স্পিনের মোচড়ে পাল্টে যাওয়া স্বপ্ন

১৪ বছর বয়সে শরীরের নিম্নাংশে প্রবল চোট পান। এই চোটের ফলে কোমরের হাড়ের মাঝের লিগামেন্টে চিড় ধরে। একটি হাড়ের সাথে অন‍্য হাড়ের যেখানে জোড়া লেগেছে সেখান হতে ক্রমাগত রক্ত বেরোতো। একজন চিকিৎসক তো বলেই দিলেন, আর ক্রিকেট খেলবার মতো অবস্থায় হয়তো তিনি ফিরতে পারবেন না। এরপর একজন অস্থি বিশেষজ্ঞের বদান্যতায় ৩-৪ মাস ধরে শুশ্রূষায় সুস্থ হলেন, যদিও মাঠে ফিরলেন ৮-৯ মাস পর।তখনও খোঁড়ানো ভাবটা যায়নি যদিও!

কিছু ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করা বাবাই ছেলেটির আদর্শ। বাবার মতোই পেস বোলার হতে চায় সে। উল্টোদিকে ব‍্যাটের হাতটিও অসাধারণ। ওপেনিংয়ে তার জায়গা বাঁধা। ইনিই যে একদিন কুম্বলে-ভাজ্জি পরবর্তী জমানা তথা শেষ দশকে ভারতের সেরা স্পিনার হয়ে উঠবেন তা কি তিনি নিজেও ভেবেছিলেন? সম্ভবত না!

ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাবা-মার কোনো আপত্তি ছিল না। তবে, তাঁকে পরিবারের তরফ থেকে এই বোঝানো হয়েছিল ক্রিকেটের সাথে পড়াশোনাটাও খুবই জরুরী। যাইহোক ওপেনিং ব‍্যাটিং এর সাথে পেস বোলিং এবং পড়াশোনা ভালো ভাবেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ ঘটে গেলো একটি দূর্ঘটনা যা তাঁর গল্পের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিল ৩৬০ ডিগ্রি কোনো।

১৪ বছর বয়সে শরীরের নিম্নাংশে প্রবল চোট পান। এই চোটের ফলে কোমরের হাড়ের মাঝের লিগামেন্টে চিড় ধরে। একটি হাড়ের সাথে অন‍্য হাড়ের যেখানে জোড়া লেগেছে সেখান হতে ক্রমাগত রক্ত বেরোতো। একজন চিকিৎসক তো বলেই দিলেন, আর ক্রিকেট খেলবার মতো অবস্থায় হয়তো তিনি ফিরতে পারবেন না। এরপর একজন অস্থি বিশেষজ্ঞের বদান্যতায় ৩-৪ মাস ধরে শুশ্রূষায় সুস্থ হলেন, যদিও মাঠে ফিরলেন ৮-৯ মাস পর।

তখনও খোঁড়ানো ভাবটা যায়নি যদিও!

এই ক’দিনেই তার পৃথিবীটা বদলে গেলো। পেসার হওয়ার ইচ্ছার সেখানেই অপমৃত্যু। কিন্তু থেমে থাকলেন না তিনি। স্পিন বোলিং শুরু করলেন। ধীরে ধীরে এতেও সাফল্য আসতে শুরু করলো। বাকিটা ইতিহাস।

এরপর গল্পটা স্বপ্নের মতন। ২০ বছর বয়সে ২০০৬ সালে তামিলনাড়ুর হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক, আর পরের বছরই দলের অধিনায়ক। প্রচারের আলোয় আশা শুরু ২০১০ সালের আইপিএলের মাধ্যমে, যে ‘বিলিয়ন ডলার বেবি’ বহু ক্রিকেটারের ভাগ্য পাল্টে দিয়েছে। সে বছরই আন্তর্জাতিকে অভিষেক আর পরের বছর ভারতীয় ক্রিকেটের অন‍্যতম সেরা দল, ২৮ বছর পর দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য।

৬ নভেম্বর ২০১১। তার ক্রিকেট ক‍্যারিয়ারের অন‍্যতম সেরা দিন যখন তার টেস্ট অভিষেক হয় দিল্লীর তৎতালীন ফিরোজ শাহ কোটলাতে। একজন ক্রিকেটারের সর্বদা স্বপ্ন একদিন দেশের হয়ে সাদা জার্সিটা গায়ে নেওয়ার।

তাঁর স্বপ্নও পূরণ হল। আর অভিষেকেই বুঝিয়ে দিলেন পায়ের মাটিতা তাঁর কত শক্ত। নয় উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচ সেরা। ওই সিরিজের শেষ টেস্টে মুম্বাইয়ে শতরান ও ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে যান। জুটে যায় সিরিজ সেরার পুরস্কার। তখন থেকেই সাদা পোশাকে অন‍্যতম মহান হয়ে উঠবার আভাস দিচ্ছিলেন প্রবল ভাবে।।

এরপর টেস্টে দ্রুত উইকেট নেওয়ার রেকর্ড একের পর এক ভাঙতে থাকলেন।।রবীন্দ্র জাদেজার সাথে তার জুটিতে দেশের মাটিতে একের পর এক সাফল্য এনে দিল ভারতকে। এর মধ্যে বিদেশে ততটা না সাফল্য পাওয়ার জন্য সমালোচিত হতে হলো।যা এখনও হতে হয়, যা তাঁকে হয়তো কষ্টও দেয়।

এরমধ্যেই ২০১৩ আইসিসি চাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের মাটিতে অসাধারণ সাফল্য পেলেন। সাথে ভারত দলও চাম্পিয়ন হলো। ফাইনালে তার স্পেলটি কারোই ভুলবার কথা নয়। যদিও, সাদা বলের ক্রিকেটে পরবর্তীতে স্থায়ী জায়গা মেলেনি তাঁর।

সেই মানুষটি হল রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নিজের ও দলের প্রয়োজনে সর্বদা নিজেকে গড়েছেন, ভেঙেছেন। অনিল কুম্বলে পরবর্তী জমানা ভারতের অন‍্যতম সেরা টেস্ট ম‍্যাচ উইনার হয়ে উঠেছেন তিনি বল হাতে। তাঁকে ঘিরে সমালোচনা অবশ্যই আছে, হয়তো তাঁর কিছু কিছু যৌক্তিকও। তবে, কে জানে হয়তো সমালোচনার জবাবটা রেকর্ড দিয়ে দেওয়ারই অপেক্ষায় আছেন তিনি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...