছন্দের খেলোয়াড়কে কি সহজে ছেড়ে দিবেন? দিবেন না, সার্জিও রামোসের তাই মিলানের জার্সি গায়ে চড়ানোর সম্ভাবনা অনেক।

যদিও তাদের ডিফেন্সে স্তম্ভ হিসেবে খাড়া হয়ে গিয়চেহন ড্যানিশ সিমোন কায়ের ও ইঙ্গিশ ফিকায়ো তোমোরি, কিন্তু দুজনেই লিডিংয়ের দিক দিয়ে ততটা দক্ষ নন। এমনকি দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ভাবা রোমানলির কন্ট্রাক্ট নিয়েও চলছে ঝামেলা। সব মিলিয়ে স্ররজিও রামোশ হতে পারেন তাদের সব সমস্যার সমাধান। একই সাথে ডিফেন্ডার ও লিডার পাওয়া এসি মিলানের চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রায় বেশ বড় সাহায্য করবে।

  • চেলসি

মাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে চেলসি। তাও সেটা সার্জিও রামোসের সামনে দিয়েই। কিন্তু তাতে বলে তাদের সব কার্যক্রম থেমে থাকবে তা নয়। ইতোমধ্যে দলের মূল দুই ডিফেন্ডারকে চুক্তিতে রাজি করানোর জন্য বসেছে তারা। কিন্তু কেউই ঠিকভাবে রেসপন্স করেননি।

অ্যান্তোনিও রুডিগার এবং আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনের সম্ভাবনা আছে নতুন ক্লাব খোজার। যদি তারা নতুন ক্লাবের খোঁজ শুরু করে তবে ডিফেন্সে নিয়মিত হওয়ার মতন তারকা প্রয়োজন হবে চেলসির। আর সেখানেই কাজে দিতে পারে সার্জিও রামোস।

তবে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে থমাস টুখেল একটা ইয়াং ডিফেন্সিভ জুটি ছেড়ে রামোস-সিলভাতে মত্ত হবেন কীনা তাও একটা প্রশ্ন। ইংলিশ লিগে ৩০+ দুইজন ডিফেন্ডার নিয়ে নামা সুইসাইডের সামিল। যতই অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হন না কেন তারা। সেক্ষেত্রে রামোস ডিল ভেঙেও পরতে পারে।

  • ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

এই গ্রীষ্মে রামোসের সম্ভাব্য গন্তব্যের মধ্যে উপরের দিক আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাকে দলে নেওয়ার জন্য কমদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে নেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০১৫ সালেই তাকে নেওয়ার জন্য উঠেপরে লেগেছিল তারা। ডে হ্যেয়া আর রামোসের সোয়াপ ডিলও করতে চেয়েছিল তারা। ধোপে টেকেনি সেই প্রস্তাব।

এত বছর পরেও তাদের সেই ডিফেন্সের সমস্যা মেটেনি। হ্যারি ম্যাগুইয়ার একপাশ ধরে খেললেও আরেকপাশ উদোম হয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। যে কারণে ডিফেন্সে আরেকজন শক্ত খেলোয়াড়ের প্রয়োজন। আর সেটাই হতে পারেন রামোস। ইউনাইটেডে যোগ দিলে পয়সার ব্যাপারেও খুব একটা ভাবতে হবে নাতাকে। সেই সাথে আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল।

ওলে গুনার নিজের ডিফেন্সের জন্য হন্যে হয়ে ডিফেন্ডার খুজছেন। সেজন্য তার দুই সতীর্থ রাফায়েল ভারান এবং স্বদেশী পাও তোরেসের দিক গাত বাড়িয়েছে। কিন্তু রামোসকে পেয়ে গেলে একের ভেতর দুই হয়ে যাবে তার জন্য। তবে ওলে গুনার যেভাবে ভবিষ্যতের জন্য দল গড়ছেন, সেখানে রামোস জায়গা পাবেন কী না সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তবে এডিনসন কাভানির অসাধারণ মৌসুম ভুল প্রমাণ করেছে ওলে গুনারকে। সে হিসেবে এক্সপেরিয়ান্সড রামোসকে ভেরালেও অবাক হবে না কেউ।

  • রোমা

তালিকার এই নামটা একটু বেশিই অদ্ভুত। ইউরোপে খুব একটা পরিচিত নাম নয় এটি, এমনকি ইউরোপে রোমার পরিচয়ের বেশিরভাগই ফ্রান্সেস্কো টট্টির সুবাদে। কিন্তু নতুন ম্যানেজমেন্টের আন্ডারে বদলে যেতে শুরু করেছে রোমা। আর তাদের ডাগ-আউটে কে বলতে পারবেন? জোসে মোরিনহো। সার্জিও রামোসের পছন্দের কোচ। যিনিই রামোসকে তৈরি করেছেন আজকের লিডার হিসেবে।

