ভারতের নতুন আজহারউদ্দিন!

মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে কে না চেনে! দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান - ডাইনামিক অধিনায়ক, তুখোড় ব্যাটসম্যান আর এরপর ফিক্সিং কেলেংকারি! যদিও সে ফিক্সিং কেলেংকারি নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি, তবে ভারতীয় জনমনে এখনও আজহারউদ্দিন বেঁচে আছেন বহাল তবিয়তে। ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের চোখে আজো লেগে আছে তাঁর চোখ জুড়ানো ব্যাটিং। ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের চোখে আজো লেগে আছে তাঁর চোখ জুড়ানো ব্যাটিং।

ভারতে চলছে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি। সেটা অবশ্য পুরনো খবর। নতুন খবর হল, ভারতের ঐতিহ্যবাহী এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে কেরালার একজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৩৭ বলে, ইনিংস শেষে যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ বলে ১৩৭ রানে!

পুনিত বিশ্ব’র পর যা মুশতাক আলী ট্রফির সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও! ৩৭ বলে কেউ যখন সেঞ্চুরি করে তখন তাঁকে নিয়ে কথা হবেই, কিন্তু মুশতাক আলী ট্রফির এই সেঞ্চুরিয়ানকে নিয়ে কথা বলার আরও কারণ আছে। তিনি সেঞ্চুরি করে ব্যাট দিয়ে নিজের এই নামটাই দেখিয়েছেন। কি তাঁর নাম – মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন!

মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে কে না চেনে! দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান – ডাইনামিক অধিনায়ক, তুখোড় ব্যাটসম্যান আর এরপর ফিক্সিং কেলেংকারি! যদিও সে ফিক্সিং কেলেংকারি নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি, তবে ভারতীয় জনমনে এখনও আজহারউদ্দিন বেঁচে আছেন বহাল তবিয়তে।

ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের চোখে আজো লেগে আছে তাঁর চোখ জুড়ানো ব্যাটিং। শুধু কি তাই, বলিউড ইন্ডাস্ট্রি তো তাকে নিয়ে আস্ত একটা বায়োপিকও বানিয়ে ফেলেছে। সেই আজহারউদ্দীনের নামের কেউ যখন  ওয়াংখেড়েতে ১১ ছক্কায় এমন এক ইনিংস খেলে- তখন  তো তা নিয়ে কথা হবেই!

সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক আজহারউদ্দিনের প্রভাবের কথা বলছিলাম। এই প্রভাবের সবচাইতে বড় উদাহরণ সেঞ্চুরিয়নের নাম যে আজহারউদ্দিন সেটাই। গল্পটা তাহলে একটু খুলে বলা যাক।

ভারতের এই নতুন আজহারউদ্দিনের জন্ম ১৯৯৪ সালে, কেরালাতে। সদ্যজাত শিশু জন্মালে নাম রাখাটাই প্রথম কাজ, তা সেই প্রথম কাজ করতে তাঁর বাবা মা ভাবছিলেন ভিন্ন কিছু করতে। তবে সেই ভিন্ন কিছুকে মোটামুটি  ‘উল্লেখযোগ্য’ করে ফেলেন আজহারউদ্দিনের বড় ভাই কামারউদ্দিন।

সদ্যজাত ছোট ভাইয়ের নাম তিনি রাখেন প্রিয় ক্রিকেটারের নামেই। শুধু তাই না, ছোট ভাই আরেকটু বড় হলে তিনি সবাইকে বলতেন, ‘আরেকটা আজহারউদ্দিন তৈরি হচ্ছে।’  বোঝাই যাচ্ছে, নবীণ প্রবীণের এই নামের মিল কোনভাবেই কাকতালীয় কিছু নয়, বরং এই নামের পেছনে আছে উদ্দেশ্য আর সেই উদ্দেশ্যভরা স্বপ্ন!

ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছেন ২০১৫ এর নভেম্বরে, গোয়াতে। তখন থেকে ২২ ম্যাচ খেলে তিনি করেছেন ৯৫৯ রান, গড় ২৫ এর আশেপাশে।  টি-টোয়েন্টিতে ২১ ম্যাচে তিনি করেছেন ৪০৪ রান, যার মধ্যে গত ম্যাচের ১৩৭ রানের ইনিংসটি ছিল।

তাঁর মানে গত ম্যাচের ইনিংসটা বাদ দিলে তাঁর পরিসংখ্যান যথেষ্টই মলিন। বোঝাই যাচ্ছে, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এর আগে ঠিক এতটা সিদ্ধহস্ত ছিলেন না তিনি। আর তাঁর প্রমাণ তো এটাই- এর আগে তিনি কখনও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ডাক পাননি।

তবে তাতে ডাক না পেলেও বয়সভিত্তিক দলে ঠিকই ছিলেন আজহারউদ্দিন। অনূর্ধ্ব-১৯ আর অনূর্ধ্ব-২৩ এ দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সের পর কেরালার রাজ্যদলে সুযোগ পান তিনি। নামের কারণে শুরু থেকেই তাঁর প্রতি দলের বাকি সদস্যদের একটা বাড়তি আগ্রহ ছিল, ছিল প্রত্যাশাও।

তবে, এই প্রত্যাশার মিলে একটা মজার ব্যাপার কিন্তু ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। যে মাঠে তিনি রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন, সেই মাঠে তাঁর ‘নামের মিতা’ আজহারউদ্দিনের রেকর্ডও কিন্তু ছিল বেশ ভাল।  শচীন টেন্ডুলকারের একরকম ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান যে এই সিনিয়র আজহারউদ্দিনের। তাই ওয়াংখেড়েতেই জুনিয়র আজহারউদ্দীনের বুধবারের ইনিংসটা আরেকটু বেশি আলো কাড়ছে, আর সেটা তো স্বাভাবিকই।

আজহারউদ্দিনের ইনিংসের পর তিনি ম্যাচের পর থেকেই সিনিয়রদের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। বীরেন্দ্র শেবাগই যেমন বলেছেন, ‘বাহ আজহারউদ্দিন, চমৎকার! মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে এমন রান ! ৫৪ বলে ১৩৭ রান আর একা হাতে শেষ করে আসা। আমি উপভোগ করেছি!’

হার্শা ভোগলে অবশ্য সিনিয়র জুনিয়র দুই আজহারউদ্দিনের নামই নিয়েছেন, স্মৃতি রোমন্থন করে বলেছেন, “অনেক বছর আগে আমি মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন নামে অসাধারণ এক খেলোয়াড় দেখেছিলাম। এখনো আমি সেরকমই একজনকেই দেখছি। সে দারুণ শট খেলে।’

কেরালার হয়ে সবচাইতে বেশি রানের টি-টোয়েন্টি ইনিংসটা এখন আজহারউদ্দিনের। এর আগের সর্বোচ্চ রান ছিল রোহান প্রেমের। ২০১৩ সালে দিল্লীর বিপক্ষে তিনি অপরাজিত ৯২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

সেই থেকে এটাই ছিল কেরালার সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সেই রেকর্ড তো আজহারউদ্দীন ভাঙলেনই, সাথে আরো একটা রেকর্ড নিজের করে নিলেন – মুশতাক আলী ট্রফিতে এটাই দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।

প্রশংসা তো অনেক হল, জুনিয়র আজহারউদ্দীনের ছোট্ট ক্যারিয়ারের একটা কালিমার গল্প বলা যাক। ২০১৮-২০১৯ মৌসুমের বিজয় হাজারে ট্রফির ঘটনা, অধিনায়ক শচীন বেবির সাথে অসদারণের দায়ে কেরালা দলের পাঁচজন খেলোয়াড়কে বরখাস্ত করা হয়, আজহারউদ্দিন সেই পাঁচজনের একজন ছিলেন। তা এই ইনিংসের পর সেসব আর কে মনে রাখে!

সত্যিকারের আজহারের সাথে নতুন এই আজহারের দেখাও হয়েছিল। কেরালার কোচ তখন ডেভ হোয়াটমোর, হায়দ্রাবাদের নেটে এসেছিলেন আজহার, সেখান থেকেই ঢুঁ মারেন কেরালা শিবিরে। হাত মিলিয়ে যান আজহারের সাথে। কে জানে, হয়তো এরপরই নিজেকে ‘আজহারউদ্দিন’ বানানোর ভুতটা মাথায় চেপে বসে আজহারউদ্দিনের!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...