তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা

ভারতের জাতীয় দলে আসার পথ মসৃণ নয়। বরং সবচেয়ে কঠিনই বলা চলে। এই পর্যায়ে আসতে একেকজন খেলোয়াড় তাঁদের নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাদিন পড়ে থাকে ক্রিকেট নিয়ে। তাঁদের কাছে তখন মুখ্য হয়ে যায় শুধুই ক্রিকেট। ক্রিকেটের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে এমন ভুড়িভুড়ি নজিড় মিলবে ভারতের প্রতিটি শহরে, গ্রামের অলিতে-গলিতে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমী খেলোয়াড় রয়েছেন যারা কি না ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি নিজেদের পড়াশোনার প্রতি ছিলেন মনোযোগী।

উপমহাদেশ ক্রিকেটের আখড়া বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না। এ অঞ্চলের  শিশু-কিশোরদের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়েছে ক্রিকেট। বিশেষ করে ভারতে ক্রিকেট বনে গেছে এক আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে সেদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সর্বস্তরে। ভারতের অধিকাংশ ছোকরার স্বপ্ন সেই নীল জার্সিটি পরে তাঁরা বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করবে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী এক দলকে।

তবে ভারতের জাতীয় দলে আসার পথ মসৃণ নয়। বরং সবচেয়ে কঠিনই বলা চলে। এই পর্যায়ে আসতে একেকজন খেলোয়াড় তাঁদের নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারাদিন পড়ে থাকে ক্রিকেট নিয়ে। তাঁদের কাছে তখন মুখ্য হয়ে যায় শুধুই ক্রিকেট। ক্রিকেটের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে এমন ভুড়িভুড়ি নজিড় মিলবে ভারতের প্রতিটি শহরে, গ্রামের অলিতে-গলিতে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমী খেলোয়াড় রয়েছেন যারা কি না ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি নিজেদের পড়াশোনার প্রতি ছিলেন মনোযোগী। আজকের তালিকায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আলাপ হবে।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি

‘ক্যাপ্টেন কুল’ খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতকে জিতিয়েছেন তিনটি আইসিসি আয়োজিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। এমন কীর্তি শুধু অধিনায়ক হিসেবে তাঁর নামের পাশেই রয়েছে। ভারতের হয়ে সম্ভাব্য সকল  শিরোপাজয়ী এই অধিনায়কের শেষে করেছিলেন তাঁর স্নাত্মক অবধি পড়াশুনা। কমার্সে তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ভারত রেলওয়েতে কর্মরত ছিলেন একজন টিকেট কালেক্টর হিসেবে। 

  • বিরাট কোহলি

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করবার মতো খুব একটা যুক্তিযুক্ত কারণ দাঁড় করানো দায়। ওয়ানডেতে প্রায় বারো হাজারের উপরে রান করা এই ব্যাটার ছোটবেলা থেকেই মগ্ন ছিলেন ক্রিকেটে। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর পড়াশোনা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। স্কুল পর্যায়ে লেখাপড় সমাপ্ত করলেও তিনি কখনো উচ্চতর পর্যায়ে কোন ডিগ্রি গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না ক্রিকেটে মনোনিবেশ প্রভাবিত হতে পারে বিধায়।

  • রোহিত শর্মা 

সম্প্রতি ভারত টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন রোহিত শর্মা। তাঁর অধিনায়ক পিরিয়ডের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে পেয়েছে পূর্ণ মার্ক। তবে শিক্ষাগত জীবনে রোহিত পার করেননি বিদ্যালয়ের গণ্ডি। মাধ্যমিক পর্যায়েই তিনি তাঁর শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটান। তিনি ক্রিকেটেই ক্যারিয়ার গড়তে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই উচ্চতর শিক্ষাজীবনে পদার্পণে ছিল তাঁর অনীহা।

  • শচীন টেন্ডুলকার

ভারতের সেরা ব্যাটারদের তালিকার উপরের সাড়িতে অবস্থান করা শচীন টেন্ডুলকা তাঁর ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সকল রেকর্ডই ছুঁয়ে দেখবার চেষ্টা চালিয়েছেন কিংবা পুরোনো রেকর্ড তাঁর ব্যাটার আঘাতে ভেঙ্গে নতুন করে গড়েছেন। এই কিংবদন্তি ব্যাটারের অভিষেক হয়েছিল মাত্র ষোল বছর বয়সে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণও করতে পারেননি উচ্চতর ডিগ্রি তো বেশ দূরের বিষয়।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি 

ভারতের সফল অধিনায়কদের একটা তালিকা করা হলে সেখানে বা-হাতি ব্যাটার সৌরভ গাঙ্গুলির নাম নিঃসন্দেহে থাকবে। অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক হাঁকানো সৌরভ তাঁর নেতৃত্ব ভারতকে নিয়ে গিয়েছিলেন ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে। খেলাধুলার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাতেও মনোযোগ দিয়েছিলেন সৌরভ। তিনি তাঁর গ্রাজুয়েশন শেষ করেছিলেন কোলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে।

  • রাহুল দ্রাবিড় 

ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের দেয়াল রাহুল দ্রাবিড় তাঁর ব্যাটিং দৃঢ়তায় কত কঠিন ম্যাচ যে বের করে এনেছেন ভারতের পক্ষে তাঁর হিসেব কষা একটু কঠিন। এখন তো তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন কোচ হিসেবে। খেলোয়াড় হিসেবে রাহুল যতটানা সফল এবং কার্যকরী ছিলেন ঠিক তেমনটাই তাঁর কাছ থেকে ভারতীয় সমর্থকেরা আশা করছে কোচ হিসেবেও। খেলাধুলার পাশাপাশি রাহুল পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন সমানতালে। তিনি ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত সেইন্ট জোসেফ কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভারতীয় দলে ডাক পান।

  • অনিল কুম্বলে

খুব বেশি তর্কের অবকাশ নেই যে অনিল কুম্বলে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন স্পিনার। তিনি একাই প্রতিপক্ষকে তাঁর স্পিন ঘূর্ণিতে নাজেহাল করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন বহুবার। ৯৫৬টি আন্তর্জাতিক উইকেটের মালিক অনিল কুম্বলে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিরও মালিক। তিনি আরভি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

  • ভিভিএস লক্ষণ 

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতে শক্তপোক্ত ব্যাটিং লাইনআপের একজন অবিচ্ছেদ্য সদস্য ছিলেন কিংবদন্তি ভিভিএস লক্ষণ। মিডেল অর্ডারে নেমে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামলেছেন অগণিতবার। তাঁর উপর পূর্ণ আস্থা ছিল দলের ম্যানেজমেন্টের। তাঁর মতো একজন ব্যাটার এখনও ভারতের চাহিদার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। শিক্ষাজীবনে তিনি তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক শেষে মেডিকেল ডিগ্রি নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়াছেন ক্রিকেটকে নিজের জীবন সঙ্গী করে নেবার আগে।

  • রবিচন্দ্রন অশ্বিন 

বর্তমান ভারত দলে থাকা বোলারদের মধ্যে অভিজ্ঞতার বিচারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন রয়েছেন সবার উপরে। ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনার দিকেও খেয়াল রেখেছিলেন তিনি। তিনি তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে ইস্তফা দিয়েছিলেন নিজের শিক্ষাজীবন থেকে।

খেলাধুলা এবং পড়াশুনা সমানতালে চালিয়ে যাওয়া খুবই দুষ্কর। তবুও বহু খেলোয়াড় এই দুইটি দিকের সমন্বয় করে হয়েছে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ব্যালেন্স করার নামই তো জীবন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...