হৃদয়ভেদী জার্মান বুলেট

চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তাঁরা। গেল দশকেও তাঁরা একটি বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তুলেছে। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে আরও একটি বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিয়ে ব্রাজিলের সমপর্যায়ে চলে যাওয়ার। সে কাজটা করতে হলে তো জার্মান খেলোয়াড়দের একটু ইতিহাস জেনে নিতে হবে। কি করে তাঁদের পূর্বসূরীরা খেলে গেছেন, গোলে বন্যা বইয়ে দিয়ে গেছেন সেগুলো টপকে যাওয়া স্পৃহা থাকা চাই।

পরাশক্তির যদি কোন সংজ্ঞা হয় তবে ফুটবলে প্রেক্ষাপটে সে সংজ্ঞাটা জার্মানি। ইউরোপের সবচেয়ে দাপুটে ফুটবল খেলুড়ে দল। নিজেদের দিনে কি ভয়ংকর তাঁরা তা বোধহয় ল্যাতিন আমেরিকার দুই দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খুব ভাল করেই যানা। নিজেদের দিনে যেকোন প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে জয় আদায় করে নেওয়া যেন স্রেফ হাত দিয়ে ধুলো ঝেড়ে ফেলা।

তা করেই চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তাঁরা। গেল দশকেও তাঁরা একটি বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তুলেছে। সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে আরও একটি বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিয়ে ব্রাজিলের সমপর্যায়ে চলে যাওয়ার। সে কাজটা করতে হলে তো জার্মান খেলোয়াড়দের একটু ইতিহাস জেনে নিতে হবে।

কি করে তাঁদের পূর্বসূরীরা খেলে গেছেন, গোলে বন্যা বইয়ে দিয়ে গেছেন সেগুলো টপকে যাওয়া স্পৃহা থাকা চাই। তাইতো আজকে হাজির হয়েছি বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের ছোট্ট একটা তালিকা নিয়ে।

  • মিরোস্লাভ ক্লোসা

বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা আর কেউ নন, জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। ২০১৪ বিশ্বকাপে দুই গোল করে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদোর ১৫ গোলের রেকর্ড। চারটি বিশ্বকাপ খেলা ক্লোসা গোলের বিবেচনায় বসে রয়েছেন সবার উপরে। কোন একটি বিশ্বকাপে তিনি অন্তত একটি গোলের দেখাও পাননি এমন নজির নেই।

মোট ১৬ গোল খানা গোল তিনি করেছেন বিশ্বকাপের মত বিশাল বড় এক মঞ্চে। এটা যেন ছিল তাঁর খুব পছন্দের। তিনি যেন বড় মঞ্চেই গোল করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। টানা চার বিশ্বকাপের প্রথমটা তিনি খেলেছিলেন ২০০২ সালে। সেবার করেছিলেন সাত ম্যাচে পাঁচ গোল। এরপর যথাক্রমে ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৪ তে তিনি করেছেন পাঁচ, চার ও দুই গোল।

  • জার্ড মুলার

শারীরিক গঢ়নে খুব একটি চোখে লেগে থাকার মত কেউ ছিলেন না জার্ড মুলার। তবে তিনি নজর কেড়েছেন নিজের পারফরমেন্স নিয়ে। তাতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজের নামটি গোটা গোটা হরফে লিখে রেখে গেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে গোলদাতাদের মধ্যে তাঁর অবস্থান তিন নম্বরে। গঢ়নে খানিকটা খর্বকায় ছিলেন বলেই তিনি দ্রুতই বল নিয়ে ঘুরে যেতে পারতেন। তাছাড়া তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল ‘এক্সেলারেশন’।

সময়ে সময়ে তিনি নিজের গতির তারতম্য ঘটিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণদূর্গ চিড়ে বের হয়ে গোল আদায় করতেন। সে কাজটায় তিনি এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে মাত্র দুই বিশ্বকাপ খেলে তাঁর করা গোলের সংখ্যা ১৪টি। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৭০ সালে। সেবার করেন দশ গোল। পরের টা ১৯৭৪ এ খেলেন। সে আসরে করেছিলেন চার গোল।

  • ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান

জার্মানির হয়ে যে সব ধরণের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গোল করার কৃতীত্ব গড়েছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান। তাঁর স্ট্রাইকিং সক্ষমতার জন্যে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন। ‘লিথ্যাল স্ট্রাইকার’ বলতে যা বোঝায়। তিনি তেমন গোছের খেলোয়াড় ছিলেন। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন জার্মান এই স্ট্রাইকার।

তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ টানা তিন বিশ্বকাপ খেলেছেন। তিন বিশ্বকাপ খেলে ১১ দফা প্রতিপক্ষের জালের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। ৯০ এর বিশ্বকাপ জয়ে তিনি অবদান রেখেছিলেন তিন গোল করে। এরপরের দুই বিশ্বকাপে তাঁর পা থেকে গোল এসেছে যথাক্রমে পাঁচ ও তিন গোল।

  • টমাস মুলার

তাঁর মত একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দলের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে ব্যাপকভাবে। সুতরাং সেদিক বিবেচনায় হয়ত আরও একটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলতে পারবেন মুলার। তিনটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নিংড়ে দিতে পারেন তরুণ জার্মানদের মাঝে।

২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ে তিনি অবদান রেখেছিলেন সামনে থেকেই। গোল করেছেন পাঁচটি। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় তিনি দ্বিতীয় স্ট্রাইকার কিংবা অ্যাটাকিং মিডিফিল্ড পজিশনে খেলেছেন। সেখান থেকেও তিন বিশ্বকাপে তিনি আদায় করে নিয়েছেন দশটি গোল। প্রশংসনীয় বটেই। তবে ২০১৮ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন একেবারেই মলিন। তিন ম্যাচ খেলে ছিলেন গোলশূন্য।

২০২২-এও তাই। গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ খেলেছেন। একবারও গোলের দেখা পাননি। বিশ্বকাপ থেকে ফিরেছেন খালি হাতে। জার্মানিও তাই। আর কখনওই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না তাঁকে।

  • হেলমাট রান

১৯৫৪ সালে জার্মানি প্রথমবারে মত স্বাদ পেয়েছিল ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের। সে বিশ্বকাপের ফাইনালে একাই দুই গোল করেছিলেন হেলমাট রান। আর রানের সেই রানওভারের ফলশ্রুতিতে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরির। দূর্দান্ত ছন্দে থাকা হাঙ্গেরি ২-০ তে এগিয়ে গেলেও পরে ম্যাচটি হেরেছিল ৩-২ ব্যবধানে। তবে সে ফাইনাল ছাড়াও হেলমাট রান আরও আটখানা গোল করেছেন বিশ্বকাপের মহামঞ্চে।

তবে ১৯৫৪ সালে তিনি ফাইনালের আগে কেবলমাত্র দুইটি গোল করেছিলেন। তবে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপেই আবারও ছয় দফা লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম হয়েছিলেন রান। তবে নিঃসন্দেহে ১৯৫৪ এর ফাইনালে করা তাঁর সেই দুই গোলের জন্যে চিরকাল ইতিহাসে অমর হয়ে রইবেন হেলমাট রান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...