চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার নূন্যতম লক্ষ্য কি? রাফিনহার সরল স্বীকারোক্তি ‘শিরোপা জেতা’। না, মুখে কোন বাড়তি আবেগ ছিল না; বলার জন্য বলা এমন কিছুও নয়। একেবারে ঠান্ডা মাথায় কথাটা বলেছিলেন তিনি, আর নিজের সেই বার্তা প্রমাণ করতে মাঠে সেরাটা দিতে এতটুকু কার্পণ্য করছেন না।
ম্যাচের পর ম্যাচ; হোম কিংবা অ্যাওয়ে, সবল কিংবা দুর্বল প্রতিপক্ষ – ব্রাজিলিয়ান তারকা উড়ছেন নিজের মত করে। বার্সেলোনা নামক গাড়ির হুইল নিজের হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন দানবের মত করে, সামনে যেই আসছে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
এইতো ইনফর্ম আটালান্টার বিপক্ষে জোড়া অ্যাসিস্ট করেছেন এই রাইট উইঙ্গার। ইতালিয়ান প্রতিনিধিদের আগ্রাসী ট্যাকটিক্সের বিপরীতে বার্সার ত্রাতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিরতির ঠিক পরে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দারুণ একটা বল বানিয়ে দিয়েছিলেন লামিন ইয়ামালকে; এরপর আবার সেট পিসে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন রোনাল্ড আরাউহোকে দিয়ে গোল করিয়ে।
কাতালান জায়ান্টরা জিততে পারেনি, ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছে। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না, পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে থেকেই সরাসরি শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে তাঁরা। সেই সাথে স্রেফ আট ম্যাচে ২৮ গোল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁদের হিংস্রতা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টা গোল দিয়েছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ব্যবধানটাও চোখে পড়ার মত।
এই দাপুটে পরিসংখ্যানের পিছনেও সবচেয়ে বেশি অবদান রাফিনহার। কোন পেনাল্টি ছাড়াই আট গোল করে টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতার তালিকায় তিন নম্বরে আছেন তিনি; অথচ নয় গোল করে যৌথভাবে শীর্ষে থাকা লেওয়ানডস্কি এবং সারহৌ গুইরাসি পেয়েছেন যথাক্রমে তিনটা ও চারটা পেনাল্টি গোল।
শুধু গোল করাই নয়, চারটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্টও করেছেন রাফিনহা। অর্থাৎ, এই আসরে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখা খেলোয়াড় তিনি! বার্সার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক আসরে এর চেয়ে বেশি গোলে অবদান রেখেছেন মাত্র দুজন—লিওনেল মেসি ও লুইস ফিগো।
সোজা কথায়, রাফিনহা এখনই যেন কিংবদন্তিদের কাতারে পা রাখার অপেক্ষায়! যতই সমালোচনা থাকুক, যতই সংশয় থাকুক—এই মুহূর্তে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে রাফিনহাই বার্সেলোনার সিংহাসনের যোগ্য উত্তরাধিকারী! নাটকের দৃশ্যপট একদিকে বাঁক নিলে অন্যদিকে রাজা বদলে যান, কিন্তু এই মঞ্চে নাটকের কুশীলব একটাই। আর সেই নাম — রাফিনহা!