এভাবেও বাড়ি ফেরা যায়

কিন্তু নিজের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে দলের হয়ে দ্যুতি ছড়াবেন না রোনালদো তা কি করে হয়? ম্যাচের ৬১ মিনিটে নিজেদের অর্ধে বলের দখল পায় ম্যান ইউ। ব্রুনো, পগবা হয়ে বল যখন লুক শ এর পায়ে আসে তখন মিডফিল্ডে খালি জায়গা দেখে বল নিয়ে গতি বাড়িয়ে ছোটেন তিনি। রোনালদোও ক্ষিপ্রতার সাথে চলে যান ডি-বক্সের কাছাকাছি। লুক শ এর বাড়ানো থ্রু পাসে বাম পায়ের জোড়ালো শটে গোলকিপারের দু'পায়ের মাঝদিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন রোনালদো। সে কি ক্ষিপ্রতা! সে কি গতি!

রুপকথা আর বাস্তবে বিরাট ফারাক। রুপকথায় রাজা এসেই জয় করে নেয় রাজ্য, সে আর বাস্তবে কই? তবে সবাই দমে জান না। কেও কেও চেষ্টা করেন রুপকথাকে বাস্তব করতে। তেমনই একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কি এক অভূতপূর্ব প্রত্যাবর্তন!

এবারের ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় খবর মেসি-রোনালদোর দলবদল। মেসি গিয়েছেন স্পেন থেকে প্যারিসে। রোনালদো ফিরলেন তার পুরোনো রাজ্য ম্যানচেস্টারে।

সঙ্কা ছিল, প্রশ্নও উঠেছিল তিনি পারবেন তো তার রাজ্য জয় করতে? কিন্তু শক্তপোক্ত ডায়েট আর নিয়মিত ব্যায়ামে যে রোনালদো নিজেকে ছত্রিশে এসেও ম্যাচ ফিট রেখেছেন তিনি কি আর উত্তর দিবেন কথায়? কবি কুসুমকুমারী দাসের ‘আদর্শ ছেলে’-র আক্ষেপ ঘুচিয়ে তিনি উত্তর দিয়েছেন, কথায় নয় কাজে। নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন নিন্দুকের যত নিন্দা, ভক্তদের সকল শঙ্কা। রেড ডেভিলদের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় অভিষেকে করেছেন দুই গোল। অসাধারণ! অভাবনীয়!

দ্য থিয়েটার অব ড্রিমে সত্যিকার অর্থেই স্বপ্নের মতো দ্বিতীয় শুরু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। নিউক্যাসল ইউনাইটেড এফসির বিপক্ষে লীগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যথারীতি কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারের সবচেয়ে পছন্দের ফরমেশন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলতে নামে ম্যান ইউ। একমাত্র স্ট্রাইকারের রোল পালন করেন রোনালদো। তাকে সহয়তা করতে সেন্ট্রাল এটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন তারই পর্তুগিজ জাতীয় দল সতীর্থ ব্রুনো ফারনানদেজ। মিডের বাম পাশে ছিলেন জডান সাঞ্চো আরেক পাশে আরেক তরুণ তুর্কি গ্রিনউড।

স্বভাবতই ম্যাচের মধ্যমনি ছিলেন রোনালদো। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেই যখন ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলতে নামছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সে তো হবেনই৷

প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময়ই বল নিজেদের দখলেই রেখেছিল ব্রুনো, গ্রিনউডরা। বেশকিছু আক্রমণও চালায় ওলে গুনারের শিষ্যরা। কিন্তু গোলের দেখা মিলছিলো না। ব্রুনো বেশ ক’বার চেষ্টা করে দেখলেন দূর পাল্লার শট চালিয়ে। তাতেও কাজ হলো না। যখন গোল শূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যাবে বলে ভেবে রেখেছিল নিউক্যাসেল খেলোয়াড়েরা ঠিক তখনই ডি-বক্সের ডান পাশের একটু বাইরে থেকে শেষ চেষ্টা করেন গ্রিনউড।

