ফাস্ট বোলিংয়ের যীশু

আমার কাছে অ্যান্ডি রবার্টস ছিলেন বোলিংয়ের যীশুখ্রীস্ট। যীশুসুলভ সৌন্দর্যময় বোলিং অ্যাকশন ছিল এই ভদ্রলোকের। পেস বোলিং তার যাবতীয় ভয়াবহতা ও নিষ্ঠুরতার অনিবার্য মুখোশ সরিয়ে রাখত তার হাতে পড়লে। তার হাতে পড়লে পেস বোলিং হয়ে যেত সযত্নে লালিত পেস ও সুইং শিল্পসামগ্রী। যা খেলার দরকারই পড়ত না অধিকাংশ সময়ে, কারণ ওগুলো খেলা এককথায় অসম্ভব ছিল। ওনার শীতল চাহনিতেই অর্ধেক উইকেট দিয়ে যেত ব্যাটসম্যানরা। বাকি অর্ধেক জাদুকরী বোলিংয়ে সম্মোহিত হয়ে।

যার কথা বলছি, তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৫১ সালের ২৯ জানুয়ারি, অ্যান্টিগার আর্লিংস ভিলেজ এলাকায়। তিনি ছিলেন ডানহাতি ফাস্ট বোলার, যিনি ব্যাটিংও করতেন ডানহাতে। তিনি অ্যান্ডি রবার্টস, ভয়ংকরতম ফাস্ট বোলিংয়ের শেষ কথা।

ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও লিচেস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম দুইটি প্রতিযোগিতার (১৯৭৫ আর ১৯৭৯) বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রবার্টন। তিনি ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে দশম উইকেটে উইকেটরক্ষক ডেরেক মারে’র সাথে ৬০ রানের জুটি গড়ে দলকে নাটকীয়ভাবে জয় এনে দেন।

সত্তরের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার ও কলিন ক্রফটের সাথে দলের বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যান্ডি রবার্টস। এই চারজনের বোলিং আক্রমণের উপর ভর করে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন বিশ্বক্রিকেটে সর্বগ্রাসী একাধিপত্য বিস্তার করেছিল। দশ বছরের কম সময় খেললেও বিশ্বের সব সেরা দলগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

টেস্টে চমৎকার রেকর্ড থাকা স্বত্ত্বেও তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন দশ বছরেই শেষ হয়ে যায়, মূলত আঘাত প্রাপ্তির কারণে। এবং তরুণ ফাস্ট বোলারদের জায়গা করে দিতে ১৯৮৩ সালে তার স্বল্পকালীন খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। দলের সিনিয়ার ফাস্ট বোলার হিসেবে পরবর্তীতে তিনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলেন ওয়েন ড্যানিয়েল, কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোসকে।

তাঁর বোলিংয়ের মাধ্যমেই পরবর্তী প্রায় ২৫ বছরব্যাপী ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিং আক্রমণের দুরন্ত আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। তাই তাঁকে ‘আধুনিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলিংয়ের জনক’ মানা হয়। তুখোড় বুদ্ধির সঙ্গে অসামান্য শক্তি মিশিয়ে দিতেন তিনি তার বলের মধ্যে, যার পিছনে ছিল তার সুচতুর মস্তিষ্ক। তাঁর বাউন্সারগুলিও অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল ছিল ব্যাটসম্যানদের কাছে।

রেকর্ড টেকর্ড ধুলোয় না মেশালেও বা হাওয়ায় না ওড়ালেও (৪৭ টেস্টে ২০২ উইকেট আর ৫৬ একদিনের ম্যাচে ৮৭ উইকেট) শুধু পবিত্রতম বোলিং অ্যাকশনের জন্যই যীশুখ্রীস্ট মানতাম ওই ভদ্রলোককে। এরই মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে দুইবার সাত উইকেট লাভ করার কৃতিত্ব ছিল তার।

টেস্ট জীবন শুরু করার মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে তিনি ১০০ উইকেট লাভ করেন যা পরে ভেঙে দেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও পাকিস্তানের ইয়াসির শাহ। ১০০ উইকেট নিতে ১৯টি টেস্ট সময় নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়কালে প্রশ্নাতীতভাবে তার সেরা সময় কেটেছিল। এর পাশাপাশি ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি টেস্টে তিনটি অর্ধশতকের ইনিংস খেলে গেছেন।

আমার কাছে অ্যান্ডি রবার্টস ছিলেন বোলিংয়ের যীশুখ্রীস্ট। যীশুসুলভ সৌন্দর্যময় বোলিং অ্যাকশন ছিল এই ভদ্রলোকের। পেস বোলিং তার যাবতীয় ভয়াবহতা ও নিষ্ঠুরতার অনিবার্য মুখোশ সরিয়ে রাখত তার হাতে পড়লে। তার হাতে পড়লে পেস বোলিং হয়ে যেত সযত্নে লালিত পেস ও সুইং শিল্পসামগ্রী। যা খেলার দরকারই পড়ত না অধিকাংশ সময়ে, কারণ ওগুলো খেলা এককথায় অসম্ভব ছিল। ওনার শীতল চাহনিতেই অর্ধেক উইকেট দিয়ে যেত ব্যাটসম্যানরা। বাকি অর্ধেক জাদুকরী বোলিংয়ে সম্মোহিত হয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...