Social Media

Light
Dark

‘যাদের টেস্ট খেলার কথা, তারা সুযোগ পাচ্ছে না’

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটের ব্যাটিং কিংবদন্তি তুষার ইমরান। প্রচণ্ড প্রতিভাবান বলে বিবেচিত হলেও জাতীয় দলে তার ছাপ রাখতে পারেননি। কিন্তু যখন তিনি লংগার ভার্শনের ইতিহাস করছেন, তখন সুযোগ পাননি জাতীয় দলে।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো হাতের তালুর মত চেনেন। তিনি বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স ও ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন। খেলা ৭১-এর টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আয়োজনে আজ আছেন তুষার ইমরান।

তুষার খেলা দেখেছেন এই সময়ে?

অবশ্যই। সবগুলো ম্যাচই দেখলাম।

আমরা জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সম্প্রতি বেশ কিছু ম্যাচ হারলাম। কারণ কী বলে মনে হয়?

প্রধাণ কারণ হচ্ছে, যাদের টেস্ট খেলার কথা তারা টেস্ট খেলছে না। যারা বাংলাদেশ দলে টেস্ট খেলছে, তারা আসলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলে টেস্ট দলে আসছে। তারা খুব বেশি লংগার ভার্শন  খেলে না। এখানে পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে। আমি খেলোয়াড়দের সমালোচনা করছি না। টেস্টে ভালো না খেললেও তারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো পারফর্মার। সমস্যা হলো, সেই ভিত্তিতেই তাদেরকে টেস্ট খেলানো হচ্ছে। টেস্ট খেলার জন্য যে বিশষায়িত দল দরকার, সেটা আমাদের নাই।

ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে টেস্ট ক্রিকেটার আসছে না? নাকি যারা ভালো করছে, তারা সুযোগ পাচ্ছে না?

আমি মনে করি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। চার দিনের ক্রিকেটে যারা ভালো খেলছে, তাদের মধ্যে কারা সুযোগ পাচ্ছে? যেমন শান্ত; সে লিস্ট-এ এবং টি-টোয়েন্টি ভালো খেলে বলেই সে টেস্ট দলে আছে। সে যেহেতু লিস্ট-এ ও টি-টোয়েন্টি ভালো খেলে, তাই তার কথাই বলছি। তার চার দিনের রেকর্ড দেখলে কিন্তু তার টেস্টে সুযোগ পাওয়ার কথা না। আবার যারা ভালো করে তাদেরকে সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয় না।

ভালো খেলা আপনাদের মত কয়েক জনের ক্ষেত্রে বয়স একটা বাঁধা হচ্ছে না? ভবিষ্যত দেখতে চাইছে বোর্ড।

বোর্ড মনে করে ভবিষ্যত দেখতে হবে, কিন্তু ভবিষ্যত দেখতে গিয়ে বর্তমান হচ্ছে না। আপনাকে তো দুটোর ব্যালান্স করে এগোতে হবে। ভবিষ্যত তৈরী করতে হবে। সেই সাথে বর্তমানের এসব ম্যাচ তো জিততে হবে।

সিনিয়রদের মধ্যে এই সময় তেমন কে আছে, যে অবহেলার শিকার হচ্ছে?

সিনিয়ররা টেস্টের জন্য উপযোগী বেশি। যেমন ইমরুল কায়েস। ও অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। আমার মনে হয় সে টেস্টের জন্য উপযুক্ত। অনেক দিন ভালো খেলেছে সে। সাম্প্রতিক সময়ে হয়তো সে ভালো করে নাই, যেমন ইন্ডিয়াতে সে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু সেখানে তো কেউ-ই ভালো করে নাই।

চার দিনের ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার মতো নতুন কারা আছে?

অনেকেই আছে, যারা চান্স পাচ্ছে না। আপনি পরিসংখ্যান দেখলেই পাবেন। আমি কারো নাম করতে চাই না। অবশ্য ভালো কেউ চান্স পাচ্ছে না, তা বলছি না। যারা ভালো করছে, তাদের কেউ কেউ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু সিনিয়রদের সংকল্পটা খুব ভালো। জাতীয় দলে যেটা হচ্ছে, ভুল জায়গায় ভুল খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যে টেস্টের জন্য এখনো উপযোগী নয়, তাকে টেস্টে খেলানো হচ্ছে। আবার যে ওয়ানডের তুলনায় টেস্টে ভালো; তাকে শুধু টেস্ট খেলানো হচ্ছে। যেমন তানবির হায়দার আছে, সে চার দিনের খেলোয়াড়। কিন্তু তাকে ওয়ানডে খেলিয়ে বাতিল করে ফেলা হয়েছে। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান ও ইয়াসির রাব্বি টেস্টের জন্য ভালো পছন্দ। এদের কিন্তু সেভাবে খেলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দলের সাথে রাখলেই তো হবে না, তাদেরকে তো সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ না দিলে তো তারা পাকাপোক্ত হবে না। আবার সমস্যা হচ্ছে এরা যদি টেস্টে ভালো খেলে, তখনই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নেওয়া হয়।

একটু অপ্রিয় কথা বলি। ঘরোয়া ক্রিকেট কী আসলে সেভাবে খেলা হয় যে, সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে?