বাম পায়ের শটটি ঠেকিয়ে দেন নিউক্যাসল গোলরক্ষক উডম্যান। কিন্তু তিনি তা নিজের আয়ত্ত্বে নিতে ব্যর্থ হন। আগে থেকে ডি-বক্সের ফাঁকা জায়গায় অপেক্ষায় থাকা রোনালদো আলতো টাচে বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পরা দর্শকদের দিকে ছোটেন তার সিগনেচার সেলব্রেশনে। কোভিড মহামারী শেষে হয়ত প্রথমবারের মতো এমন বুনো উল্লাসে মেতেছিল রেড ডেভিল সমর্থকেরা।

এই গোল দেখতে অতন্ত্য সাদামাটা মনে হলেও এই গোল ফুটিয়ে তুলেছে এই বুড়ো বয়সেও গোলক্ষুধায় থাকা এক স্ট্রাইকারের বুদ্ধিমত্তা। তিনি জানেন কখন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদেরকে ফাঁকি দিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে হয়। তিনি জানেন একটা বল ডিফ্লেক্ট হয়ে কোথায় আসে। তিনি নিজেকে ঠিক সেখানটায় হাজির করে গোলটাকে সাদামাটা গোল বানিয়েছেন।

১-০ গোলের লিড নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে দু’দল। আক্রমণে মশগুল ম্যান ইউ ডিফেন্ডারদের ভুলকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচের ৫৬ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটকে গোল করেন নিউক্যাসল ফুলব্যাক মানকুইলো। ১-১ এ সমতা। যেই মোমেন্টাম রোনালদো তৈরি করে দিয়েছিল প্রথমার্ধের শেষে, সেটা হাতছাড়া হয়ে যায়।

কিন্তু নিজের প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে দলের হয়ে দ্যুতি ছড়াবেন না রোনালদো তা কি করে হয়? ম্যাচের ৬১ মিনিটে নিজেদের অর্ধে বলের দখল পায় ম্যান ইউ। ব্রুনো, পগবা হয়ে বল যখন লুক শ এর পায়ে আসে তখন মিডফিল্ডে খালি জায়গা দেখে বল নিয়ে গতি বাড়িয়ে ছোটেন তিনি। রোনালদোও ক্ষিপ্রতার সাথে চলে যান ডি-বক্সের কাছাকাছি। লুক শ এর বাড়ানো থ্রু পাসে বাম পায়ের জোড়ালো শটে গোলকিপারের দু’পায়ের মাঝদিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন রোনালদো। সে কি ক্ষিপ্রতা! সে কি গতি!

ক্ষিপ্রতা, আর দূর্বল পায়ের শক্তি প্রমাণ করে রোনালদো শেষ হয়ে যাননি। এখনো অনেক কিছু তার দেওয়ার বাকি ম্যান ইউ কে, ফুটবলকে, ফ্যানদেরকে। শেষের দিকে ব্রুনোর দূরপাল্লার গোল আর লিংগার্ডের গোলে ৪-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠে ছাড়ে রেড ডেভিলরা।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ রোনালদো। যে রোনালদো ২০ এও মাঠ মাতিয়েছেন সে রোনালদো ৩৬ এও মাঠের সব আলোর উৎস। ২০০ তম বারের মত ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে অন্তত ২ গোল করার রেকর্ডটাও এদিন নিজের করে নিয়েছেন রোনালদো। মাঠে বসে নিজের হাতে গড়ে তোলা শিষ্যের দিকে তোলা সকল প্রশ্নের, সব আশঙ্কার জবাব শিষ্যেকেই দিতে দেখেছেন স্যার অ্যালেক্স ফারগুসন।

এভাবেই হয়ত আরো কিছু বছর তিনি সার্ভিস দিয়ে যাবেন। এবারের আসরে সমানে সমান টক্কর দিয়ে যাবেন সালাহ, কেইন, গ্রেলিশদের সাথে। দর্শক-সমর্থকদের প্রত্যাশা, আশা আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি বহুগুণে। এখন দেখবার পালা নিজেকে কতটা ছাড়িয়ে যেতে পারেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...