ভিনদেশেই তাঁদের আসল পরিচয়
বিদেশের মাটিতে প্রায় বাংলাদেশের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে তা সত্ত্বেও বিদেশের মাটিতেই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের আছে বেশ কিছু কার্যকরী, চোখ ধাঁধানো ইনিংস। যেগুলোর কিছু কিছু তাদের টেস্টের সামর্থ্যকে যেমন প্রকাশ করে, তেমনি বিস্ময় জাগায়। সেগুলো কি?
টেস্ট ফরম্যাটটা বাংলাদেশের জন্যে এমনিতেই কঠিন। তার ওপর যদি খেলাটা হয় বিদেশের মাটিতে, তাহলেও তো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের রীতিমত পিচ, কন্ডিশন, বোলার সবকিছুর সাথেই যুদ্ধ করতে হয়।
বিদেশের মাটিতে প্রায় বাংলাদেশের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে তা সত্ত্বেও বিদেশের মাটিতেই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের আছে বেশ কিছু কার্যকরী, চোখ ধাঁধানো ইনিংস। যেগুলোর কিছু কিছু তাদের টেস্টের সামর্থ্যকে যেমন প্রকাশ করে, তেমনি বিস্ময় জাগায়। সেগুলো কি?
- মোহাম্মদ আশরাফুল – ১২৯* বনাম শ্রীলঙ্কা (কলম্বো, ২০০৭)
সফরের দ্বিতীয় টেস্টটা শুরু হয়েছিল প্রথম টেস্টের হারের দায় মাথায় নিয়েই। দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ যখন নতুন কিছু করার একটা চিন্তা করছিল, তখনই আবার বিধিবাম। প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে গেল মাত্র ৬২ রানে। বাংলাদেশ থেকে ৬২ রানে পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নেমে গড়ে ফেলল পাহাড়সম রান, কুমার সাঙ্গাকারার ডাবল সেঞ্চুরির সৌজন্যে সেটা অঙ্কের হিসাবে ৪৫১।
এরপর বাংলাদেশ যখন আবারও ব্যাট করতে নামল তখনও আরেকটা ইনিংস বিপর্যয়ের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল, ৭৮ রানেই পড়ে গেল দলের পাঁচ উইকেট। কিন্তু ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েই হঠাৎ মাথা তুলে ফেলল বাংলাদেশের মিডল অর্ডার যার পুরো কৃতিত্ব মোহাম্মদ আশরাফুলের, ২৩৬ বলের মোকাবেলায় তিনি করে ফেলেন ১২৯ রান!
- মুশফিকুর রহিম – ১৫৯ বনাম নিউজিল্যান্ড (ওয়েলিংটন, ২০১৬)
সফরের শুরুতেই মুশফিকের জন্যে ইনজুরি সমস্যা ছিল প্রবল, সীমিত ওভারের বেশ কিছু ম্যাচ তো এজন্যে মিসও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইনজুরি কাটিতে তিনি ফিরেছিলেন সফরের প্রথম টেস্টে। আর সেই ফেরাটাও হয়েছিল একেবারে নান্দনিক ছন্দে। ম্যাচে তিনি ছিলেন দলে অধিনায়ক, সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে তাই যখন তিনি ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন সেটাকে ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতেই হয়।
যা হোক, পুরো ইনিংসে মুশফিক করেছিলেন ১৫৯ রান। ওয়েলিংটনের বাতাস আর কিউই পেসারদের তোপ সহ্য করে যেটা কিনা বেশ রোমাঞ্চকরই ছিল।
- মোহাম্মদ আশরাফুল – ১৯০ বনাম শ্রীলঙ্কা (গল, ২০১৩)
২০১৩ এর সেই সিরিজে শ্রীলঙ্কা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। এই টেস্টের আগেও তারা টানা ১৪ টা টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে । যা হোক, প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার এই ফেভারিট তকমার প্রমাণ দিয়ে দিল স্কোরবোর্ডে ৫৭০ রানের পাহাড়সম রান জমা করে, সেটাও কিনা মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। এই ইনিংসের পর সবাই যেখানে আরেকটা বড় পরাজয়ের ক্ষণ গুণছিল তখনই মোহাম্মদ আশরাফুল আর মুশফিকুর রহিমের বীরত্বে বাংলাদেশ শুধু পাল্টা আক্রমণই করল না, শ্রীলঙ্কার রানকে ছাড়িয়েও গেল!
ঐ ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৬৩৮ রান এখন অব্দি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। যা হোক, ইনিংসে মোহাম্মদ আশরাফুল করেন দুর্দান্ত ১৯০ রান, মাত্র ১০ রান দূরে থেকে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। ৪৯৯ মিনিট ক্রিজে থেকে তিনি ২০ চার আর ১ ছয় নিয়ে এই ইনিংস সাজান।
- মুশফিকুর রহিম – ২০০ বনাম শ্রীলঙ্কা (গল, ২০১৩)
মোহাম্মদ আশরাফুল যে টেস্টে ১৯০ রান করেন, সে টেস্টেই আশরাফুলকেও ছাড়িয়ে যান মুশফিকুর রহিম। নাহ, শুধু ছাড়িয়ে যান বললে ভুল হবে। তিনি রীতিমত এই টেস্টটাকে ইতিহাস বানিয়ে ফেলেন। এমন কিছু করেন, যা ঐ সময় অব্দি কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানকে কোনদিন করতে দেখা যায়নি- ডাবল সেঞ্চুরি!
৩২১ বল খেলে মুশফিক করেন একেবারে মার্জিনাল ২০০! নুয়ান কুলাসেকারার বলে আউট হবার আগে আশরাফুলের সাথে ২৬৭ আর নাসিরের সাথে ১০৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি।
- সাকিব আল হাসান – ২১৭ বনাম নিউজিল্যান্ড (ওয়েলিংটন, ২০১৬)
‘বাংলাদেশি পরিসংখ্যান’ দিতে গেলে তালিকার এক নম্বর জায়গাটা অনুমিতভাবেই সাকিব আল হাসানের, আর এখানেও তার নড়চড় হয়নি। গলের ম্যাচে আশরাফুলের আলো কেড়ে নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম, ওয়েলিংটনের ম্যাচে মুশফিকের আলো কেড়ে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এই ম্যাচেই তিনি মুশফিক আর তামিমের পর তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে করেন ডাবল সেঞ্চুরি।
তা সেই ডাবল সেঞ্চুরিও আসে অন্যরকম এক ছন্দে, পুরো ইনিংসে সাকিবের স্ট্রাইক রেট ছিল ৮০! নিউজিল্যান্ডে এমন আধিপত্য বিস্তার করা ইনিংসের পর বাংলাদেশও স্কোরবোর্ডে তোলে ৫৯৫ রান!