সুমনের দশ উইকেট জায়গা করে নিয়েছে ভারতের ইতিহাসে

বিহারের, সমাস্তিপুরের এই বাম হাতি স্পিনার কুচ বিহার অনূর্ধ্ব১৯ টুর্নামেন্টে রাজস্থানের বিপক্ষে চমৎকার একটি ম্যাচ খেলেছেন। তিনি সেই ম্যাচে একাই ১০টি উইকেট শিকার করেন। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে তিনিই প্রথম যে এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছেন।

এক চমৎকার হাস্যজ্জ্বল মুখে বিহারের ১৮বছর বয়সী সুমন কুমার বলেন ‘আমাকে বিহারের জাড্ডু বলা হয়।’ বিহারের, সমাস্তিপুরের এই বাম হাতি স্পিনার কুচ বিহার অনূর্ধ্ব ১৯ টুর্নামেন্টে রাজস্থানের বিপক্ষে চমৎকার এক দিন পার করেছেন। তিনি সেই ম্যাচে একাই প্রতিপক্ষের ১০টি উইকেট শিকার করেন। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে তিনিই প্রথম যে এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছেন।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সকল টুর্নামেন্টে মিলিয়ে তিনি দ্বিতীয় যিনি এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে হরিয়ানার পেসার অংশুল কম্বোজ রঞ্জি ট্রফিতে কেরালার বিপক্ষে একাই এক ইনিংসে ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন।

সুমনের ভাষ্যমতে, ‘খেলা হয়েছিল ব্যাটিং পিচে। স্বাভাবিক ভাবেই বোলাররা এই পিচে হিমশিম খায়। আমাদের দল এই পিচে ৪৬৭ রান করতে সক্ষম হয়। রাজস্থান শক্তিশালী দল, কিন্তু তাদের ব্যাটাররা প্রথম থেকেই নড়বড়ে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাচের আগের সবাই বলছিল যে রাজস্থানের ব্যাটাররা এই ম্যাচে আমাকে ধুলিস্মাৎ করে দেবে। আমি এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করলাম। যখন আমি পাঁচটি উইকেট বাগিয়ে নিলাম তখন আমার দল এবং ক্যাপ্টেন আমার কাছে দৌড়ে আসলো। আমার ক্যাপ্টেন আমাকে বললেন ”আজকে তোমারই দিন, চালিয়ে যাও।” আরো ৩৩ওভার বোলিং করার পর বাকি পাঁচটি উইকেটও আমার দখলে চলে আসলো।’

নিজের এমন কীর্তি সম্পর্কে সুমন বলেন, ‘যখন আমি স্পিন করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছিলাম তখন আমি আর্ম বল করা শুরু করলাম। এটি ছিল স্বপ্নের মতো, আমার কৌশল কাজে লাগতে শুরু করলো। আমি একই ধারায় বল করতে লাগলাম। রাজস্থানের ব্যাটাররা আমার বোলিংকে ভয় পাচ্ছিল। তারা ডিফেন্সিভলি খেলতে শুরু করলো যা আমাকে সহায়তা করেছিল। এমনকি ম্যাচ রেফারিও আমার প্রশংসা করেছিলেন।’

সুমনের এই অসাধারণ ইনিংসের পেছনে রয়েছে ভারতের তারকা খেলোয়াড় রবীন্দ্র জাদেজার অনুপ্রেরণা। সুমন মূলত পাঁচটি উইকেট শিকারের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে দশটি উইকেট শিকার করতে সক্ষম হন।

বাম হাতি স্পিনার এবং ডান হাতি এই ব্যাটার এখন পর্যন্ত তার আইডল রবীন্দ্র জাদেজার সাথে দেখা করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তার কাছে রয়েছে জাদেজার ম্যাচ উইনিং এমন অসংখ্য ভিডিও যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে শাণিত করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সুমন বলেন, ‘কিভাবে ফ্ল্যাট উইকেটে বল করতে হয় তা আমি রবীন্দ্র জাদেজার থেকে শিখেছি। তার সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। তিনি আমার শৈশবের নায়ক। তার সাথে দেখা করতে পারা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমি তাকে অনুসরণ করার মাধ্যমেই অনেক কিছু শিখেছি।’

জাদেজার কাছে তার রয়েছে আরও কিছু প্রশ্ন। কখনো সান্নিধ্য পেলে তিনি জিজ্ঞেস করবেন নানা বোলিং কৌশল। এ বিষয়ে সুমন বলেন, ‘আমার জাদেজার কাছে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কিভাবে তিনি ফ্ল্যাট পিচে বল করেন, কিভাবে সে ব্যাটারদের প্রতিহত করেন এসব প্রশ্ন রয়েছে আমার। আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলা। জাদেজার মতো একজন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা এবং দেশের সম্পদে পরিণত হওয়া। আমি আমার নিজের পরিচয় গড়তে চাই।’

বাঁ-হাতি এই স্পিনার ভারতের জন্য যে এক বড় সম্ভাবনার নাম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার নিজেকে গড়ে তোলার অনেক সুযোগ রয়েছে। এখনও পাড়ি দিতে হবে বহুদূর পথ। সম্ভাবনার অসীম সাগরে তিনি হারিয়ে যাবেন, নাকি খুঁজে নেবেন সাফল্যের সজীবতা- সেসবে জন্যে করতে হচ্ছে অপেক্ষা।

 

Share via
Copy link