এখন তো ম্যাচ ফি-ও বেশি। ফলে খেলোয়াড়দের মতো ভালো করার তাড়নাও বেশি। আমারই যেমন— খুলনা দলে অনেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়। ফলে খুলনা দলে টিকে থাকতে হলে আমাকে খুব ভালো করতে হবে। অন্যান্য দলেও এমন।

কিন্তু বলা হয় যে, ঘরোয়া প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট অনেকটা পিকনিক ক্রিকেট…

এটা যারা বলে, তাদের সময়ে হয়তো ছিলো। এক সময় ঘরোয়া ক্রিকেট পিকনিক ক্রিকেট ছিলো। কিন্তু এখন আর সেটা নাই। একজন নির্বাচককেও বলতে শুনছি এই ধরনের কথা। কিন্তু কথা হলো, উনারা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে সুযোগ দিতেন, তাহলে কিন্তু তারা এটা বলতেন না। পারফর্ম্যান্স করেও যদি সুযোগ না পাওয়া যায়, তাহলে তো লোকে পিকনিক ক্রিকেট বলবেই। একজন হয়তো চার দিনের ক্রিকেটে ভালো করছে, তাকে নিয়ে নিচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেটে। আবার একজন হয়তো ওয়ানডে ভালো করছে, তাকে নেওয়া হচ্ছে চার দিনের ক্রিকেটে। এ রকম করলে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটকে পিকনিক ক্রিকেটই মনে হবে। আমার মনে হয় নির্বাচকরাই এখানে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।  আপনি যদি এটার পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব না দেন, ক্রিকেটাররা তো আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। মনে হবে, পারফরম করেও লাভ নেই। তখন এটার গুরুত্ব কমে যাবে। আপনি এখানকার সেরা পারফরমারদের গুরুত্ব দেন; সবাই তখন গুরুত্ব দেবে।

সেটা একটা দিক। কিন্তু খেলোয়াড়দের নিজেদের একটা প্রতিদ্বন্ধীতা থাকবে না? সেটা কী আছে?

আমরা যদিও সিরিয়াস ক্রিকেট খেলি। কিন্তু ন্যাশনাল লিগ বা বিসিএল হোক; তখন দেখা যায় জাতীয় দলের খেলোয়াড় পাওয়া যায় না। বোর্ড যদি জাতীয় ক্রিকেটারদের খেলতে বাধ্য করে, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ে। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমাদের এখানে ঘরোয়া ক্রিকেটে বছরে প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ কয়টা? বিসিএল আর এনসিএল মিলে অল্প কয়টা ম্যাচ। রঞ্জিতে দেখেন তারা ম্যাচ খেলে ২০-২২টি; অন্যান্য প্রথম শ্রেণির ম্যাচ মিলিয়ে। কিন্তু আমরা ম্যাচ কম খেলি। এতে তো লংগার ভার্শনের প্লেয়ার তৈরী হবে না।

আরেকটা অভিযোগ হলো, আপনারা খুব সহজ উইকেটে শত শত রান করছেন। বোলাররাও অনেক সহজ এখানে।

না, এখন উইকেট অনেক স্পোর্টিং। আপনি কয়েক বছর আগের কথা বলছেন। গত কয়েক বছর ভালো উইকেটেই খেলা হয়।

কিন্তু বলাই তো হয় যে, উইকেট ভালো না বলে ভালো বোলার উঠে আসছে না?

আমাদের এখানে পেস বোলার কিভাবে বেছে নেওয়া হয়? ঘাসের উইকেটে যে কোনো পেসার ভালো করে। সুতরাং এখানে দেখতে হবে ঘাসের উইকেটে কোন ব্যাটসম্যান ভালো করে। অর্থাৎ ঘাসের উইকেটে পেসারদের বোলিং দেখে, তাদের মান বোঝা যাবে না। তার জন্য দরকার ফ্লাট উইকেট। ফ্লাট উইকেটে নরমালি ব্যাটসম্যানরা ভালো করে। তো ফ্লাট উইকেটে যে বোলার ভালো করে, তাকে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ সে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ভালো করছে। আমাদের দেখা উচিত— ঘাসের উইকেটে কে বেশি রান করে এবং ফ্লাট উইকেটে বেশি উইকেট পায়। এই দেখার ব্যবস্থাটা তো আমাদের নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link