মানকাডিং ও ক্রিকেট স্পিরিটের ভিত্তিহীন বুলি

চারিদিকে আবার সরব ‘মানকাডিং’। ক্রিকেটে নজর রাখা ব্যক্তিদের কাছে খুব বেশি নতুন নয় এই টার্ম। তারা বেশ শুনে অভ্যস্ত। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে রবিচন্দ্রন অশ্বিন জশ বাটলারকে একদফা মানকাডিংয়ের ফাঁদে ফেলেছিলেন। তখন রীতিমত তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়। ক্রিকেটের এখন পর্যন্ত বলবৎ হওয়া আইনে এই মানকাডিং কোন নিষিদ্ধ নিয়ম নয়। বরং এটা বৈধ এবং রান আউট হিসেবেই গণ্য হয়।

চারিদিকে আবার সরব ‘মানকাডিং’। ক্রিকেটে নজর রাখা ব্যক্তিদের কাছে খুব বেশি নতুন নয় এই টার্ম। তারা বেশ শুনে অভ্যস্ত। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে রবিচন্দ্রন অশ্বিন জশ বাটলারকে একদফা মানকাডিংয়ের ফাঁদে ফেলেছিলেন। তখন রীতিমত তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়। ক্রিকেটের এখন পর্যন্ত বলবৎ হওয়া আইনে এই মানকাডিং কোন নিষিদ্ধ নিয়ম নয়। বরং এটা বৈধ এবং রান আউট হিসেবেই গণ্য হয়।

তবে কেন এত আলোচনা আর সরগম করা আবহাওয়া? এই প্রশ্ন ওঠা বড্ড বেশি স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এই আলোচনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে নারী ক্রিকেটের কল্যাণে। ইংল্যান্ড ও ভারতের নারী দলের মধ্যে সিরিজ চলমান। সেখানেই বিপত্তি ঘটান ভারতীয় বোলার দীপ্তি শর্মা। ক্রিকেটের পুন্যভূমি ধরা হয় লর্ডসকে। সেখানেই তিনি মানকাডিংয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করেন চার্লি ডিনকে। আর তাতেই নিন্দার তীব্র ঝড়ে উথাল-পাথাল পুরো ক্রিকেট দুনিয়া।

অধিকাংশ ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক এই ধরণের আউটকে সহজে মেনে নিতে পারেন না। কারণ অধিকাংশের মতে মানকাডিং ক্রিকেটের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। একটা বাড়তি সুবিধা ভোগ করে থাকেন বোলাররা। তেমন মতও দিয়েছেন বহু গুণীজন। তবে দিনশেষে একটা লিখিত নিয়ম নিয়ে এত আলোচনা হওয়ার কি-ই বা আছে। যদি একেবারেই বাড়তি সুবিধা ভোগ করার মত বিষয় হয়ে থাকে, তবে তা ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও তো বর্তায়।

বোলার বল হাত থেকে ছেড়ে দেওয়ার আগে ব্যাটারদের পপিং ক্রিজের বাইরে যাওয়ার নিয়ম নেই। তবুও তো দিব্যি ব্যাটাররা খানিক এগিয়ে থেকে সুবিধাটুকু লুফে নিচ্ছে। এই যে ব্যাটারদের ক্রিজে বল ছাড়ার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টা কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা হাড়ে হাড়ে মেনে এসেছেন। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হয়ত হতে পারে ১৯৮৬ সালে হওয়া অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনাল। সেবার জয়ের জন্য শেষ দুই বলে পাঁচ রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের।

ভারতের হয়ে বোলারটা ছিলেন চেতন শর্মা। জয় পেতে হলে জাভেদ মিয়াঁদাদকে স্ট্রাইক নিজের করে নিতেই হত। তবুও তিনি ক্রিজ থেকে খানিকটা এগিয়ে থাকেননি, রান নেবার উদ্দেশ্যে। বরং তিনি কড়া নজর রেখেছিলেন বোলারের হাতের দিকে। বোলারের হাত থেকে বল মুক্তি পাওয়া মাত্রই তিনি ছুঁটে রান নিয়েছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে ম্যাচটি জিতেছিল পাকিস্তান। জিতিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ। তাও আবার শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে।

তাছাড়া সে বছরই প্রায় একই রকম পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে রবি শাস্ত্রীও বোলার বল ছোড়ার আগে পপিং ক্রিজ ছেড়ে দেননি। এমনকি বিশ্বকাপের মত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়েও ব্যাটাররা থেকেছিলেন সতর্ক। পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচটি টাই হয়েছিল। সে সময় বোলিং প্রান্তে ব্যাট হাতে অপেক্ষমান ছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড।

একটি রান দূরে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা জয় থেকে। তবুও ডোনাল্ড বাড়তি কোন সুবিধা লাভের আশায় ক্রিজ থেকে বেড়িয়ে যাননি। বরং তিনি ক্রিকেটের আইনের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে বোলারের বল ছোড়ার অপেক্ষা করছিলেন। এমন দৃষ্টান্ত আরও ডজন খানেক পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। দিন শেষে ক্রিকেট মাঠে নামা প্রতিটা দলই জিততে চায়। উভয় দলের খেলোয়াড়দেরই এই বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সতর্ক থাকা উচিত। ক্রিকেটের আইন মোতাবেক একটা আউট নিয়ে অন্তত তর্ক হওয়া বড্ড অবান্তর।

যদিও এই মানকাডিং নামটা নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। সেটা আবার ভিন্ন এক গল্প। সেখান থেকে বেড়িয়ে স্রেফ রান আউট হিসেবেই গণ্য হবে এই ধরণের পরিস্থিতি। তবুও এসব নিয়ে বিতর্কের ডালপালা ছড়াতে সাহায্য করাটা বরং ক্রিকেটকেই বেশি কলুষিত করে। সেখান থেকে অন্তত মুক্তি পাক ক্রিকেট। নিয়মের সম্মানটা করুক দুই পক্ষই। শৃঙ্খলাই তো সৌন্দর্য!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...