রামোস আছেন নিজেকে প্রমাণ করার লক্ষ্যে আর জোসে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। দুজনকেই অনেকটা বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে মিডিয়া। কিন্তু বিশ্ব দেখেছে দুজন এক হলে কী হতে পারে। সব মিলিয়ে রোমাও হতে পারে রামোসের ভবিষ্যৎ গন্তব্য। তবে এখানে গেলেও তাকে নিতে হবে বড় পরিমাণ একটা পে-কাট। সেই সাথে এই মৌসুমে তাদের ইউরোপে না থাকাটাও বড় ফ্যাক্টর।

  • এমএলএস/ ইন্টার মায়ামি

রামোশের জন্য এমএলএসের মতন জায়গা আর কিচ্ছুটি হয় না। রামোসের ফুটবল ক্যারিয়ার পুরোটাই রিয়াল মাদ্রিদ্ময়। সে বিশ্বের যে প্রান্তেই তিনি যান না কেন, কোন না কোন একভাবে রিয়ালের সাথে দেখা হওয়ার একটা সম্ভাবনা তার থেকেই যায়। কিন্তু এমএলএস হলে তা একেবারে নেই বললেই চলে।

শুধু তাই নয়, এমএলএস থেকে ইউরোপে এসে ধারে খেলাটাও নতুন কিছু নয়, সেক্ষেত্রে চাইলে ধারেও খেলতে পারবেন ইউরোপের কোনো দলে। সেই সাথে টাকা পয়সারও অভাব হবে না। রামোস দিন কাটাতে পারবেন রাজার হালে, সেই সাথে ফুটবল খেলেও।

সেই সাথে ইন্টার মায়ামিতে আছেন তার বন্ধু ও একসময়ের সতীর্থ ডেভিড বেকহ্যাম। বলতে গেলে সেই ক্লাবের মালিকই তিনি। সেই দলে রামোশের সুযোগ পাওয়া নিয়ে দ্বিয়ীওয় কোনো প্রশ্ন আসবেই না। আর সেখানে বেকহ্যাম তার দলকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন সেরা হিসেবে, সেই দলের লিডার হিসেবে রামোশের থেকে যোগ্য কে-ই বা হতে পারে?

তবে এখানে সমস্যা একটাই। এখানে যাওয়া মানেই ইউরোপের রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়া। স্পেন জাতীয় দলের অধিনায়ক এভাবে রাডার থেকে হারিয়ে যাবেন, এমনটা হওয়া অনেকটাই অসম্ভব। রামোসও চান ইউরোপে ফাইট করে নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে। সে হিসেবে এমএলএস বেশ পিছিয়ে আছে।

  • প্যারিস সেন্ট জার্মেইন

পুরো ইউরোপে যদি কোনো একটা দল থাকে, যারা কীনা রামোসের সকল ইচ্ছে পূরণ করার সামর্থ্য নিয়ে বসে আছে, সেই দলটা অবশ্যই অবশ্যই প্যারিস সেন্ট জার্মেইন। নাসের-আল-খেলাইদির সলের সামর্থ্য আছে সবটা করার।

পিএসজির প্রয়োজন চ্যাম্পিয়নস লিগ ও একজন লিডার, যে কীনা মাঠের ভেতরে-বাইরে দুই জায়গা থেকেই সমানভাবে দলকে লিড করতে পারবেন। অনুদিকে রামোশের প্রয়োজন একমন একটা দল যারা এখনোও ইউরোপে সমানভাবে ফাইট করতে পারবে রিয়ালের মত। আর বিশাল পরিমান বেতন।

ব্যস, খাপে খাপ মিলে গেল। সার্জিও রামোসের সব ইচ্ছে যেমন পূরণ করতে পারবেন খেলাইফি, তেমনই রামোস পারবেন খেলাইফির ইচ্ছে পুরণ করতে। শুধু তাই নয়, মাউরিসিও পচেত্তিনোর অধীনে দলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একজন লিডারের।

কোচ হিসেবে খুব একটা ভোক্যাল নন তিনি। যে কারণে অধিনায়ক হিসেবে থাকা মার্কুইনোসও পারেন না সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে। সব মিলিয়ে রামোস আর পিএসজি দুইপক্ষের জন্যই অসাধারণ একটা ডিল হবে এটি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...