টালমাটাল জাহাজের নাবিক

যে মানুষটা ক্রিকেট কে বিদায় জানিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশ পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন, সেই উইলিয়ামসই সাদা পোশাকে এখন জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক। নিজের বিশাল প্রতিভার কিঞ্চিত উপলব্ধি হওয়াতেই হয়তো সিদ্ধান্ত বদলে ফিরে এসেছিলেন ক্রিকেটে, হয়তো তাতে জিম্বাবুয়েরও কিছুটা লাভ হয়েছে। তাঁর হাত ধরে একটু হলেও যদি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সামনে এগোয় – সেখানেই তাঁর সার্থকতা।

আমির হামজার বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়েই দৌড়ে এক রান, অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয় ও টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক পূর্ণ করলেন তিনি। আবুধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে দু’দলের ব্যাটসম্যানরা যেখানে কেউই প্রথম ইনিংসে ৫০’এর কোটা ছুঁতে পারেননি, সেখানে ব্যাট হাতে কাঠখড় পুড়িয়ে দলের দায়িত্ব কাধে নিয়ে দূর্দান্ত শতক তুলে নিলেন জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস।

মাত্র ৩৮ রানের চার উইকেটে হারিয়ে খাদের কিনারে থাকা দলের হাল ধরেন উইলিয়ামস! আমির হামজা-জাহির খানদের স্পিন ঘূর্নিতে বাকিরা দিশেহারা হলেও নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দলের প্রয়োজনে উপহার দিলেন দূর্দান্ত এক শতক। ১৬৯ বলে নয় চারে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন জিম্বাবুইয়ান এই অলরাউন্ডার।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে উইলিয়ামস খেলেন মাতাবিলিল্যান্ড টাস্কার্সের হয়। লোগান কাপে সবশেষ তিনি টাস্কার্সের হয়ে খেলেছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা অনেকটা হটাৎ করে স্বপ্নের মতোনই হয়েছিলো এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের।

ঘরোয়া ক্রিকেটে মাত্র এক ম্যাচ খেলেই ২০০৫ সালে জায়গা পান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। সুযোগ পাওয়ার পরেও ক্যারিয়ারে একটু অন্য মোড়ে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে! তবে তিন মাস না যেতেই পুনরায় ফিরে আসেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটেই। এরপরের বছর ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে উইলিয়ামসের অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টিতে।

২০১১ আইসিসি কন্টিনেন্টাল কাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৮ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেন। ইনজুরির কারণে ২০১১ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান তিনি। এরপর ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয় এই অলরাউন্ডারের। একই বছর সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি, পরে জানা যায় আর্থিক লেনদেনজনিত সমস্যায় এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

২০১৫ বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের সাথে অপরাজিত ৭৬ রানের এক ইনিংস খেলেন উইলিয়ামস। ব্যাটিং বিপর্যয়ে থাকা দলকে সে ম্যাচে দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলে জয় উপহার দেন বর্তমান এই টেস্ট অধিনায়ক। মাত্র ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই দেখা পান প্রথম শতকের, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আট নম্বরে ব্যাট করে শতক গড়েন তিনি। ১৪৮ বলে করা ১১৯ রানের ইনিংসটি জিম্বাবুয়ের সাদা পোশাকে সবচেয়ে দ্রুততম শতক।

ওয়ানডেতেও জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্রুততম শতকটি উইলিয়ামসের দখলেই। ২০১৯ সালে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৭৫ বলে শতক করেন, যা কিনা ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের জন্য দ্রুততম শতক। এরপর ২০২০ সালে গেলো বছর দায়িত্ব পান সাদা পোশাকে অধিনায়কত্বের। লঙ্কানদের বিপক্ষে সেই হোম সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ও অধিনায়ক হিসেবে করেন প্রথম শতক। তার শতকে দ্বিতীয় টেস্টে লংকানদের বিপক্ষে ড্র করে জিম্বাবুয়ে।

ব্যক্তিগত জীবনে উইলিয়ামসের বাবা কলিন উইলিয়ামস ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার ও জাতীয় হকি কোচ! তার ভাই ম্যাথিউ উইলিয়ামসও মাতাবিলেন্ড টাস্কার্সের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। উইলিয়ামসের মা প্যাট্রিচিয়া ম্যাকিলপ ছিলেন জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড়। ১৯৮০ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদক পাওয়া জিম্বাবুয়ে হকি দলের সদস্য ছিলেন ম্যাকিলপ।

ওয়ানডে অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিয়ে দশম ও টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিয়ে উইলিয়ামসের বর্তমান অবস্থান হচ্ছে পঞ্চম।

যে মানুষটা ক্রিকেট কে বিদায় জানিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে বিদেশ পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন, সেই উইলিয়ামসই সাদা পোশাকে এখন জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক। নিজের বিশাল প্রতিভার কিঞ্চিত উপলব্ধি হওয়াতেই হয়তো সিদ্ধান্ত বদলে ফিরে এসেছিলেন ক্রিকেটে, হয়তো তাতে জিম্বাবুয়েরও কিছুটা লাভ হয়েছে। তাঁর হাত ধরে একটু হলেও যদি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সামনে এগোয় – সেখানেই তাঁর সার্থকতা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...