ছাপোষা মধ্যবিত্তের আগুনে তেজ

দেখতেও তো একেবারে বুড়োদের মতই। শরীরে ট্যাটু নেই, সুন্দর চেহারা নেই। বাচ্চারা রোল মডেল বাছবে কখনও? বাড়িতে দেওয়ালে রঙিন পোস্টার দেবে কেউ? তারপরও, কি আছে তাহলে সাধারণ লোকটার মধ্যে? আগুনে জেদ আছে, ৯০ মিনিট লড়াই করার অদম্য ইচ্ছে আছে। যা জার্মানির খেলোয়াড়দের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মধ্যে মেশানো আছে।

বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারের মধ্যে একজন? না।

নিজের দেশের সেরা স্ট্রাইকার? না।

গল্পটা একটা খুব সাধারণ লোকের গল্প। যার না আছে বিশাল স্কিল, বিশাল স্পিড, না আছে মারাত্মক শুটিং। স্ট্রাইকারের প্রধান গুণগুলোই তো নেই। শুধু হেডিং নিয়ে কিসের স্ট্রাইকার?

দেখতেও তো একেবারে বুড়োদের মতই। শরীরে ট্যাটু নেই, সুন্দর চেহারা নেই। বাচ্চারা রোল মডেল বাছবে কখনও? বাড়িতে দেওয়ালে রঙিন পোস্টার দেবে কেউ? তারপরও, কি আছে তাহলে সাধারণ লোকটার মধ্যে?

আগুনে জেদ আছে, ৯০ মিনিট লড়াই করার অদম্য ইচ্ছে আছে। যা জার্মানির খেলোয়াড়দের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মধ্যে মেশানো আছে।

আর বিশ্বাস আছে, নিজের ও সতীর্থদের উপর। বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচে বদল হবার সময় অল্পবয়সী সতীর্থকে বলেছিলেন, ‘যা,তুই ই গোল করে আমাদের বিশ্বকাপ জেতাবি,তুই ই পারবি!’ ২৪ বছর পর তারই গোলে এসেছিল বিশ্বকাপ। একটি নতুন ছেলের উপর এতবড়ো ইভেন্টে তার পিঠ চাপড়ে আত্মবিশ্বাস জাগাতে কতজন পারে? বলতে বুকের ধক লাগে।

আরেকটা জিনিসও আছে যেটা বর্তমানে প্রায় ফসিল হয়ে গেছে। সততা।

লাজিও বনাম নাপোলির মত ম্যাচে হাতে লেগে গোল হবার পর যখন রেফারির গোল দেবার সিদ্ধান্তে গ্যালারি অগ্নিগর্ভ, নিজে রেফারির কাছে গিয়ে এটা ন্যায্য গোল নয়, বলতে বুকের ধক লাগে। সারা স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিল সেইদিন।

‘রেফারি জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার হাতে বল লেগেছিল কিনা। হ্যাঁ বললাম। রেফারিকে মিথ্যে বলাই যেত। আমার দল জিতত। কিন্তু যে ছেলেটা আমার ছবি জমায়, আমায় রোল মডেল ভাবে, তাঁদের বিশ্বাস ভাঙতে পারব না। টিভিতে আমার মিথ্যাটা ধরা পড়লে খেলাটার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে তারা। এই কাজ করতে পারব না।’

হয়ত গোলস্কোরিং অ্যাবিলিটি কম। কি যায় আসে তাতে? লোকটা কিংবদন্তি জার্ড মুলার নন যার প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে গোল আছে, যিনি অবিশ্বাস্য রেকর্ডের মালিক।

লোকটা রুমেনিগেও নন যিনি দাপটে খেলে গোলের পর গোল করে গেছেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের মত হাত ভাঙা নিয়েও। দুবারের ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অফ ইয়ার।

বিশ্ব কাঁপানো রুডি ভয়লারও নন। দেশের হয়ে প্রায় গোলের হাফ সেঞ্চুরি আছে যার।

সোনালী চুলের ক্লিন্সম্যানও নন যিনি বিশ্বকাপ, ইউরো, বড় বড় ক্লাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ৯০ দশকে। দুটো দশকের হার্টথ্রব।

আরও অনেক জার্মান ফরোয়ার্ডের নাম আছে যাদের জন্য গর্বিত দেশ – বিয়েরহফ, হ্রুবেস, হেলমুট রান, সিলার, ওয়াল্টার, রিডল, মরলক, পোডোলস্কি থেকে বর্তমানের দিনের মুলার, রয়েস, গোটজে।

এঁদের মত এতকিছু না থেকেও চলুন না গুগলে সার্চ করি একটু বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও জার্মানির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার নামটা?

মিরোস্লাভ ক্লোসা। একটা ছাপোষা মধ্যবিত্ত লোকের সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার কাহিনী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...